২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষক নেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

-

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ও নানা প্রস্তাবনা নিয়ে শিক্ষক নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সরকার সমর্থক শিক্ষক নেতারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। বাজেটে ইতিবাচক অনেক কিছু আছে। এর ফলে শিক্ষাখাতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। তাদের দাবি, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া উচিত জুলাই মাস থেকেই। অন্যদিকে বিরোধী দল সমর্থক শিক্ষক নেতারা বলছেন, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। এতে শিক্ষা জাতীয়করণের কোনো প্রস্তাবনা বা বরাদ্দ নেই বরং শিক্ষক আমদানির ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে তারা বলেছেন, দেশেই যোগ্য শিক্ষক আছেন, তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে বিদেশমুখিতা রোধ করার পরিকল্পনা নেয়া উচিত।
গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ (মূলত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে এ বাবদ ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ যদিও শিক্ষাবিদসহ শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি করে আসছেন দীর্ঘ দিন থেকে।
অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বাজেটে বরাদ্দ বিভিন্ন খাতে বাড়ানো হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য ও দাবির সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন অধিকাংশ শিক্ষক নেতা। তারা বলেছেন, টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখানো হলেও বিগত বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফিতি যে হারে বেড়েছে, শিক্ষায় বরাদ্দ সে হারে বাড়েনি। বাজেট বক্তৃতায় কথার ফুলঝুরি রয়েছে শিক্ষাখাতে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন এবং অনেকাংশেই হতাশাজনক।
সরকার সমর্থক শিক্ষক নেতারা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানানো উচিত। তিনি শিক্ষক সমাজের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকার সমর্থক শিক্ষক নেতারা বলেছেন, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকেই এটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। যোগ্য কেউ যেন বঞ্চিত না হন।
সরকারের নীতি-আদর্শের বিরোধী প্রবীণ এক শিক্ষক নেতা বলেছেন, মানব সম্পদ বৃদ্ধিতে শুভঙ্করের ফাঁকি দেখা যাচ্ছে। কথার ফুলঝুরি রয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একই চিন্তাধারার অন্য শিক্ষক নেতারা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ শিক্ষকদের হতাশ করেছে। বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব নয়। এমপিও খাতে বরাদ্দকে তারা ইতিবাচক বলতেও নারাজ। কারণ এ বরাদ্দ সঠিকভাবে দেয়া হবে নাকি সরকার সমর্থক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত হবে। যে নীতিমালা করা হয়েছে, তাতেও অনেক গলদ আছে। আমলাতান্ত্রিকতা পরিহার করে শিক্ষার চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত হবে।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাবনা পর্যাপ্ত নয় এবং প্রত্যাশা অনুসারে বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করে তারা বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হতাশ হবে যদি শিক্ষকদের দাবিগুলোর ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা বা বরাদ্দের কথা বাজেট পাসের আগে প্রতিস্থাপন করা এবং বাজেট পাসের আগে পুনর্মূল্যায়ন এবং বরাদ্দ না বাড়ানো হয়। শিক্ষা জাতীয়করণ এবং সরকারি শিক্ষকদের সাথে বৈষম্য দূরীকরণের দাবি যেন উপেক্ষিত না হয়।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের (বিপিসি) সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ মোটেই প্রত্যাশিত নয়। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বিগত বছরের চেয়ে বেশি দেখানো হলেও টাকার মূল্যমানে তা বাড়েনি। প্রবীণ এ শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষাখাতে অনেক অগ্রগতি ও অর্জনের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এবারের শুধু নয়, বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিটি বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমেছে। এটি দুঃখজনক ও হতাশার। শিক্ষা জাতীয়করণ, চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সমতার দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেল এবারও। এরপরও কি বর্তমান সরকার এবং প্রস্তাবিত বাজেটকে শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব বলা যেতে পারে? তিনি আরো বলেন, শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনা নয়, শিক্ষা জাতীয় অগ্রগতির দিক চিহ্ন হিসেবে বিবেচনায় নেয়া উচিত সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে।।
বর্তমান সরকারের আগের আমলে গঠিত জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটি ২০১০ এর অন্যতম সদস্য, শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বাজেটে ইতিবাচক দিকটাই বেশি। তবে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। বাজেটে এমপিওভুক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথাও বলা হয়েছে।
শিক্ষার জন্য আলাদা বাজেট উপস্থাপনের দাবি করে অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আরো বলেন, বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এটিকে সমন্বিত করা দরকার। শিক্ষা এখন কোনো জাতীয় বা দেশীয় ইস্যু নয়, শিক্ষাকে জাতিসঙ্ঘ তাদের এসডিজিতে চতুর্থ অগ্রাধিকার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে এটিকে সেভাবেই বিবেচনায় নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাজেটে যে বরাদ্দই দেয়া হোক না কেন, তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা জুলাই মাসেই করা উচিত। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রী কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া এবং কারিকুলাম পরিবর্তনের যে কথা বলেছেন এটাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানানো উচিত। শিক্ষাকে মানব সম্পদ উন্নয়নের হাতিয়ার বিবেচনা করতে গেলে শিক্ষামন্ত্রীর এ উদ্যোগে সাধুবাদ দিতে হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের একক বৃহৎ সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূঁইয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ইতিবাচক কিছুই দেখছি না। গত ১০ বছর এমপিও বন্ধ রয়েছে। এ ১০ বছর যে শিক্ষকরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের কি দিয়ে তা পরিশোধ করবেন? এখন যাদের এমপিও দেয়ার কথা বলা হচ্ছে বা হবে তা কি দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠবে বর্তমান সরকার?
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষকদের সাথে গত ১০ বছর বৈরী ও বিমাতাসুলভ আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। বাজেটে শিক্ষক আমদানির ঘোষণা দিয়ে সরকার শিক্ষকদের সাথে বৈরী আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এ দেশে অনেক মেধাবী শিক্ষক রয়েছেন, যারা বিদেশে গিয়ে সুনাম অর্জন করছেন। এসব শিক্ষককে আমরা ধরে রাখতে পারছি না।
সরকার সমর্থক শিক্ষক সংগঠনগুলোর আরেকটি জোট শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ইবতেদায়ি মাদরাসাকেও এমপিওর আওতায় আনার ঘোষণা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও পরিকল্পনার অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। এ শিক্ষক নেতা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক আমদানিকে সময়োযোগী বলে মন্তব্য করেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব এবং সরকার সমর্থক শিক্ষকদের অন্যতম নেতা অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষাখাতে বিশেষ করে এমপিওর জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং ইবতেদায়ি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় আনার গত ৩৫ বছরের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক সমাজে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শিক্ষা জাতীয়করণ এখন তা বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্য জোটের প্রধান সমন্বয়কারী মো: নজরুল ইসলাম রনি এমপিও খাতে বরাদ্দকে সরকারের সদিচ্ছা এবং প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি সরকারি শিক্ষকদের সাথে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বিরাজমান বৈষম্য দূর করার দাবি জানান।
এদিকে, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষকদের ব্যাপারে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সে জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন

সকল