২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি ব্রিজের জন্য ২৫ গ্রামের মানুষের অপেক্ষা

কেশবপুরের ত্রিমোহনী বাজারে কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি ব্রিজের অভাবে ২৫টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

যশোরের কেশবপুরের ত্রিমোহিনী বাজারে কপোতাক্ষ নদের ওপর ২৫ গ্রামের মানুষের একটি ব্রিজের দাবি দীর্ঘ দিনের। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও শতশত শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন। এ ব্রিজটি নির্মাণের জন্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেক আবেদন-নিবেদনও করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। ফলে এ পথে যাতায়াতকারী ২৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতা, আমলাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিক্ষায় থেকে যুগ যুগ কেটে গেছে। এলাকার মানুষের মুখে এখন একটি কথাÑ এ প্রতিক্ষার শেষ হবে কবে, কবে হবে আবসান।
কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে ত্রিমোহিনী বাজারের পাশের কপোতাক্ষ নদের ওপর মাত্র আধা কিলোমিটার একটি ব্রিজের অভাবে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। কেশবপুরের ত্রিমোহিনী এলাকার মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে সাতক্ষীরার কলারোয়া অঞ্চলে এবং সাতক্ষীরার মানুষকে এ অঞ্চলে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু একটি মাত্র সেতুর অভাবে এক কিলোমিটার পথ যেতে এসব মানুষকে ঘুরতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। যা ভুক্তভোগীদের জন্য যেমন বিড়ম্বনার তেমনি এতে সময়ও নষ্ট হয় অনেক।
নদ তীরবর্তী দেয়াড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, চালনদিয়া, দৌলতপুর, ছলিমপুর, পাটুলিয়া, গড়গড়িয়া, বাজে খোরদো, মাঠপাড়া, উলুডাঙ্গা, উলুশী, জানখা, আবাদপাড়া, পাকুড়িয়া, খোরদো, বাটরাসহ ২৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সেখানে যোগাযোগের তেমন কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক জরুরি সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওইসব গ্রামের মানুষ। যোগাযোগব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে এসে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও কপোতাক্ষ নদের ওপর দিয়ে পারাপারের জন্য আজো কোনো ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। যার কারণে কপোতাক্ষ নদের ওপারের দেয়াড়া যাওয়াসহ তীরবর্তী এলাকার মানুষের যোগাযোগব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। ওই গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি ইরি ধান উৎপাদন হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোনো পথ না থাকায় স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ কৃষি পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাজনদের কাছে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও কারো যেন মাথা ব্যথা নেই।
স্থানীয়রা জানান, ঘাটের টোল তোলা বন্ধ করে কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তী এলাকার দুই পারের মানুষ নিজেরা চাঁদা দিয়ে বাঁশ ক্রয় করে নির্মাণ করেছেন বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিনই নিজেদের প্রয়োজনে কেশবপুর থেকে আসা পথচারী, ভ্যান, মোটরসাইকেল এবং ওপারের দেয়াড়া, খোরদো, বাটরা, পাকুড়িয়া ও বামনখালিসহ ২৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন।
স্থানীয় আকরাম হোসেন বলেন, অর্থাভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বাঁশের সাঁকোটি মেরামত না করায় তা ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওপারের শতশত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরা এপারের ত্রিমোহিনী বাজারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করতে আসে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও সে দাবি বাস্তবায়নে কারো মাথা ব্যথা নেই। মাত্র আধা কিলোমিটার ব্রিজ নির্মিত হলে মানুষকে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হতো না। প্রতিবারের মতো এবারো উভয় পারের মানুষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের আশ্বাসের দিকে। কবে হবে সেতুটি নির্মাণ?
শিক্ষক মিন্টু হোসেন বলেন, জানি না এ প্রতিক্ষার শেষ হবে কবে,কবে হবে অবসান। এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিক্ষায় থেকে যুগ যুগ কেটে গেছে। ব্রিজ না হওয়ায় এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমান বলেন, ওই স্থানে ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে ব্রিজটি নির্মাণ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement