০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন এখন বিড়ম্বনা : কৃষিমন্ত্রী

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে অধিক ধান উৎপাদন এখন বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে। ধান চাষ উদ্ধৃত্ত হয়েছে। দেশে ধানের দাম নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা দ্রুতই সমাধান করা হবে বলে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হলেও দ্রুত এর সমাধান কঠিন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে কৃষিখাত। তবে নানা সমস্যা থাকার পরও বাংলাদেশে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হচ্ছে। আর এ সংকট নিরসনে সীমিত পর্যায়ে চাল রফতানির চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

ধানের দাম কম হওয়ায় ধান ক্ষেতে আগুন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু-একজন ভাবাবেগ হয়ে ধান ক্ষেতে আগুন দিয়েছে। সারাদেশে ওইভাবে আগুন দিচ্ছে না। আমি মনে করি মানুষ দায়িত্বশীল, তারা নিজের ক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে, এটা কোনদিনও হতে পারে না। ধানের দাম নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা দ্রুতই সমাধান করা হবে।

শনিবার কাকরাইলে আইডিইবি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ) আয়োজিত 'জলবায়ু পরিবর্তন: কৃষিখাতের চ্যালেঞ্জ' নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইডিবি), কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাওসার রহমানের সঞ্চালনায় এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. নুরুল ইসলাম, বিসিজেএফের প্রচার সম্পাদক প্রসূন আশীষ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কোষ্ট ট্রাস্ট বিডির মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের রফিকুল বাসার, চ্যানেল-২৪ এর জোবায়ের আল মাহমুদ।

ধানের দাম প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাৎক্ষণিক সমাধান হচ্ছে, যদি ধান রপ্তানিতে যাই। রপ্তানিতে যাওয়ার চেষ্টা করবো। হারভেস্ট হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেব। এ সমস্যার সমাধান করবো। আমদানীকৃত চাল বিক্রি করতে না পারা, ধানের ধারাবাহিক উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মিল মালিকেরা আমন চাল বিক্রি করতে পারেনি বলে দাম কম।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ধান কিনে দাম বাড়ানোর সুযোগ সরকারের হাতে নেই। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এটা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে চাষীদের নির্বাচন করা কঠিন বলেই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি খাতে বিপ্লব হয়েছে। এটা খারাপ দিক না। এটা নিয়ে হতাশারও কিছু নেই। ফ্রান্সের মতো বাংলাদেশেও চাষীরা ড্রাম ভর্তি দুধ রাস্তায় ফেলে দেয়, ট্রাক ভর্তি টমেটো নিয়ে হাইওয়েতে ফেলে দেয়। কৃষি একটা স্পর্শকাতর সেক্টর। আমরা তো সব সময় চাই খাবারের দাম কম থাকুক, চালের দাম কম থাকুক।

তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই কৃষিকে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণ- এ তিনটির মাধ্যমে এখন যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সে সমস্যার সমাধান অবশ্যই করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিদ্যমান (ধানের দাম কম) সমস্যা সমাধানে আপাতত সমাধান হলো বিদেশের বাজারে রফতানি। তবে বাংলাদেশে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কোনো কারণে আমন ধান নষ্ট হলে খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি হবে। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনার পরও সীমিত পর্যায়ে রফতানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রফতানির বাজারে যাওয়াও কঠিন। এছাড়া রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রফতানি করতে হবে।

উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি গুদাম বাড়ানো এবং ধানের দাম নিয়ে সংকট সমাধানে স্থায়ী কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, কৃষিকে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্প্রতি দেশব্যাপী ধানের মূল্য হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধান ও গমসহ বার্ষিক উৎপাদন সাড়ে তিন কোটি টন। সরকারের গুদামজাতকরণের ক্ষমতা রয়েছে ২০/২২ লাখ টন। তার মধ্যে গত বছর কেনা ১০ লাখ টনের বেশি কেনা ফসল রয়ে গেছে। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে সব ধান চাল কিনে মজুদ করা সম্ভব না হয়, ততদিন কৃষককে উপযুক্ত দাম দেয়া সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement