০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শিক্ষার্থীবিহীন স্কুল; ৮ মাস গরহাজির শিক্ষক

সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!

-

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার একটি নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি পত্রিকার খবরে জানা গেছে, এখানে বাস্তবে শিক্ষার্থী নেই। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে আরো প্রকাশ, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ’৯৫ সালে এমপিওভুক্ত স্কুলটিতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও ‘কার্যত কোনো ছাত্রছাত্রী নেই’। কাগজ-কলমে তাদের উপস্থিতি দেখানো হয়ে থাকে। স্কুলটিতে ছয়জন শিক্ষক ও দু’জন কর্মচারীবাবদ মাসে বেতনভাতার জন্য সোয়া লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের বেশির ভাগই গরহাজির থাকেন। পত্রিকাটির রাজাপুর প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ওই স্কুলে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীর ‘অস্তিত্ব’ দেখতে পাননি। উপজেলার অন্যান্য স্কুলের মতো সেখানেও সে দিন বার্ষিক পরীক্ষা ছিল। শিক্ষকেরা জানান, ‘৪ তারিখেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।’ তবে এর প্রমাণ মেলেনি বলে পত্রিকার খবরে দাবি করা হয়। আরো জানানো হয়েছে, উপস্থিত শিক্ষকেরা একজন শিক্ষার্থীর নাম পর্যন্ত বলতে পারেননি। তখন স্কুলটির অফিস সহকারী বলেন, আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সবাই ২৩ কিলোমিটার দূরের ঝালকাঠি থেকে ‘নিয়মিত’ এসে এখানে ক্লাস করে থাকে। তবে এমন অবিশ্বাস্য দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই স্কুলে কোনো দিনই ছাত্রছাত্রী ছিল না। তবে প্রত্যেক বছর ঝালকাঠির ওপর ক্লাসের কিছু শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে দেখানো হয়। ম্যানেজিং কমিটির একজন সভাপতি নানা অব্যবস্থাপনার কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়। প্রধান শিক্ষক বার্ষিক পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, যেকোনো ব্যাপারে প্রতিষ্ঠাতা ও একজন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, পরিদর্শন করে বিদ্যালয়টির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও জানান, এই স্কুলের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বহুবার অভিযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার কথা জানা গেছে।
আরেকটি জাতীয় দৈনিকের খবর, বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায় একটি জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেননি গত ৪ এপ্রিলের পরে। দীর্ঘ আট মাস হাজির না হয়েও তিনি বেতনভাতা যথারীতি ভোগ করছেন। বাড়িতে বসেই তিনি হাজিরা খাতায় সই দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এসব নিয়ে মুখ খুলতে চান না। অভিযুক্ত শিক্ষক বলেছেন, ‘আমার বিপক্ষ এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছে। আসলে অফিস সহকারী নিয়োগ করা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।’ ম্যানেজিং কমিটির প্রধান দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক ‘কিছু’ দিন অনুপস্থিত ছিলেন; এখন আর অনুপস্থিত নন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
দেশের শিক্ষা খাতের বেহাল দশা আজো কাটেনি কোটি কোটি টাকা খরচ, নানা ধরনের মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ এবং এই সরকারের উন্নয়নের অব্যাহত জয়ঢাক পেটানো সত্ত্বেও। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা সমস্যার সাগরে নিমজ্জিত। বই উৎসব, সিলেবাস বদল, দলীয়করণ ইত্যাদি ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের বিপুল উৎসাহের পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা চলছে আগের মতোই। শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানের চেয়ে ‘পরিমাণ’ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষারূপী মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে যাবে এ জাতির।
আমরা মনে করি, উল্লিখিত দু’টি বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শুধু নয়, দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই সর্বপ্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দলীয়করণ প্রভৃতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য আইনি কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে নৈতিক দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement
১১ মে রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে যুবদল পটিয়ায় গাড়ির চাপায় অটোরিকশাচালক নিহত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আপাতত সিদ্ধান্ত নেই : জনপ্রশাসন মন্ত্রী শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত, জামায়াতে উদ্বেগ স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচাতে হলে গাছ রোপণ করতে হবে : প্রফেসর ড. আব্দুর রব দিনাজপুরে দিনে টার্গেট করে রাতে ট্রান্সফরমার চুরি, গ্রেফতার ৫ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বাছাইয়ে দেশসেরা সিরাজগঞ্জের অয়ন যারা দলের শৃঙ্খলা ভাঙবে তাদের শাস্তি পেতেই হবে : ওবায়দুল কাদের রাজশাহীতে তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ প্রত্যাহার চাঁদপুরে পিকআপের সাথে অটোরিকশার সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত

সকল