আ’লীগ নেতার পায়ের রগ কাটলেন সন্ত্রাসীরা
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৯
মাদারীপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে প্রায় এক মাস ধরে ঘরে বন্দি আওয়ামী লীগের এক নেতা। সন্ত্রাসীরা তার ডান পায়ের রগ কর্তন করায় সে এখনো একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা হলেও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন ওই নেতার নাম সোবাহান সরদার। তিনি সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদীর একটি অংশে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে যুবদল ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি চক্র। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করায় এলাকার ফসলী জমি ও নদীর পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্থানীয়রা একাধিকবার বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
পরে স্থানীয়দের পাশে এসে দাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা সোবাহান সরদার। তিনি ড্রেজার বন্ধে একাধিকবার পদক্ষেপ নিতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে চক্রটি। এরই জেরে চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর সোবহানের উপর অতর্কিত হামলা চালায় চক্রটি।
সোবাহান সরদারের স্বজনরা বলেন, ঝাউদি এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী সোহেল খান ও মোয়াজ্জেম মোল্লার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রসী গত ৪ সেপ্টম্বর অর্তকিত হামলা চালায়। সন্ত্রসীরা ধারালা অস্ত্র দিয়ে তার ডান পায়ের রগ কেটে দেয়। পরে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে অন্যত্র প্রেরণ করে। পরে শহরের একটি ক্লিনিং এ তার চিকিৎসা করানো হয়।
ঘটনার দুইদিন পরে ৬ সেপ্টম্বর সোবাহান সরদারের স্ত্রী হাসিয়া বেগম মাদারীপুর সদর মডেল থানায় ৫ জনকে স্বাক্ষী রেখে সোহেল খানকে (৩৫) প্রধান আসামি করে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় বাকি আসামিরা হলো রুবেল খান (৩৫), রাজিব খান (২৬), মোয়াজ্জেম মোল্লা (৪৫), বোরহান মোল্লা (৪৬), নূর মোহাম্মদ কাজী (৪৫), ফারুক মোল্লা (৩২), বোরহান মোল্লা (৩৫), ও মিজান কাজী (২৫)।
পুলিশ ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা সোবাহান সরদার তালতলা এলাকার ব্রাক্ষ্মন্দী মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে তার নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার গতিরোধ করে একদল সন্ত্রাসী। পরে অভিযুক্ত আসামিরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করতে গেলে রামদায়ের কোপ তার ডান পায়ে লাগে। এ সময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরতর অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হামলার শিকার চিকিৎসাধীন সোবাহান সরদার বলেন, ‘আমি এলাকার সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করি। সোহেল, মোয়াজ্জেম ওরা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের করে আড়িয়াল খাঁ নদীর বিভিন্ন অংশে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে ওরা। এতে নদীর পার ভেঙ্গে যাওয়াতে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে ওরা আমাকে হত্যার জন্য অর্তকিত হামলা চালায়। আমি প্রায় ১ মাস ধরে চিকিৎসাধীন। আমার এ ঘটনার জন্য যারা দায়ী আমি তাদের বিচার চাই।’
জানতে চাইলে এ সম্পর্কে অস্বীকার করে সোহেল খান বলেন, ‘আমার কোন লোকজন সোবাহানের উপর হামলা করেনি। আমাদের কোন ড্রেজার এখন আর নদীতে চলে চলে না। আমাকে প্রধান আসামি করে আরো যাদের নাম উল্লেখ করে মিথ্যে একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছে সোবাহানের স্ত্রী।’
মামলার তদন্তকালী কর্মকর্তা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপ-পরির্দশক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা সোবাহানের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। তার ডান পায়ের রগ কর্তন হয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আসামিরা এখন এলাকা ছাড়া। আমরা ওই এলাকায় একাধিকবার অভিযানে গিয়েছি। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা