২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৌ-ভ্রমণে যাত্রী হয়রানির ভয়ঙ্কর ফাঁদ

জুয়ার আসরের ‘মধ্যমণি’ অভিযুক্ত রফিক চক্রের প্রধান রফিক (বামে) এবং জুয়া খেলার দর্শক হিসেবে উপস্থিত লঞ্চের উৎসুক যাত্রীরা (ডানে) - নয়া দিগন্ত

নৌপথের ভ্রমণটা ধর্ম-বর্ণ, বয়সকে হার মানিয়ে সবার কাছেই উপভোগ্য। আর নৌপথের ভ্রমণটা যদি হয় লঞ্চে করে, তবে রোমাঞ্চের কোনো কমতি থাকে না। কিন্তু নৌপথের ভ্রমণে রোমাঞ্চ তো দূরের কথা, যদি সাধারণ মানুষকে পড়তে বিড়ম্বনায় বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে, তাহলে? এমন ঘটনায় ঘটছে পটুয়াখালীর দশমিনা-বাউফলের কালাইয়া-ঢাকা নৌরুটে।

দশমিনা-বাউফলের কালাইয়া-ঢাকা নৌরুটে একই সাথে জুয়া ও চুরির হিড়িক পড়ে গেছে। এতে সর্বশান্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রায় প্রতিদিনই এ ঘটনা ঘটছে বলে ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ ঢাকা-দশমিনা নৌরুটের এমভি জামাল-৪ লঞ্চে একই সাথে দুটি বড় চুরি ও জুয়ার মাধ্যমে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৪নং কেশাবপুর ইউনিয়নের কেশাবপুর গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী মোঃ রফিকসহ তার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দশমিনা-কালাইয়া-ঢাকা রুটে এ ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার সদরঘাট থেকে দশমিনার উদ্দেশ্যে এমভি জামাল-৪ লঞ্চটি ছেড়ে আসে। ঢাকার চাঁদপুর এসে পৌছানোর পর লঞ্চে উঠে চক্রটি।

পরে সকাল ৬টার দিকে লঞ্চের ছাদে হ্যারিকেনের ফিতা দিয়ে জুয়া খেলার জন্য যাত্রীদের আকৃষ্ট করে অভিযুক্ত রফিক ও তার চক্র। এরপর জুয়া খেলার নেশায় ৮ জন যাত্রীর অর্ধ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায় রফিক চক্র। এ ঘটনার সময় লঞ্চের যাত্রী হিসেবে থাকা নয়া দিগন্ত অনলাইনের এই সংবাদদাতা জুয়া খেলার ছবি তুলতে গেলে চক্রটি তাকে লাঞ্ছিত করে। এসময় কাসেম নামে এক যাত্রী এগিয়ে আসলে তার স্যামসাং ব্রান্ডের একটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নিয়ে পানিতে ফেলে দেয় চক্রের মূলহোতা রফিক।

এদিকে কেবিনে ও ডেকে নিজেদের মালামল রেখে ছাদে অবস্থান করার সময় লঞ্চের বেশ কয়েকজন যাত্রীর নগদ টাকা, মোবাইল, স্মার্টফোন ও ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল চুরি হয়ে যায়। লঞ্চে জুয়া খেলা আয়োজনের জন্য দায়ী চক্রটিই এইসব চুরির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার লঞ্চ থেকে দশমিনার চরহোসনাবাদ গ্রামের মোঃ কবিরের ৭৬ হাজার টাকা দামের স্যামসাং এক্স নাইন প্লাস মোবাইল, নগদ পাঁচ হাজার টাকা, ক্রেডিট কার্ড, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মূল্যবান মালামাল চুরি করে চক্রটি। পাশাপাশি একই লঞ্চের যাত্রী রাঙ্গাবালি উপজেলার মৌসুমী আক্তারের দশ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকাসহ একটি ব্যাগ চুরি হয়ে যায়।

ঢাকা-দশমিনা-কালাইয়া নৌ-রুটে নিয়মিত চলাচল করেন এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, যাত্রা পথে প্রায়ই রফিক চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরাও এদের সাথে জড়িত রয়েছে।

এ ব্যাপারে এমভি জামাল-৪ লঞ্চের ইনচার্জ মোঃ মিলন বলেন, আমার কিছু করার নেই। এরা অনেক প্রভাবশালী। অনেক বড় বড় নেতারা এই চক্রের সাথে জড়িত। বাধা দিলে লঞ্চ ঘাটে ঢুকতে দেয় না এরা। প্রশাসনও কিছু বলে না।


আরো সংবাদ



premium cement