৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


৪১ বছর বয়সী জেএসসি পরীক্ষার্থী!

পরীক্ষার হলে ৪১ বছর বয়সী জেএসসি পরীক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ - নয়া দিগন্ত

‘লেখা পড়ার বয়স নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই’- শিক্ষা গ্রহণের এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে ৪১ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চমক দিয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার এক শিক্ষার্থী।

অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রাজিহার ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ বৃহস্পতিবারের শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি করেন। জেএসসি পরীক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটালীপাড়া রামশীল গ্রামের মৃত হরেকৃষ্ণ বাড়ৈর ছেলে। তার মায়ের নাম পবিত্র বাড়ৈ।

পরীক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ জানান, চাকুরীর জন্য অন্তত একটি সার্টিফিকেট দরকার। তাছাড়াও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তিজীবনে তিনি স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যে বয়সে স্কুলে যাবার কথা ছিল, সে বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নেয়ায় স্কুল থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যখন বুঝতে পেরেছেন যে, চতুর্থ শ্রেণির একটি চাকুরীর আবেদন করতেও অন্তত অষ্টম শ্রেণির একটি সনদপত্র দরকার হয়, তখন পড়াশোনা ছাড়া গতি নাই। এই শিক্ষা থেকে তিনি স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বয়স বেশি হলেও পড়ালেখা কোন হাস্যকর ব্যাপার নয় বলেই বিশ্বাস করেন জেএসসি পরীক্ষার্থী হরষিত বাড়ৈ।

এই মূল মন্ত্র ধারণ করে তিনি রাজিহার ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে কম্পিউটার এ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে ভর্তি হয়ে চলমান জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাসের নজর কাড়েন পরীক্ষার্থী হরষিত। পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার যে কোনো বয়স নাই এবং যে কোনো বয়সেই যে লেখাপড়া করা যায় তার অনন্য উদাহরণ শিক্ষার্থী হরষিত। জ্ঞানার্জনের জন্য বয়সের চেয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে হরষিত লেখাপড়া করায় বর্তমান সমাজ ও দেশের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। হরষিতের নিকট থেকে অনেকেরই শিক্ষা নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস।

খেঁজুরের রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে সিঁউলিরা

এদিকে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে খেঁজুরের রস আহরণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছি বা সিঁউলিরা। ইতোমধ্যে শীতের হিমেল হাওয়ার মধ্যেই গাছিরা রস আহরণের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করেছেন।

আবহমানকাল থেকে গ্রামবাংলার আদি ঐতিহ্যের সাথে খেঁজুরের রস ও শীতকাল একাকার হয়ে আছে। শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা। যার মূল উপাদান খেঁজুরের রস, ঝোলাগুড় ও পাটালীগুড়। শীতের সকালে রোদে বসে পিঠা খেতে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলের ভাল লাগে। তাই এসময় গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা ও পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে। তাই প্রতিবছর খেঁজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয় শীতের শুরুতেই।

এবার একটু আগেভাগেই খেঁজুরগাছ কাটার কাজ শেষ করেছেন গাছি বা সিঁউলিরা

 

এবারও খেঁজুরগাছ কাটার কাজ শেষ করেছেন গাছি বা সিঁউলিরা। গাছের মাথায় একইস্থানে অনেকখানি বাকল তুলে সেখানে হাঁড়ি বেঁধে এ রস সংগ্রহ করছেন।

উপজেলার অনেক গ্রামে মহাজনরা আগাম রসের জন্য গাছিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে রেখেছেন। সেই টাকায় অনেকে রস সংগ্রহের বিভিন্ন উপকরণ কিনে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। উপজেলার গাছি জালাল মিয়া, লোকমান হোসেন ও শাহ আলম জানান, অন্য মৌসুমে তারা বিভিন্ন কাজ করেন। কিন্তু শীত এলেই তারা খেঁজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ এ অঞ্চলে রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় হয়। এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেঁজুরের গুড়েরও বেশ কদর থাকে।

তারা আরো জানান, তাদের নিজেদের কোন গাছ নেই। অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন বলে জানান।

বাড়ির উঠানের একপাশে স্তুপ করা থাকে অসংখ্য ছোটবড় রসের হাঁড়ি। পুরুষেরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। আর মহিলারা বাড়ির উঠানে উনুনে বড় পাত্রে রস জ্বাল দেন। আর সারাদিন ধরে চলে জ্বালাইয়ের মাধ্যমে রস শোধন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে রসের মিষ্টি গুড় তৈরি হয়। এসময় পুরো এলাকা খেঁজুরের রসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেঁজুর গাছের ভূমিকা অপরিসীম। এ উপজেলায় এখনো বেশকিছু খেঁজুর গাছ দেখা যায়। খেঁজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ক্রমশ তা হ্রাস পাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement