২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকায় ৭৬ ও চট্টগ্রামে ৮৩ শতাংশ কোম্পানির দরপতন

বড় দরপতন দিয়ে পুঁজিবাজারের সপ্তাহ শুরু
-

বড় ধরনের দরপতন দিয়েই নতুন সপ্তাহ শুরু করেছে পুঁজিবাজার। গতকাল দেশের দুই পুঁজিবাজারই বড় রকম সূচক হারায়। দিনের শুরুতে তৈরি হওয়া বিক্রয়চাপ লেনদেনের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা হ্রাস পেলেও শেষদিকে এসে তা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এতে ঢাকা শেয়ারবাজারে ৭৬ শতাংশ ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ৮৩ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ দশমিক ৮১ পয়েন্ট হারায় গতকাল। ৫ হাজার ৪৬৭ দশমিক ০৫ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি রোববার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৪১৫ দশমিক ২৪ পয়েন্টে। একই সময় দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে ৩ দশমিক ৭৭ ও ৫ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট। এ নিয়ে গত দু’দিনে প্রধান সূচকটির প্রায় ৯০ পয়েন্ট তথা দেড় শতাংশের বেশি হারাল ডিএসই।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে ১৮৫ দশমিক ৮৩ ও ১১২ দশমিক ০১ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ হারায় ৮ দশমিক ০৭ ও ৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতির প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজরগুলোর লেনদেনেও। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৭৪২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৮৪ কোটি টাকা কম। গত বৃহস্পতিবার ৮২৬ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করেছিল ডিএসই। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ৩৪ কোটি টাকা থেকে ২৬ কোটিতে নেমে আসে লেনদেন।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা দিনের বাজার আচরণকে সংশোধন হিসেবেই নিচ্ছেন। তাদের মতে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক যে সংশোধন ঘটছে এটাই এ মুহূর্তে সূচকের বড় অবনতির কারণ। তবে একই সঙ্গে তারা গতকাল জ্বালানি, বীমা তথ্যপ্রযুক্তি ও টেক্সটাইল খাতের কয়েকটি কোম্পানির ব্যাপক দরপতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিগুলোর টানা মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় গতকাল এগুলোতে বড় ধরনের সংশোধন ঘটে যা দিনের সূচকে প্রভাব ফেলে। তবে তারা আশাবাদী, সংশোধন শেষ হলে আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে পুঁজিবাজার।
রোববার দিনের শুরুতেই বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে দুই পুঁজিবাজার। বরাবরই দিনের শুরুতে পুঁজিবাজার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও গতকালের চিত্র ছিল ভিন্ন। ঢাকায় ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৪৬৭ দশমিক ০৫ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করলেও বিক্রয়চাপের শিকার হয়ে দুপুর ১২টায় নেমে আসে ৫ হাজার ৪৪৩ পয়েন্টে। লেনদেনের এ পর্যায়ে সাময়িকভাবে বিক্রয়চাপ হ্রাস পায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএসই সূচক ফের ৫ হাজার ৪৬৭ পয়েন্টে পৌঁছে যায়। সূচকের এ অবস্থান থেকেই দ্বিতীয়বারের মতো বিক্রয়চাপ শুরু হলে নিম্নমুখী হতে থাকে সূচকটি। দিনের বাকি সময় এ চাপ অব্যাহত থাকলে দিনশেষে সূচকটির ৫১ দশমিক ৮১ পয়েন্ট হারায় ডিএসই।
দুই পুঁজিবাজারের প্রধান খাতগুলোর বেশির ভাগই গতকাল দরপতনের কবলে পড়ে। লেনদেনের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক ও বীমা খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও শেষদিকে সৃষ্টি হওয়া চাপ সামলে উঠতে পারেনি। এ সময় ব্যাংক বীমার পাশাপাশি সম্প্রতি টানা মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া জ্বালানি খাতের খুলনা পাওয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ইনটেক অনলাইনসহ টেক্সটাইল খাতের বেশ কিছু কোম্পানি ব্যাপক দর হারায়। টেক্সটাইল খাতের একটি কোম্পানি দিনের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশের মতো দরপতনের ঘটনাও ঘটে যা প্রকারান্তরে দিনের সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩৩১ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫৯টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ২৫২টি, যা লেনদেন হওয়া মোট কোম্পানির ৭৬ শতাংশের বেশি। অপরদিকে চট্টগ্রামে লেনদেন হওয়া ২৪১টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৩৩টির দাম বাড়ে, ১৯৯টি দর হারায়। সে হিসাবে লেনদেন হওয়া মোট কোম্পানির ৮৩ শতাংশই শিকার হয় দরপতনের।
ব্যাপক দরপতন সত্ত্বেও বরাবরের মতো গতকালও ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি খুলনা পাওয়ার। ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৫৬ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ১৭ লাখ ৪৮ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে একই খাতের ইউনাইটেড পাওয়ার ছিল দিনের দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল ইফাদ অটোস, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, বিবিএস ক্যাবলস, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, ইনটেক অনলাইন, শাশা ডেযনিমস, ন্যাশনাল টিউব ও আমান ফিড।

 


আরো সংবাদ



premium cement