২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুনবতী জংশন

-

মাঝ রাত। গুনবতী রেল স্টেশন। চারদিক সুনসান। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। প্ল্যাটফর্মে কিছু মানুষ কাঁথা, বস্তা মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। টুং টুং শব্দ করে একটা রিকশা এসে থামে। রিকশাওয়ালা ব্যাগ স্যুটকেস প্ল্যাটফর্মে রাখে। রিকশাওয়ালা রিকশার যাত্রী লোকটাকে কোলে করে প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে কাঠের বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। রিকশার অপর যাত্রী মহিলা, সে কাকভেজা হয়ে রিকশা থেকে নেমে এক দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে এসে লোকটার পাশে বসে। ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালা চলে যায়। লোকটা বলল, ‘সাফুয়া তুমি বাথরুমে গিয়ে ড্রেস বদলে এসো।’
‘ঠিক আছে সুফিয়ান। কিন্তু এ সময়টুকু তুমি একা থাকতে পারবে?’
‘পারব।’ সুফিয়ানের কাশি ওঠে। কাশতে কাশতে একসময় সে বেঞ্চ থেকে পড়ে যায়। সাফুয়া অস্থির হয়ে পড়ে। অনেক কষ্টে সুফিয়ানকে আবার বেঞ্চে বসায়। সুফিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আমার জন্য তোমার অনেক কষ্ট, তাই না?’
‘এক কথা বারবার শুনতে ভালো লাগে না। আল্লাহকে ডাকো। আল্লাহই একমাত্র ভরসা।’
‘এই আবছা আলোতেও তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এমন সুন্দরী বউ রেখে মরতে ইচ্ছে করে, বলো?’
‘তো এক কাজ করো, আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে চলো।’
‘হা হা হা।’ সুুফিয়ান শব্দ করে হাসে। তার হাসির শব্দ শুনে প্ল্যাটফর্মে ঘুমিয়ে থাকা লোকগুলোর ভেতর কেউ কেউ জেগে ওঠে। অবাক হয়ে তাকায়। তার পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ‘তুমি আমাকে এক বিন্দুও ভালোবাস না সাফুয়া?’
‘এ তোমার ভুল ধারণা। গত ২২ বছর তোমার সাথে আছি। তোমাকে কখনোও অযতœ-অবহেলা করেছি?’
‘তা করোনি।’ সুফিয়ান চোখ বুজে পড়ে থাকে। সাফুয়া কাঁদে। ব্যাগ খুলে কাপড় চোপড় বের করে বাথরুমের দিকে যায়। বাজ পড়ে। এ সময় কোট পরা একটা লোক প্রায় দৌড়ে এসে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথা মুছে। বেঞ্চের এক পাশে বসে। গুনগুন করে গান গায়। সুফিয়ান চোখ খুলে লোকটার দিকে তাকায়। মুখে এক চিলতে হাসি মাখিয়ে নিয়ে বলল, ‘কোথায় যাবেন?’
‘ঢাকা যাব। শেষ রাতের ট্রেনটা কখন আসে?
‘ট্রেন আসবে। কিন্তু সময়মতো আসবে না।’
‘তাই’। লোকটা আবারো গুনগুন করে গান গায়। সুফিয়ান ব্যাগ খুুলে একটা অ্যালবাম বের করে। একটা ফোর আর ছবি লোকটাকে দেখিয়ে বলল, ‘আমার স্ত্রী সাফুয়া। দেখতে খুব সুন্দরী না?
লোকটা অ্যালবামটা হাতে নেয় এবং চমকে ওঠে দাঁড়ায়। সুফিয়ান বলল, ‘আমার শরীরে অনেকগুলো রোগ বাসা বেঁধেছে। যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। সাফুয়ার অমতে তাকে বিয়ে করি। সে একজনকে ভালোবাসত। তার নাম সুনান। ২২ বছর ধরে তার সাথে আছি। সে খুব ভালো মেয়ে। একটু আগে গুনগুন করে একটা গান গাইছিলেন না? আমার কোন কুলে আজ ভিড়ল তরি একি সোনার গাঁ। ঠিক এ গানটাই গুনগুন করে গায় সাফুয়া। তার সাথে আপনার অদ্ভুত মিল না?’
‘হু’। সুফিয়ানকে অ্যালবামটা ফেরত দিয়ে বেঞ্চে বসে লোকটা। লোকটার ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। সে বেঞ্চ ছেড়ে ওঠে ব্যস্ত হয়ে পায়চারি করে। সুফিয়ান কাশতে কাশতে একদলা থুথু ছুড়ে ফেলে দূরে এবং ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘আপনি বিয়ে করেছেন?’
‘না। আচ্ছা আপনার সাথে আপনার স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য কত বছরের?’ লোকটা দপ করে বেঞ্চে বসে।
‘প্রায় ২৫ বছর। জানেন, আমি কতবার বলেছি তুমি তোমার মনের মানুষের কাছে চলে যাও। তাকে খুঁজে বের করো। বিয়ে করে সুখী হও। উত্তরে সে কী বলেছে জানেনÑ সে বলেছে ‘বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয়। তুমি আমার স্বামী। মহান স্বামী।’
‘আপনার কথা শুনে বুঝলাম। আপনি আপনার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন।’
সুফিয়ান বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। তার কপালে ঘাম জমে। সে সলজ্জ ভঙ্গিতে বলল, ‘এমন স্ত্রী পেলে আপনিও না ভালোবেসে পারবেন না। আমার সব অ্যাসেট তার নামে উইল করে দিয়েছি। ইচ্ছে করলে সে এখন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু সাফুয়া সে রকম মেয়ে নয়।’
লোকটা একটা সিগারেট ধরাতে যায়। কিন্তু সুফিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর ধরায় না। এভাবে বেশ কিছু সময় পার হয়ে যায়। সুফিয়ানের বুকের ব্যথা কমে যায়। সে বুক ভরে শ্বাস নেয়। তারপর খুব একচোট অঙ্ক কষে বলল, ‘এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে আমাকে।’
‘আপনাদের কোনো সন্তান নেই। তাই না?’
‘না, সব দোষ আমার।’ সুফিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
সাফুয়া আসে। তার উসকোখুসকো চুলগুলোকে খোঁপায় বাঁধে। হাতে-পায়ে ক্রিম মাখে। ওষুধ আর পানির বোতল সুফিয়ানের হাতে দেয়। সুফিয়ান ওষুধ খেয়ে বলল, ‘আচ্ছা ওষুধ খেয়ে কী লাভ? আর ওষুধ না খেলে হয় না?’
‘হবে না কেন। অবশ্যই হবে।’ সাফুয়া মুচকি হাসে।
লোকটা আড় চোখে সাফুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সাফুয়া ব্যাপারটা লক্ষ করে এবং ঘুরে তাকায়। লোকটা দ্রুত অন্য দিকে ঘুরে যায়। সুফিয়ান বলল, ‘এ লোকটার সাথে পরিচয় হলাম। খুব ভালো। খুব সুদর্শন।’
‘থাক আর বলতে হবে না। তোমার বুকের ব্যথা একটু কমেছে?’
‘হ্যাঁ, কমেছে। লোকটার সাথে পরিচয় হতে চাও?
‘না,’ সাফুয়া সুফিয়ানকে বেঞ্চে শুইয়ে দেয়। পাতলা একটা চাদর দিয়ে বুক সমান ঢেকে দেয়। মাথার নিচে বালিশ গুঁজে দেয়। বস্তা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা একটা মধ্য বয়সী লোক ওঠে আসে। লুঙ্গির কোচড় থেকে সিগারেট বের করে দিয়াশলাই জ্বালানোর ভঙ্গি করে বলল, ‘স্যার ম্যাচ অইবো?’
সুফিয়ান না সূচক মাথা নাড়ে। সাফুয়া দু’হাত ক্রস করে বুকে চেপে গম্ভীর হয়ে বলল, ‘একসময় চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়ে সিগারেট খেতে। সিগারেট খাওয়ার জন্য তোমাকে কম বকাঝকা করিনি।’
‘ও ভাই এদিকে আসুন।’ সুফিয়ান হাত উঁচু করে লোকটাকে ডাকে।
‘আহ, উনাকে ডাকছ কেন?’
সাফুয়ার রাগ হয়। বড় বড় চোখ করে সুফিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা ধীর পায়ে হেঁটে এসে সাফুয়ার সামনে দাঁড়ায়। সাফুয়া মুখ তুলে লোকটার দিকে তাকায় এবং একনজর দেখেই তার বুক ধক করে ওঠে। তার শরীর কাঁপে। মনে হচ্ছে পুরো প্ল্যাটফর্ম ঘুরছে। সুফিয়ান ব্যাপারটা লক্ষ করে। সে ওঠে বোতলের ছিপি খুলে সাফুয়ার মুখে পানির ছিটা মারে। সাফুয়া অজ্ঞান হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। সে মাথা ঝাঁকি দিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভালো আছেন?’
লোকটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। ‘তোমরা কথা বলো। আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।’ সুফিয়ান চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে। সাফুয়া মাথা নিচু করে বসে থাকে। লোকটা বলল, ‘উনার আসলে কী হয়েছে?’
‘দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। আরো কয়েকটা রোগে ভুগছেন।’
‘তুমি তাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’ সুফিয়ানের ঘুম ভাঙে। সে চোখ বুজে পড়ে থাকে। আড়ি পেতে সব শুনে। সাফুয়া ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বলল, ‘চুপ একদম চুপ। এতদিন কোথায় ছিলে? হঠাৎ এখানে কোত্থেকে এলে? আচ্ছা সুনান, তোমার ছেলেমেয়ে কয়জন?’
‘বিয়ে করলে তো ছেলেমেয়ে হবে। আর তুমি এত উতলা হচ্ছো কেন? মনে পড়ে, সাফুয়া এক রাতে একটা বিয়ে খেয়ে বাড়ি ফিরছিলাম দু’জন। হঠাৎ বৃষ্টি নামে। বিদ্যুৎ চমকায়। বাজ পড়ে। চার কিলোমিটার পথ। রাস্তার দুই ধারে ধান ক্ষেত। সে দিন তুমি খুব ভয় পেয়েছিলে। বুড়ি বিলের ঘাটে এসে দেখি কোনো নৌকা নেই। বিলে কোমর সমান পানি। আমি তোমাকে কোলে করে বিল পার করে দিলাম।’
‘তাই। ওপাড়ে নিয়ে গিয়ে তুমি আমাকে কোল থেকে ফেলে দিলে। আর আমার সে কি কান্না। কিন্তু সুনান, বিয়ের আগের দিন রাতে তোমার কথামতো গুনবতী স্টেশনে অপেক্ষা করেছি। তুমি আসলে না কেন?
‘তোমার বাবা আর বড় ভাই আমাকে ভূঁইয়াদের কাচারি ঘরে নিয়ে গিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধে। আর মুখের ভেতর রুমাল গুঁজে দেয়। এ অবস্থায় দুই দিন কেটে যায়।’
সুফিয়ান নড়েচড়ে ওঠে। ইচ্ছে করে নাক ডাকে। এক জীবনে মানুষকে কত কিছুর মুখোমুখি হতে হয়। সুফিয়ান ভাবে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সুনান গুনগুন করে। সাফুয়া বলল, ‘তোমাকে বিয়ে করতে না পেরে কতবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফল হইনি। একটা কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি। তুমি এখনো বিয়ে করোনি। কিন্তু...।’
‘কিন্তু আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।’ সুফিয়ান আড়মোড়া ভেবে ওঠে বসে। সাফুয়া আর সুনান চমকে ওঠে। ‘আড়ি পেতে সব শুনেছি। সুনান সাফুয়া আমার একটা কথা রাখবে?
‘কী কথা?’ সুনান অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। সাফুয়ার দিকে তাকায়। সাফুয়ার মুখ ফ্যাকাশে। সুফিয়ান বলল, ‘আমার স্ত্রী সাফুয়া তোমাকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে। আমি মারা গেলে তুমি তাকে বিয়ে করো প্লিজ।’
‘কিন্তু!’ সুনান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। সাফুয়া কাঁদে। সুফিয়ান বলল, ‘কোনো কিন্তু নয়। আমি যা বলছি সেটাই হবে।’
সুনান একটু দূরে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে ব্যস্ত হয়ে পায়চারি করে। সেদিন সামান্য জায়গির মাস্টার বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে সবাই। আজ সে প্রচুর টাকার মালিক। কিন্তু তাতে কী? সাফুয়া যদি তাকে বিয়ে করতে রাজি না হয়। সুনান সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সুফিয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ‘আমি রাজি।’
‘বাহ চমৎকার। এখন মরেও শান্তি পাবো। বুকের উপর থেকে সবচেয়ে বড় পাথরটা সরে গেল।’
‘১৮ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। সেদিন কেউ আমার মতামত নেয়নি। এখন আমার বয়স ৪০ বছর। এখনো তোমরা আমার মতামত নেবে না?’ সাফুয়া দু’চোখ মুছে।
‘একবার যখন মনের মানুষকে পেয়েছ, তখন আর হাতছাড়া করো না।’ সুফিয়ান সাফুয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘সব তোমরা পুরুষরাই ঠিক করবে? আমরা মেয়েরা লতাপাতা খড়কুটা, তাই না? সাফুয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।
‘আজ ২৩ শ্রাবণ। ২২ বছর আগে এই দিনে তোমার-আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।’ সুফিয়ান বুকে হাত চেপে ধরে। তার শ্বাসকষ্ট হয়। মাথা ঘুুরে। পেট খুলিয়ে বমি আসতে চায়। মনে হচ্ছে পুরো রেল স্টেশন প্রচণ্ড বেগে ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে উড়ে যাচ্ছে দূর, বহু দূরে। হঠাৎ ধপাস করে বেঞ্চ থেকে ফ্লোরে পড়ে যায় সে। সাফুয়া আহাজারি করে ওঠে। ঘুমন্ত মানুষগুলো জেগে ওঠে ছুটে আসে। কেউ সুফিয়ানের হাত-পা টিপে, কেউ বাতাস করে। সুনান বলল, ‘সময় নষ্ট করে লাভ নেই। কাছেই গুনবতী জেনারেল হাসপাতাল। আপাতত সেখানেই নিয়ে চলো।’
‘কিন্তু এ বৃষ্টির মধ্যে নেবে কিভাবে? আর এ মুহূর্তে রিকশা-গাড়ি পাবে কোথায়?’ সাফুয়া শব্দ করে কাঁদে। সুনান প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
অনেকক্ষণ কেটে যায়। একটানা বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে যায়। সুফিয়ানের কোনো সাড়াশব্দ নেই। তার ও অনেক পরে একটা ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে আসে সুনান। সুনান কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘আর কিছু পেলাম না। এ মুহূর্তে কিছু বলার নেই, চলো তাড়াতাড়ি চলো।’
‘কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নেবে। সুফিয়ানের নিউমোনিয়ার সমস্যা আছে।’ সাফুয়া কান্না বন্ধ করে উদ্বিগ্ন হয়ে উদাস গলায় বলল।
‘ও হো সাফুয়া, এখন এ সব কথা থাক।’ সুনান সুফিয়ানকে কোলে করে ঠেলাগাড়িতে তোলে। তারপর ঠেলাগাড়ি টেনে সামনে এগুতে থাকে। ঠেলাগাড়ির পাশ ঘেষে হাঁটে সাফুয়া। বৃষ্টি কমে আসে। ফুরফুরে বাতাস বইছে। অন্ধকারে রাস্তা-ঘাট চিনে চলতে হচ্ছে। রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। খানাখন্দে চাকা পড়লে সাফুয়া আহাজারি করে ওঠে।
গুনবতী বাজারের শেষে ডাকাতিয়া নদী। নদীর পাড় ঘেঁষে গুনবতী জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালের গেটের কাছাকাছি এসে থামে সুনান। সে হাঁফাতে থাকে। সুফিয়ানের হাতে-পায়ে-বুকে হাত দিয়ে দেখে শরীর অদ্ভুত রকমের ঠাণ্ডা। হাসপাতালের ভেতর নিয়ে গেলে পরীক্ষা করে ডাক্তার। ডাক্তার পরীক্ষা শেষে নিচু গলায় বললেন, ‘উনি অনেক আগেই মারা গেছেন।’
আশ্চর্য এ খবরে সাফুয়া কাঁদে না। সে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। এ অবস্থায় সে আর কাঁদতে পারে না। চুপচাপ থাকে। বাইরে এখন বৃষ্টি নেই। একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর পাশাপাশি বসে দু’জন। অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলে। ধীরে ধীরে রাত শেষ হয়। শেষ রাতের ট্রেন ও গুনবতী স্টেশন হয়ে চলে যায় ঢাকার দিকে। আশেপাশের মসজিদগুলো থেকে একের পর এক ফজরের আজান ভেসে আসে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement