২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রূপগঞ্জে ব্যবসায়ীকে হত্যা, বিক্ষুব্ধদের হাতে অবরুদ্ধ পুলিশ

রূপগঞ্জে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করতে আসলে দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। (ইনসেটে) নিহত ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম - নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাটি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামকে হত্যার জেরে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ফাঁকা গুলিবর্ষন ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রূপগঞ্জে দাউদপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ৮জন আহত হন।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দুয়ারা এলাকার এমএবি-২ ইটভাটার ভিতরের একটি ঘর থেকে পুলিশ মাটি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যবসায়ীর বাবা শাহজাহান সিরাজ জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় ইটভাটায় দেয়া মাটির বকেয়া টাকা তুলেতে তার বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৯) বাড়ি থেকে বের হয়। পরে রাতে আর বাসায় ফিরেনি। সকালে দাউদপুরের এমএবি-২ ইটভাটার ভিতরের একটি টিনশেড ঘরের ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, তার ছেলে নিহত রফিকুল ইসলাম সব সময় একটি বড় তোয়ালে ব্যবহার করতো। তার গলায় সেই তোয়ালেটি প্যাচানো ছিলো। শাহজাহান সিরাজ অভিযোগ করেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চায় এবং তিন আসামীকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ না করেই একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের তড়িঘড়ির কারণ জানতে চেয়ে লাশ নিতে বাধা দেয় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

এসময় পুলিশ নিহতের চাচাতো ভাই সেলিমকে লাঠিপেটা করে এবং কোনো জবাব না দিয়ে লাশ ও আসামীদের নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। এতে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে এএসআই রিয়াজ ও কনস্টেবল সফিকে ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতর অবরুদ্ধ করে রাখে।

একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা অবরুদ্ধ দুই পুলিশ সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে। এসময় তাদের ছাড়াতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন জয়সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

অপরদিকে আত্মীয়স্বজনদের না দেখিয়ে লাশ নিয়ে যাবার জেরে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে বেলদী বাজারে লাশবাহী গাড়িটি আটক করে। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাকাঁগুলি ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে লাশ নিয়ে চলে যায়। এসময় আহত হয় অন্তত ৪জন। পরে ভোলাবো পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করে দুই পুলিশ সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইটভাটার পাহারাদার জাহাঙ্গীর, ইটভাটার শ্রমিক সর্দার পিন্টু দাস ও মোতালিবকে আটক করা হয়েছে।

এবিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হক দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ ও নাজেহাল করা এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বজন হারানো লোকজন আবেগপ্রবণ হয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এসময় পুলিশকে ধাওয়া করে তারা।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক ময়নাতদন্তে ধারণা করা হচ্ছে রফিকুল ইসলামকে গলায় তার গামছা জাতীয় বস্তু পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। কারা কি কারণে রফিকুল ইসলামকে হত্যা করলো তা তদন্ত করে বের করা হবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement