২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেঁতুলিয়ার শালবাহান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩০ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি

-

তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় ৩০ বছর হলেও সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা দিতে আসা চিকিৎসকসহ সেবা গ্রহণকারী রোগীদের দুর্ভোগ।
সরেজমিন দেখা যায় শালবাহান ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে একটি আরডিও বিল্ডিং ছিল। টিনশেড ইটের ওয়াল দিয়ে নির্মিত ওই বিল্ডিংটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়। সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরডিএ বিল্ডিংয়ের জমিতে শালবাহান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দ্বিতল ভবনটির নিচ তলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে শালবাহান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীনে পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র যৌথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি একজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিট, আয়া ও পিয়ন এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধিভুক্ত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে একজন ডব্লিউএফভি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারসহ আয়া ও পিয়ন নিয়োজিত আছেন।
উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে নিবিড় পল্লীতে অবস্থিত সরকারি এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে শালবাহান ইউনিয়বাসী প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্রে মাতৃসেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা, প্রসূতি সেবা ও গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ সেবা গ্রহণের জন্যও অর্ধশতাধিক রোগী আসেন। ফলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহাণের জন্য প্রতিদিন দুই শতাধিক লোক সেবা নিতে আসেন। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সীমানাঘেঁষে মণ্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। কিন্তু উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণের যাবতীয় সরঞ্জামাদি সুসজ্জিত থাকার পরও দীর্ঘ ৩০ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি।
ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় আগন্তুক রোগী ও প্রসূতি মায়েদের তীব্র গরম ও শীতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একই সাথে সেখানে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসারসহ অন্যান্য কর্মচারী তীব্র শীত ও গরমে অনেক কষ্টে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। সর্বোপরি বিদ্যুতের অভাবে নলকূপের পাম্প থেকে ট্যাংকটিতে পানি সরবরাহ নিতে না পারায় বাথরুম ও টয়লেটসহ গৌণ শৌচাগারে খুবকষ্ট পোহাতে হয়। সরকারি বিধি অনুযায়ী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন আবাসিক স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা এবং উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসারের কোয়ার্টার থাকলেও শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বসবাস করতে পারছে না।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিট আতিয়ার রহমান জানান, ২০০৮ সালে এখানে চাকরিতে যোগদানের সময়ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। তখন শুনেছি ভবনটিতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে অনেক দূর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া ছিল। কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অফিসে বলেও কোনো কাজ হয়নি।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: তৌফিকুর রহমান খান পাঠান বলেন, ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের যাবতীয় সরঞ্জামাদি থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়ায় আগন্তুক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে বেশ কষ্ট ভোগ করতে হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সহসভাপতি কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, শালবাহান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ আমাকে বলেনি। যতদ্রুত সম্ভব সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউনিয়নের সচেতন মহলের ক্ষোভ বর্তমান সরকার যখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। তখন ইউনিয়নবাসীর একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩০ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া খুব দুঃখজনক। তারা অচিরে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ও পঞ্চগড় বিদ্যুৎ নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উপজেলা প্রশাসনের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement