২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানিতে একাকার খুলনা মহানগরী বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত

প্রবল বর্ষণে রাস্তাঘাট বাসাবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় খুলনা নগরীতে ড্রামে করেই রাস্তা পার হ নয়া দিগন্ত -

নগরীর প্রতিটি সড়কই যেন এক একটি খাল। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যায় খুলনা মহানগরী। কোনটি রোড আর কোনটি পুকুর, খাল তা চেনাই দুষ্কর হয়ে পড়ে নগরবাসীর। সুযোগ পেয়ে জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন অনেকে। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েেেছ এবং এটিই খুলনায় এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, বাইতিপাড়া, তালতলা, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা মোড়, কেডিএ এভিনিউ, শিববাড়ি মোড়, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর মেঘার মোড়, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিমরূপসা, রূপসা স্ট্র্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরাবান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। নি¤œাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও বস্তিগুলো বৃষ্টির পানিতে থই থই করছে। অনেক এলাকার ভবনের নিচতলার মেঝে পানিতে তলিয়ে যায়।
এদিকে, বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নগরীতে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল খুবই কম দেখা যায়। জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা বা ইজিবাইক না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এ সুযোগে রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় বাগি¦তণ্ডাও দেখা যায়। আবার অনেকে নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়েই যাতায়াত করেন।
নগরীর বাস্তুহারা এলাকার নুরু বলেন, খালিশপুর-মজুগুন্নী আবাসিক এলাকার পানি এ এলাকা দিয়ে বের হওয়ায় আমরা একেবারেই পানিবন্দী। আমাদের বের হওয়ার কোনো পথ নেই। এমনিতেই সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ওঠে। প্রবল বর্ষণে এখন আমরা খাটে আশ্রয় নিয়েছি। আশপাশের প্রায় সব ঘরবাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিনও পানির নিচে। অধিকাংশ পরিবারে রান্নার চুলা জ্বলেনি। এলাকার দোকানপাটও বন্ধ।
খালিশপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকাল থেকে খালিশপুর এলাকা যানবাহনশূন্য। বাসার বাইরে বের হতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি জানান, নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় শিশু পার্কের সামনে হাঁটু পানি জমে গেছে। খালিশপুরের অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে গেছে। সব জায়গায় পানি আর পানি। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মুখে হাসি দেখা গেছে চিংড়ি ঘের মালিকদের। তাদের অনেককে বলতে শোনা গেছে, এরকম বৃষ্টি হলে আমাদের আর কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আরো কয়েক দফা এরকম বৃষ্টি দরকার।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, শুক্রবার রাত ৩টা থেকে খুলনায় মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মওসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় খুলনা অঞ্চলে এ প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, খাল ভরাট, অবৈধ দখল ও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষসহ নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।


আরো সংবাদ



premium cement