৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মন্ত্রিত্ব হারানোর আতঙ্ক, বাদ পড়তে পারেন অনেক হেভিওয়েটও

মন্ত্রিত্ব হারানোর আতঙ্ক - সংগৃহীত

নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর এবার মন্ত্রিত্ব হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন সরকারের অনেকে। নানা সময়ে ওঠা বিতর্ক, অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং নতুনদের জায়গা করে দেয়ার জন্যই তাদের বাদ দেয়া হতে পারে। বাদের তালিকায় পড়তে পারেন হেভিওয়েট মন্ত্রীরাও। 

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পরপরই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠদের সাথে সরকার গঠন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা করেন। সেখানে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রত্যয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ করে তার মন্ত্রিসভা সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান। উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি দূর করার পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অপোকৃত স্বচ্ছ ভাবমর্যাদা ব্যক্তিদের খুুঁজে তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে জানা গেছে।

গণভবনের বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মেয়াদে থাকা সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আমলনামা শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে অদ এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকা মন্ত্রীদের বাদ দিতে যাচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে সে রকম আভাস দিয়েছেন তিনি।

সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ওই সব রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এমনকি কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাংক হিসাবও সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব দেখে অনেক নামিদামি মন্ত্রী থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাদের বাদ দিয়ে এবারের মন্ত্রিসভায় সম্ভাবনাময়, স্বচ্ছ ভাবমর্যাদা সম্পন্ন, দ, তরুণ এবং দলীয় কাজে আসবেন এমন নেতাদের প্রাধান্য দেবেন তিনি।

সূত্রগুলো আরো জানায়, বর্তমান মন্ত্রিদের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। এবার তাদের বিদায় নিতে হতে পারে। সুশাসনের অঙ্গীকার করে টানা তৃতীয়বার মতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বাদ পড়াদের তালিকায় থাকতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গম কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচিত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ ছাড়া শিাব্যবস্থা নিয়ে নানাভাবে সমালোচিত শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন চিন্তা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। বয়সের কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বাদ পড়তে পারেন বলে দলের শীর্ষ মহলে আলোচনা রয়েছে। বাদ পড়তে পারেন প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবও। 

ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এবার তাদের মন্ত্রিত্বে ফেরা অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে বর্তমান মন্ত্রিসভার ২০ মন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন বলে সূত্রগুলোর ধারণা। 

এ ছাড়া ১০ বছর মেয়াদ পূরণ করেছেন এমন হিসাবেও বাদ পড়তে পারেন অনেকেই। সে েেত্র মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় চলে এসেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান, যুগ্ম সাধারণ মাহবুবউল আলম হানিফ ও ডা: দীপু মনি, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় টেকনোক্র্যাট কোটায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানও থাকতে পারেন মন্ত্রীর তালিকায়। 
এ ছাড়া আরো থাকতে পারেন সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা: হাবিবে মিল্লাত, নরসিংদী-৪ থেকে নির্বাচিত নুরুল মজিদ হুমায়ুন, নওগাঁ-২ আসন থেকে নির্বাচিত শহীদুজ্জামান সরকার, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন, বগুড়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। চাঁদপুর থেকে নির্বাচিত জাতীয় প্রেস কাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান আলোচনার বাইরে নেই ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তবে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভা গঠন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকেই এখানে স্থান দেবেন। এখন পর্যন্ত কারা মন্ত্রিসভায় থাকবেন আর কারা থাকবেন না তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন।


আরো সংবাদ



premium cement