০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মনিরুলের মৃত্যু নিয়ে রহস্য, পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি পরিবারের

নিহত মনিরুল ইসলাম। পাশের এই ঘরেই তার মৃত্যু হয় - নয়া দিগন্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মনিরুল ইসলাম(৩০) এর মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। এটি কি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড- তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। মনিরুলের পরিবারের দাবি, তার স্ত্রী আইভি আক্তার ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে মনিরুলকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে ঘটনার পর তিনদিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই রোডের আসিফ ক্লিনিক সংলগ্ন মনিরুল ইসলামের শ্বশুর মোঃ কয়েত আলীর(৫৬) বাসায় গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মনিরুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার মনিরুলের বড় ভাই ইব্রাহিম খলিল এবং মনিরুলের স্ত্রী আইভির সাথে কথা বলে মনিরুলের মৃত্যু নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের মোঃ আনোয়ার গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলাম। অপর দিকে মনিরুলের স্ত্রীর নাম আইভি আক্তার, পিতার নাম মোঃ কয়েত আলী। গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বাংগলা চৌহাট গ্রামে। ২০০৭ সালে মনিরুল ও আইভি আক্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। দীর্ঘদিন একই বিভাগে পড়াশোনার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এরপর পরিবারের কাছে প্রেমের সম্পর্ক গোপন রেখে ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করেন। মনিরুলের পরিবার একপর্যায়ে এই বিয়ে মেনে নিলেও আইভির পরিবার প্রথমে তা মেনে নেয়নি। ২০১২ সালে তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির সন্ধান করতে থাকেন। পরে আত্মীয় স্বজনদের অনুরোধে অবশেষে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উভয়ের পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে মেনে নেন। তাদের সংসারে মুসা ইসলাম(৫) নামে এক পুত্র ও আরশি(৫ মাস) নামে এক কন্যা রয়েছে।

৩২ তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে নির্বাচিত হন আইভি। যোগদান করেন টাঙ্গাইলের সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে। মনিরুলও কয়েকবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্ত সফল হতে পারেননি। তার ইচ্ছে ছিল স্ত্রীর চেয়ে আরও বড় কিছু হওয়ার। একের পর এক চেষ্টা করেছেন ভাল একটি চাকরির জন্য। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি বলে জানায় তার পরিবারের লোকজন।

এদিকে স্ত্রী শিক্ষকতা করলেও মনিরুল ভাল মানের কোনো চাকরি না পাওয়ায় স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে নানাভাবে হেয় করে আসছিল বলে তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন।

মনিরুলের বড় ভাই ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করেন, স্ত্রী আইভি, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আইভির ভাই সাহেদ ও হাসান তাকে মানসিকভাবে চাপ ও নির্যাতন করে আসছিল। ঘটনার দিন সকালে মনিরুল তার মাকে ফোন করে বলেন, মা তুমি অপেক্ষা করো- আমি মুসাকে (পুত্রকে) নিয়ে বাড়ি আসছি। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। সকালে স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজনের সাথে মনিরুলের কথাকাটি হয়। তারপরই একটি কক্ষের ভিতর মনিরুলের লাশ পাওয়া যায়।

ইব্রাহিম আরো বলেন, আইভির পরিবার প্রথমে তাকে (ইব্রাহিমকে) ফোন করে জানায়, আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসেন, মনিরুল দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে তারা তা জানাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে জানতে পারেন বাসার একটি কক্ষে তার ঝুলন্ত লাশ রয়েছে। মনিরুলের মৃত্যু নিয়ে তাদের নানা সন্দেহ হয়।

মনিরুলের ভাই ইব্রাহিম ও তার পরিবার অভিযোগ করে, মনিরুল একজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী ছাত্র ছিল। তার কোনো অভিমান ছিল না। মনিরুলকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে নিহত মনিরুলের স্ত্রী আইভি আক্তার ও শ্বশুর মোঃ কয়েত আলীর বাসায় গেলে সেখানে তালা ঝুঁলতে দেখা যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আইভি আক্তার ও তার বাবা মোঃ কয়েত আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মনিরুল কেন ও কিভাবে আত্মহত্যা করেছে তারা কেউ সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছেন না। তাদের ধারণা অভিমান করে মনিরুল নিজেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মির্জাপুর থানার এসআই মোঃ আসাদ মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্ত করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement