২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ - নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ না করে পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা অবস্থান ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-গাজীপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে। পুলিশ সন্ধ্যায় লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

কারখানার সহকারি (উৎপাদন) ব্যবস্থাপক মোঃ আবু তসলিম, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট গেইটের পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরা এলাকার ইন্ট্রামেক্স গ্রুপ পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৪হাজার শ্রমিক-কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮-৯ মাসের বেতন এবং শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে।

শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের বেশ কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করেও তা প্রদান করেনি। সর্বশেষ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য বুধবার তারিখ নির্ধারণ করে।

কিন্তু এদিন (বুধবার) শ্রমিকরা তাদের পাওনাদির জন্য কারখানার গেইটে দিনভর অপেক্ষা করলেও বিকেলে কর্তৃপক্ষ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ না করে পরদিন বৃহষ্পতিবার পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে পুনঃরায় তারিখ নির্ধারণ করে। শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করার পর গভীর রাতে ওই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ গেইটে টানিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার সকাল ৭টা হতে ওই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদির জন্য কারখানার সামনে এসে জড়ো হয়ে কারখানার ফটকে তালা ও কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

এসময় তারা কারখানার গেইটে অবস্থান নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ না করে পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে তারা মিছিলসহ কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা সড়কের উপর বসে ও শুয়ে পড়ে অবরোধ তৈরি করে। এসময় তারা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। এতে ওই সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয়দিকে আটকা পড়া যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
গাড়ি থেকে অনেক যাত্রীকে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনরতদের বুঝিয়ে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু শ্রমিকরা সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি চালু রাখে।

একপর্যায়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ধাওয়া করে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

কারখানার কর্মচারি ও শ্রমিকরা জানায়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধের জন্য কয়েক দফা আশ্বাস দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা রক্ষা করেনি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতনসহ ভাতাদি বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এবং একই বছরের অক্টোবর হতে চলতি মাস পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওনা রয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ওসি সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ইন্ট্রামেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে সড়কে নেমে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। তাদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রায় ৭/৮মাস বকেয়া রয়েছে। পুলিশ সড়কের উপর থেকে আন্দোলনরতদের সরাতে বারবার চেষ্টা করলেও তারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের বেতন ভাতার বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিক ও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর সিনিয়র এএসপি মোঃ মকবুল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। মালিক জানিয়েছেন, অর্থ সংকটের কারণেই তিনি বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না। অর্থ সংস্থানের সম্ভাবনার কারণেই কয়েকবার বেতন দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা করতে না পেরে বৃহস্পতিবার কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।


আরো সংবাদ



premium cement