২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৌলতপুরে ২৪ অবৈধ ইটভাটা : প্রতি মৌসুমে পুড়ছে ১৭ লাখ মণ কাঠ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফসলি জমিতে স্থাপিত একটি ইটভাটা : নয়া দিগন্ত -

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২৪টি অবৈধ ইটভাটায় দেদার পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট পোড়াতে কয়লা ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা না মেনে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন করে সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে জ্বালানি কাঠ বা কাঠের গুঁড়ি। এতে করে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি উজাড় হচ্ছে গাছ। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, দৌলতপুর উপজেলার ২৪টি ইটভাটার সবই অবৈধ। কোনোটিরই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই।
কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা সদরের দুই-এক কিলোমাটারের মধ্যে স্বরুপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর গ্রামের আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে আটটি ইটভাটা। দৌলতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের পাশেই রয়েছে আরো চারটি ইটভাটা। এ ছাড়াও উপজেলার কল্যাণপুর, ডাংমড়কা, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া ও প্রাগপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলোতে হাজার হাজার মণ গাছের গুঁড়ির স্তূপ পড়ে রয়েছে। ১২০ ফুট উঁচু স্থায়ী চিমনির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কোনো কোনো ভাটায় রয়েছে ৩০ থেকে ৭০ ফুট চিমনি। রয়েছে ২০ ফুটের ড্রাম চিমনিও। ইটভাটা পোড়ানো শ্রমিক ও কাঠ সরবরাহকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মৌসুমে প্রায় ছয় মাস (১৮০ দিন) ইটভাটাগুলো চলে। একটি ইটভাটায় দৈনিক ৩৫০-৪০০ মণ কাঠের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে প্রতি মৌসুমে এসব ইটভাটায় ১৫ থেকে ১৭ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটায় কাঠ সরবরাহের জন্য রয়েছে বেশ কিছু ব্যবসায়ী। তারা কুষ্টিয়া ও আশপাশের জেলা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর থেকে কাঠ নিয়ে এসে এই উপজেলার বিভিন্ন ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানি হিসেবে এসব কাঠের ব্যবহার করছেন। ভাটাগুলো থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনোসাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
এ দিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। ইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত মাটি জমির ওপরের স্তরের মাটি হওয়ায় দিন দিন জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১৩) অনুযায়ী, কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেয়া ও ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো দণ্ডণীয় অপরাধ এবং আবাসিক এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও কৃষি জমিতে ভাটা তৈরি বেআইনি। কিন্তু এসবের কোনোটাই মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে কিভাবে এসব কর্মকাণ্ড চলছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে নানা গুঞ্জন রয়েছে। মৌসুমে দু-একটি লোক দেখানো অভিযানের মাধ্যমে ভাটাগুলো থেকে নামমাত্র জরিমানা আদায় করেই ক্ষান্ত প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর। বছরের পর বছর এসব অবৈধ ভাটা চললেও এগুলো নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কেনো নেয়া হয় না সে বিষয়ে এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন রয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, দৌলতপুরের কোনো ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। বিভিন্ন উপজেলা অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই দৌলতপুর উপজেলার ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শারমিন আক্তার বলেন, ্ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement