২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরিশালে আনসারদের টাকায় কর্মকর্তাদের ভাগ

- ছবি : সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের পারিশ্রমিকের টাকা দিতে কর্মকর্তারা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় দায়িত্বরত ৩২ হাজার ১২৪ জন আনসারের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে কমপক্ষে ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরিশালের উপ-পরিচালক বরাবর জাহিদুল ইসলাম নামে এক আনসার সদস্য গত ৮ জানুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি আসনে এবার ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার ৬৭৭টি। প্রত্যেক কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্য এবং দুইজন গ্রুপ কমান্ডার দায়িত্ব পালন করেন। সেই হিসেবে বিভাগের ছয় জেলায় মোট ৩২ হাজার ১২৪ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত (কমান্ডার বাদে) ছিলেন। নির্বাচনকালীন ছয়দিন ডিউটি হিসাব করে প্রত্যেক আনসারের জন্য ৪ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং গ্রুপ কমান্ডারদের প্রত্যেকের জন্য ৫ হাজার ৫৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্বাচন শেষে ৬ দিন পর গত ৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আনসারদের মাঝে বরাদ্দ টাকা বিতরণ করা হয়।

বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে ৮০৫টি ভোটকেন্দ্রে আনসার সদস্য ছিলেন নয় হাজার ৬৬০ জন। এরমধ্যে বরিশাল সদর আসনে ১৭৪টি কেন্দ্রের দুই হাজার ৮৮ জন আনসার সদস্যের কাছ থেকে চারশ টাকা হারে ৮ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ নিয়েছেন উপজেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন। এরমধ্যে একশ টাকা করে নিয়েছেন গ্রুপ কমান্ডাররা। বাকি টাকা আফজাল হোসেন এবং অন্য কর্মকর্তারা ভাগ করে নিয়েছেন।

বিভাগের বাকি পাঁচটি জেলায় একইভাবে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বনিম্ন চারশ এবং সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।

মুলাদী উপজেলার আনসার গ্রুপ কমান্ডার আব্দুল মজিদ বলেন, নির্বাচনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে আমাদের কাছ থেকে চারশ টাকা করে নিয়েছেন আনসার অফিসের কর্মকর্তারা। ওই টাকা থেকে একশ টাকা দেওয়া হয়েছে গ্রুপ কমান্ডারদের। ৬ জানুয়ারি আমাদের ছয়দিনের পারিশ্রমিক হিসেবে চার হাজার ৫৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে গ্রুপ কমান্ডাররা পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭ টাকা।

বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদের বাসিন্দা আনসার সদস্য জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিভাগের ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনায় দায়িত্বরত আনসারদের কাছ থেকে চারশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়।

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন। পরে বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যের কথোপকথনের রেকর্ড শোনানো হয় তাকে। এরপর তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আংশিক সত্য। তবে আমি টাকা তুলেছি এ কথা ঠিক না। অফিসের অন্য কেউ হয়তো কাজটি করেছেন। তাদের দায় আমার ওপর এসে পড়েছে। দয়া করে এ নিয়ে লেখালেখি করবেন না।’

বরিশাল আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বেশিরভাগ সদস্য গ্রামের দরিদ্র মানুষ। তাদের খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ দিন মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের প্রত্যেককে সাড়ে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই আমরা উপজেলা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছি যাতে এই গরিব মানুষদের কাছ থেকে কোনও ধরনের ঘুষ নেওয়া না হয়। এরপরও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ আমার কানে এসেছে।’ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement