আবারো যেন একই জালিয়াতি ও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি দেখা গেল তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক সিল মারা, জাল ভোটসহ ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে এই ভোট সম্পন্ন হয়েছে। সংবাদমাধ্যমসহ প্রায় সব নির্বাচন মনিটরিং এজেন্সি কারচুপি ও অনিয়মের একই চিত্রের কথা জানিয়েছে। জনগণের দুর্র্ভাগ্য হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ঠিক এর বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এ ধরনের লজ্জাজনক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি ‘স্যাটিসফাইড’। গাজীপুর ও খুলনার মতো এবারো ক্ষমতাসীনদের একই ধরনের বক্তব্য। হাস্যকর একটি নির্বাচনের পরও নির্বাচন কমিশন সরকারের সমান্তরালে গিয়ে নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হওয়ার পক্ষে সাফাই গাইছে। তারা যেন চোখ খুলে ঘুমিয়ে রয়েছেন। এত অনিয়ম নিয়ে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সে দেশে আদৌ ভোটের প্রয়োজন আছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোটের ব্যাপারে একটি পত্রিকা লিখেছে, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, মারধর করা, মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা, দিনভর নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা বেঁধে অবস্থান নেয়া, দুপুরের আগেই ব্যালট ফুরিয়ে যাওয়া, সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে কঠোর বিধিনিষেধসহ নানা অভিযোগের মধ্যে সেখানে নির্বাচন হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির প্রার্থী বুলবুল নিজের ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন। পরে তিনি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। মিডিয়ায় যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে কারচুপির নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে এ নিয়ন্ত্রণ ছিল একেবারে নিরঙ্কুশ। সকালেই প্রায় সব কেন্দ্রের দখল ওই দল নিয়ে নেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে ইচ্ছামতো সিল মারা হয়েছে। ফলে দুপুরের মধ্যেই সেখানে ভোট শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য পাঁচজন মেয়রপ্রার্থী ভোট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। তাদের সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ জানান। নিশ্চয়ই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ অভিযোগ পেয়েছেন। এরপরও তিনি কিভাবে এ ধরনের চরম অনিয়মের একটি নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন? সিলেটেও নৌকার পক্ষে জোর করে সিল মারা হয়েছে, কেন্দ্র দখল করা হয়েছে ও জাল ভোট দেয়া হয়েছে। তবে এরপরও নৌকার পক্ষে ফলাফল আসেনি। বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ভোটের যে চিত্র তাতে এই বিজয় তার তাৎপর্য হারিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে, সেটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর অনেকে খোলাসা করে বলেছেন। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের নামে মূলত এক ধরনের নাটকের আয়োজন বারবার চলছে। এ প্রহসনের পরিণতি আগেই ঠিক করা থাকে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিবেন, তার ব্যবস্থা আর নেই। আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ ও অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কাক্সিক্ষত অবস্থানে আনতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ তৈরি করতে হবে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা