০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ক্রাইস্টচার্চ : দুই হিরোর উপস্থিতিতে সৃষ্টি হলো আবেগঘন পরিবেশ

ইমাম আবদুল লতিফ জিরুল্লাহ ও আবদুল আজিজ - ছবি : সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গত শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় দুটি মসজিদে, তাতে ওই সন্ত্রাসীকে বাঁধা দেয়নি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো সদস্য। বরং দুই তিনজন মুসলমানই জীবনবাজি রেখে রুখে দিয়েছিলেন ওই সন্ত্রাসীকে। নয়তো ওই ঘটনায় হতাহতের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতে পারতো। সোমবার তাদের দুজন এসেছিলেন সেই জায়গাটিতে। যেখানে দাঁড়িয়ে তারা শুক্রবার প্রত্যক্ষ করেছিলেন নারকীয় এক হত্যাকা-। তাদের উপস্থিতিতে সেখানে তৈরি হয় আবেগঘন এক পরিবেশ।

খুনি ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারেন্ট প্রথমে হামলা চালিয়েছিল আল নুর মসজিদে। সেখানে তাকে কোনো বাধার শিকার হতে হয়নি। এরপর সে চলে যায় কিছু দূরে লিনউড মসজিদে। সেখানে গিয়েও সে একইভাবে মসজিদে প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

লিনউড মসজিদের ইমাম লতিফ জিরুল্লাহ ওই দিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আবদুল আজিজ যদি ব্রেন্টনকে বাধা না দিতেন তাহলে প্রাণহানীর সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যেত।

লতিফ জিরুল্লাহ বলেন, নামাজের প্রাক্কালে ১টা ৫৫ মিনিটের সময় তিনি বাইরে অস্বাভাবিক একটি কণ্ঠ শুনতে পেয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। সে সময় তিনি সামরিক পোশাকধারী এক ব্যক্তির হাতে বড় একটি অস্ত্র দেখতে পান। তখনও তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝতে পারেননি। কারণ শান্তিপূর্ণ দেশ নিউজিল্যান্ডে এটি কল্পনাও করা যায় না যে, একজন সন্ত্রাসী এভাবে প্রকাশ্যে হামলা চালাবে। তাই ইমাম তাকে প্রথমে পুলিশ অফিসার বলে মনে করেন।

কিন্তু যখন তিনি তার সামনেই দুটি লাশ দেখেন এবং বন্দুকধারীর গালিগালাজ শুনতে পান, তখনই তার সবকিছু তার বুঝে আসে। এ সময় তিনি চিৎকার করে সব মুসল্লিকে শুয়ে পড়তে বলেন। কিন্তু তারাও বিষয়টি বুঝতে না পারায় ইতস্তত করছিলেন। এমন সময় মসজিদের জানালায় একটি গুলি এসে লাগলে তা ভেঙে মুসল্লিদের ওপর কাঁচ পড়ে। তখনই মুসল্লিরা বিষয়টি বুঝতে পারে। তখন তারা সবাই শুয়ে যান।

এরই মধ্যে বাইরে থাকা মুসল্লি আবদুল আজিজও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন। তিনি হাতে থাকা শত্রুর মনযোগ নিজের দিতে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান। প্রথমে তিনি ব্রেন্টনকে লক্ষ্য করে হাতে থাকা ক্রেডিট কার্ড মেশিনটি ছুড়ে মারেন। এ সময় হামলাকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে তিনি আরো বেশি চিৎকার করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে তিনি হামলাকারীর লক্ষ্যে পরিণত হন। কিন্তু তিনি গাড়ির ফাঁকা জায়গা দিয়ে দৌঁড়াতে থাকায় বন্দুকধারী তাকে ধরতে পারছিল না। আবার তাকে গুলিও করতে পারছিল না। এ অবস্থায় তার গুলি শেষ হয়ে যায়। আবার গাড়ির দিকে যায় হামলাকারী।

এ সময় পাশে পড়ে থাকা হামলাকারীর বন্দুক উঠিয়ে হামলাকারীর গাড়ির দিকে ছুড়ে মারলে তার গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। এতে হামলাকারী ভয় পেয়ে যায়। সে সময় হামলাকারী আরো মানুষ মারার হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত গাড়িতে ওঠে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

সোমবার ইমাম লতিফ জিরুল্লাহ ও আবদুল আজিজ আবারো সেই ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে এক ভিন্ন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। লতিফ জিরুল্লাহ সেখানে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে আবদুল আজিজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আবদুল আজিজ যদি সেদিন বাধা দিতেন, তাহলে হতাহতের পরিমাণ আরো অনেক বেড়ে যেত। এ সময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ঘটনার আশপাশের এলাকায় মানুষজনের দেয়া ফুলে ভরে গিয়েছিল। 

ইমাম লতিফ বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর যখন আমি বাইরে বেরিয়ে আসলাম তখন যেন আমি নিজেই এ ঘটনার একটি আইকন ছবি হয়ে গেছি। কারণ আমার পোশাকে শরীর তখন রক্তে মাখামাখি। তিনি বলেন, আমি তেমন কিছুই করিনি। কেবল আমার কিছু ভাইকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি।

আমি ভেবেছিলাম আমি কিছু ভাইকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেকে আগেই শহীদ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আল নূর মসজিদে হামলাকারীকে বাধা দিয়েছিলেন মিয়া নাঈম রশিদ। কিন্তু পরে হামলাকারী তার ওপর চড়াও হলে নাঈম গুলিবিদ্ধ হন। পরে তিনি মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement