২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ধরপাকড় গায়েবি মামলা এখনো চলছে

এমনটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের সাথে বেমানান

-

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে চলেছে। সারা দেশে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে ধরপাকড় চলছে। গায়েবি মামলা দেয়ার প্রবণতা আরো আগে থেকে বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যের সাথে এর কোনো মিল নেই। ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে সরকারি দল এ ধরনের মামলা দায়ের ও ধরপাকড় না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একেবারে সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ধরপাকড়-নিপীড়ন- নির্যাতন বাড়ছে। সরকার একটি সুন্দর অংশীদারমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। সে জন্য সংবিধানের মধ্য থেকে সবচেয়ে সুন্দর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও তারা বলছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিরোধীদের ওপর উল্টো আচরণের নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। ফলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের বদলে একপেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকেই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পরও এই ধরপাকড় ও মামলা দায়ের কমছে না।
সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াতের অর্ধশত নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। বাড়িবাড়ি গিয়ে ধরপাকড় অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক ও নির্যাতন এড়াতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু নেতাকর্মী নন, তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাসাবাড়িতেও পুলিশ হানা দিচ্ছে। মামলা দায়েরের ধারাবাহিকতা আগের মতো সারা দেশে অব্যাহত আছে। এসব মামলা এতটাই এলোপাতাড়ি বাছবিচারহীন যে, পুরো ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। উচ্চ আদালতে জামিন নিতে এসেও গ্রেফতার হচ্ছেন অনেকে। আর গ্রেফতারের আগের ফর্মুলা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুনরায় গ্রেফতারের কৌশলও রয়েছে। গত দুই মাসে শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে সাত হাজার জনকে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ৫০০ জন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ১৬টি থানায় এসব মামলা দায়ের হয়েছে। এমন অবস্থায় এসব মামলা হচ্ছে যখন রাজনৈতিক কোনো উত্তেজনামূলক কর্মসূচি রাজপথে নেই। নেই কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ কর্মসূচি। গায়েবি মামলা ও ধরপাকড়ের পুলিশি অভিযান সারা দেশে সমানভাবে চলছে। অপরাধ দমনের জন্য নিয়োজিত পুলিশ এখন এই একটি কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এ ধরনের কাজ করার জন্য পুলিশের কাছে কোনো যুক্তি নেই। তাদের কাছে নেই কোনো নৈতিক ভিত্তি। কোন অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে এই মানুষগুলো গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন তা জানা নেই কারো কাছে। শুধু কি একটি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাদের ওপর এমন নিপীড়ন নেমে এসেছে?
গণতন্ত্রের সাথে এ ধরনের আচরণের কী সম্পর্ক রয়েছে। ব্যাপারটা বেশি দৃষ্টিকটু হয়ে যায় যখন সরকারের পক্ষে থেকে নির্জলা মিথ্যাচার করা হয়। তারা মুখে বলছে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা তারা করবে; কিন্তু কাজের বেলায় বিরোধীদের বেপরোয়াভাবে দমন করা হচ্ছে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বিরোধীরাও গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ। গণতন্ত্র চর্চায় বিরোধীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সেটা কোনোভাবে গণতন্ত্র হতে পারে না। বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে নির্বাচনের আগে বিরোধীদের কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে। সরকারকে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হলে এমন অন্যায় নীতি থেকে সরে আসতে হবে। গায়েবি মামলা ও ধরপাকড় পরিহার করে বিরোধীদের আস্থায় নিতে হবে। তাহলে কেবল গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুত পথে অগ্রসর হবে।


আরো সংবাদ



premium cement