২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষের মাথা-রক্ত লাগবে গুজবে বিভিন্ন স্থানে অপরিচিত মানুষের উপর হামলা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন গুজবে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে গলাকাটা, বস্তাওয়ালা কিংবা ছেলেধরা ভেবে একের পর এক মানুষকে প্রহার করা হচ্ছে। এরা মৃত্যু থেকে ফিরে আসছে।

এমনি ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুর সদর, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়াতে। এসব ঘটনায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির পিপিএম বিপিএম হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে জানিয়েছেন, যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে এবং লোকজনকে ধরে প্রহার করছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য চাঁদপুরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। গত কয়েকদিনে চাঁদপুরে ৫ জন এই প্রহারের শিকার হয়।

চাঁদপুর সদরের ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার মনু মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে বেদম প্রহার করেছে স্থানীয় জনতা। মারধরের শিকার ব্যক্তি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার বাসাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা দুলু মিয়া। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মনু মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। একই ঘটনা ঘটেছে শাহরাস্তি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাজিরকামতা গ্রামে।

স্থানীয়রা জানায়, ওইদিন সকালে আটক স্থানে (বড় বাড়ি) সংলগ্ন রাস্তার মাথায় অজ্ঞাত পাগলিকে ঘুরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় লোকজন। এমন সময় কে বা কারা ওই মহিলাকে পদ্মা সেতুর গলাকাটা গ্রুপর লোক বলে আখ্যা দিলে হুজুগে লোকজন তাকে মারধর করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোহাম্মদ মোল্লার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে থানা হেফাজতে নেয়।

ফরিদগঞ্জ কয়েকশত জনতা দলবদ্ধ হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গত দুইদিনে জুলেখা বেগম নামে আশি বছরের এক নারী ও জাহাঙ্গীর আলম নামে মধ্য বয়সের এক পুরুষকে বেদম পিটুনী দিয়েছে। তাদের দুই জনই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের উদ্ধার করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে (গলাকাটা চোর) আমির হোসেনকে স্থানীয় জনতা কর্তৃক আটক করেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ জুলাই বেলা পৌনে ১২টার সময় বকাউল বাড়ীতে। আটক আমির হোসেনের পিতার নাম মোঃ মজিবুর রহমান, গ্রামের বাড়ী মতলব পৌরসভার নবকলস।

কচুয়া উপজেলার গোহট উত্তর ইউনিয়নের পালগিরী গ্রামের কাচারি বাড়িতে এক অপরিচিত পাগলকে দেখে মানব পাচারকারী সন্দেহে স্থানীয় লোকজন মারধর করে। কচুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওয়ালী উল্লাহ ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।

এদিকে চাঁদপুর জেলার একাধিক স্থানে এ ধরনের ঘটনায় চাঁদপুর পুলিশ মিডিয়া সেলে একটি বিবৃতি দিয়েছেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে মর্মে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াচ্ছেন। এ ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী কিংবা ভবঘুরে নারী পুরুষদের আটক করে গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনা চাঁদপুর পুলিশ বিভাগের নজরে এসেছে। যারা এর পিছনে আছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। গুজব ছড়ানোর পেছনে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement