২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৈরী আবহাওয়ায় গোয়ালন্দের নদীভাঙা পরিবারগুলো দুর্ভোগে

গোয়ালন্দে নদীভাঙনের শিকার আশ্রয়হীন পরিবারগুলো ঝড়বৃষ্টিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ছবিটি দেবগ্রাম আরপিএস মাঠ থেকে তোলা হনয়া দিগন্ত -

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুর্যোগপূর্র্ণ আবহাওয়ায় নদীভাঙা অসহায় পরিবারগুলোকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি হারানো দেড় শতাধিক পরিবার এ দুরবস্থার মধ্যে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫০টি পরিবারের ঘর তোলার জায়গা না থাকায় তাদের ঘরবাড়িগুলো যত্রতত্র পড়ে আছে।
এ দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগপূর্র্ণ আবহাওয়ায় নদীভাঙা পরিবারগুলো আরো অসহায় হয়ে পড়ে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ও বৃষ্টিতে তাদের সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভিজে যাওয়ায় রান্নাবান্না ও খাওয়াদাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সঙ্কীর্ণ জায়গায় পরিবারের সদস্যরা ঠাসাঠাসি করে ঘুমোতে পাড়ছে না। কোনো কোনো পরিবারের সদস্যরা ঘুমানোর জায়গা না পেয়ে সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজছে। কেউ কেউ রাত গভীর হলে স্কুলের বারান্দায় ঘুমায়। লোকলজ্জায় আবার ভোর হওয়ার আগেই বিছানাপত্র গুছিয়ে চলে আসে। তা ছাড়া নিজেদের খাবার ও গৃহপালিত পশুর খাদ্যসঙ্কটেও পড়েছে পরিবারগুলো।
দেড় মাস আগে ভাঙনের সময় দেবগ্রামের আরপিডিএস মাঠ, ফেরিঘাট সড়কের পাশে, দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠ, টার্মিনালের পাশে, মহাসড়কের পাশে, রেললাইনের ঢালুতে ওই পরিবারগুলো আশ্রয় নেয়। ভাঙনের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের মাথা গোঁজার জায়গা হয়নি।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের পাশে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা ঘরবাড়ির জিনিসপত্র চোখে পড়ে। আব্দুর রশিদ, মনছের সরদার, জুঁই আক্তার, মঞ্জুয়ারাসহ দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠে আশ্রয় নেয়া অনেকে জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে অর্ধশত পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেলেও ২০টি পরিবার এখনো রয়েছে। এদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে পড়ে আছে। ভাঙাচোরা স্তূপ করে রাখা ঘরের মধ্যে অনেককে গাদাগাদি করে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা জানায় তাদের অসহায়ত্বের কথা।
এ সময় স্কুল মাঠে এক অসহায় নারীর দেখা মিলল। শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতার ছাপ স্পষ্ট। কথা বলতে গিয়েই বোঝা গেল তিনি গর্ভবতী। নাম জিজ্ঞাসা করতেই রাজ্যের লজ্জাভরা কণ্ঠে বললেন ‘রাশেদা বেগম’। তার স্বামী মমিন মণ্ডল একজন দিনমজুর। রওশনারা বেগম নামে তার আরো একটি বোন একই অবস্থায় রয়েছে। তার চোখে মুখে রাজ্যের হতাশা। তাদের আশ্রয় হয়েছে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠের এক পাশে। আশ্রয় বলতে বসতঘরের টিনের দু’টি চাল আড়াআড়ি করে তাঁবুর মতো করে স্থাপন করা। তার মধ্যে কাঠের একখানা চৌকি পাতা। সাথে ঘরগৃহস্থের কিছ জরুরি জিনিসপত্র। দেড় মাস আগে ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে এখানে তাদের ঠাঁই হয়েছে।
উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের আরপিডিএস মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে এনে স্তূপ করে রেখেছে। স্তূপ করে রাখা ঘরের চালা ও আসবাবপত্রের ফাঁকফোকরে তাদের চরম মানবেতর দিনরাত কাটছে। সবার চোখে-মুখে দুঃখ। এখানে আশ্রয় নেয়া হাবিব খাঁ, নাজিমদ্দিনসহ অনেকেই জানান, এই খোলা মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement