২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা

৩২ শতাংশ শিশু ঝুঁকিতে

-

ইন্টারনেটের অপব্যবহার নিয়ে আমাদের শঙ্কার শেষ নেই। ইন্টারনেটের উপকার যেমন বেশুমার, তেমনি এর অপব্যবহারের অপকারিতাও সমধিক। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত অনলাইন ব্যবহার নিয়ে শিশুদের ঝুঁকির ব্যাপারে। সমাজের নানা স্তরে যখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা নানা মাত্রায় চলমান, তখন জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার পরিচালিত অনলাইন ব্যবহারে শিশুদের নিয়ে শঙ্কাসংশ্লিষ্ট একটি উদ্বেগজনক জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টটি আমাদের শিশুদের অনলাইন ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দেয়।
রিপোর্ট মতে, অনলাইনে ৩২ শতাংশ শিশুই ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে ঝুঁকিতে থাকা এসব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১৭ বছর। এসব শিশু অনলাইনে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনিসেফ বলেছেÑ সম্প্রতি বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাপড়–য়া ১২৮১ জনের ওপর ওই জরিপ চালানো হয়, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছর। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনই অনলাইনে শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ‘বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক জরিপটি ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়।
এই জরিপে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, এ কথা সত্য শিশুরা অনলাইনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে তিন-চার বছর বয়স থেকেই। অনেক শিশু অনলাইনে কার্টুনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান না দেখলে খাবার পর্যন্ত খেতে চায় না। মোটামুটি এভাবেই শিশুরা অনেক ছোট থাকা অবস্থায় নানা ধরনের কার্টুন বা গেমে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই শিশুরা সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হতে শুরু করে। এসব অনুষ্ঠান শিশুদের মানস গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ ব্যাপারে নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে ইউনিসেফের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রধান অ্যাডওয়ার্ড বেগবেদার বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা আমরা জেনেছি। এরা যা বলছে, তাতে স্পষ্ট হচ্ছেÑ ইন্টারনেট একটি নির্দয় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে ইউনিসেফ বলছে, এ জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে ইউনিসেফ তরুণ জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব অনুসরণ করছে এবং অনলাইনে তাদের প্রতি সদয় হতে সবার প্রতি আহ্বান জানায়।
ইউনিসেফের এই আহ্বানের নিহিতার্থ হচ্ছে, শিশুরা অনলাইন-ঝুঁকিতে রয়েছে বলেই শিশুদের জন্য অনলাইন ব্যবহার যেন একদম বন্ধ করে না দিই। শিশুদের অনলাইন ব্যবহার যেমন চালু রাখতে হবে, তেমনি এদেরকে এর ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করার পদক্ষেপও নিতে হবে। এ জন্য আমাদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের প্রাযুক্তিক উপায়। যেমন কনটেন্ট ফিল্টার ব্যবস্থা চালু করে আমাদের শিশুদের পর্নোগ্রাফির হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও মা-বাবাকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনলাইনে শিশুরা ঝুঁকিতে আছে বলেই তাদের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হবে, মাথাব্যথা সারাতে মাথা কেটে ফেলারই শামিল। কারণ, শিশুরা এই অনলাইন থেকেও নানা ধরনের শিক্ষামূলক বিষয় খুঁজে পাবে। এমনকি আজকের দিনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অনেক বিষয়ের পাঠ পর্যন্ত পাচ্ছে। তাই আমরা শিশুদের অনলাইন জগৎ থেকে আলাদা করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, এমন সব কনটেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, যা শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ জন্য মা-বাবা ও শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


আরো সংবাদ



premium cement