০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আন্দোলন পরিণত হলো আতঙ্কে

নির্যাতনের পথ পরিহার করুন

-

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে গণগ্রেফতার চালাচ্ছে বলে বিবৃতি দিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এর সত্যতা মিলছে সংবাদমাধ্যমের খবরে। এর মধ্যে ৫১টি মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে চার হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ১০০ জন। সড়কে দুই ছাত্রকে পিষে মারার জের ধরে রাস্তায় ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্ররা ট্রাফিক আইন ও নিয়মকানুন বাস্তবায়নের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। রাস্তায় নেমে তারা এমন কিছু সংস্কারকাজ করেছে সরকারসহ প্রায় সবাই তার প্রশংসা করেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এ ধরনের কাজের উৎসাহ জুগিয়েছে। ওই সময় গুজব ও উসকানির ঘটনাও ঘটে। কিন্তু গুজব ও উসকানির সূত্র ধরে সরকার যে ধরনের গণগ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছে, সেটি অনাকাক্সিত।
প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ‘ফেসবুকের মাধ্যমে উসকানি’ ও সহিংসতার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলায় কয়েক শ’ ‘উসকানিদাতাকে’ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিনই চলছে কাউকে না কাউকে গ্রেফতার। এই নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৫১টি মামলার মধ্যে ৪৩টি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। এগুলোয় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৮১ জনকে। ডিএমপির রমনা বিভাগে ১৪ মামলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মামলাই করা হয়েছে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে। এই মামলাগুলো একেকটি ব্লাংক চেক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এখন পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশের হাতে বিপুল ক্ষমতা এমন মামলা ঘিরে। কাউকে কাউকে আটক করার পর ছেড়েও দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক ছাত্রীকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর তিনি গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনো ধরনের মুখ খোলেননি। একইভাবে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেনি, কেন তাকে গ্রেফতার কলা হলো আর কেন ছেড়ে দেয়া হলো। চলছে এক ধরনের গ্রেফতার আতঙ্ক। ট্রাফিক সংস্কারের এ আন্দোলন সরকারের বাহবা পেলেও ঠিক এই আন্দোলনটি এখন সরকারের দমনপীড়নের টার্গেট হয়ে গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করার জন্য একটি অস্পষ্ট আইনের ব্যবহার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করছে না।’ এর ফলে বাকস্বাধীনতা ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে পরামর্শ রাখা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটি মেনে নেয়া যে, সমালোচনা হলো ক্রিয়াশীল ও সুষ্ঠু গণতন্ত্রের একটি অংশ। তাদের মতে, সরকারের উচিত আইসিটি আইনের পরিবর্তে এমন আইনের প্রচলন করা, যাতে বাকস্বাধীনতা সমুন্নত থাকে। দমনপীড়নের এই পর্যায়ে এমন পরামর্শ যৌক্তিক।
আইন ও পুলিশ বাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার মানুষকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করার পথে হাঁটছে। বিরোধীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে কেউ সরকারের যৌক্তিক সমালোচনার সাহস না দেখায়। সরকারের সমালোচনা করা সুশীলসমাজের একজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রধান লক্ষ্য যে নিজেদের ক্ষমতাকে আরো সংহত করা, সেটিই স্পষ্ট হচ্ছে। সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবি করলে কোনোভাবেই এমন আচরণ সঠিক হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের সংস্কারমূলক আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে সরকার এমন অন্যায় সুযোগ নিতে পারে না। অচিরেই সরকার তার আক্রমণমূলক অবস্থান থেকে ফিরে এলে কল্যাণ। আমরা আশা করব, সরকার মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেবে ও আটক নির্দোষ ছাত্রদের ছেড়ে দিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement