৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিডনির শপিং মলে হামলাকারী নারীদের নিশানা করেছিল, ধারণা পুলিশের

- ছবি : বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির শপিং সেন্টারে যে ব্যক্তি ছুরিকাঘাত করে ছয়জনকে হত্যা করেছে, তার নিশানা নারীরা ছিল বলে ধারণা করছে সিডনি পুলিশ।

জনবহুল ওয়েস্টফিল্ড বন্ডি জংশন কমপ্লেক্সে শনিবার তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি করেন জোয়েল কাওচি। হঠাৎ করে একটি লম্বা ছুরি দিয়ে সেখানে আসা মানুষকে আঘাত করতে শুরু করেন ৪০ বছরের ওই ব্যক্তি।

এই ঘটনায় নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই নারী। আহত হয়েছেন একাধিক মানুষ যার মধ্যে একটি শিশু কন্যাও রয়েছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার কারেন ওয়েব অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজকে বলেছেন, এই বিষয়টা ‘স্পষ্ট’ যে কাওচির নিশানায় ছিলেন নারীরা।

হামলায় নিহত একমাত্র পুরুষ ছিলেন বছর তিরিশের নিরাপত্তারক্ষী ফারাজ তাহির যিনি অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন জেড ইয়ং (৪৭ বছর), পিকরিয়া দারচিয়া (৫৫ বছর) ডন সিঙ্গেলটন (২৫ বছর), অ্যাসলি গুড (৩৮ বছর) এবং ইসুয়্যান চেং (২০-র কোঠায় বলে অনুমান করা হচ্ছে)।

’ভিডিওগুলো থেকে বিষয়টা বেশ স্পষ্ট তাই না?’ বলেছেন কমিশনার কারেন ওয়েব।

’এটা আমার কাছে স্পষ্ট, গোয়েন্দাদের কাছেও স্পষ্ট... যে অপরাধী নারীদের দিকে মনোনিবেশ করেছিল এবং পুরুষদের এড়িয়ে গিয়েছিল।’

’আমরা জানি না অপরাধীর মনে কী কাজ করছিল এবং ঠিক সেই কারণেই ওই ব্যক্তিকে যারা চেনেন তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য গোয়েন্দারা এতটা সময় দিচ্ছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজও এবিসি নিউজকে বলেছেন ’নারীদের লক্ষ্য করে হামলার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক’।

অপরাধের সঙ্গে কাওচির ’মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে’ বলে জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। একজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে শনিবার নিহত হন ওই ব্যক্তি।

হামলাকারীর বাবা, অ্যান্ড্রু কাওচি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তার ছেলে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সম্প্রতি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন জোয়েল কাওচি।

অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে অ্যান্ড্রু কাওচি বলেন, ’আপনার কাছে সে একজন দানব। আমার কাছে সে ভীষণ ভাবে অসুস্থ ছেলে।’

জোয়েল কাওচির নিশানায় কেন নারীরা ছিলেন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তার বাবা বলেন,’ও একটা গার্লফ্রেন্ড চেয়েছিল। কিন্তু ওর কোন সামাজিক দক্ষতা ছিল না আর চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।’

যারা নিহত হয়েছে
হামলায় নিহতদের একজন অ্যাসলি গুডকে “সবদিক থেকেই অসামান্য মানুষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে তার পরিবার। তার নয় মাসের শিশুকন্যাকে রক্ষা করার চেষ্টা করার সময় মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাতে জখম হয়েছিলেন। জখম হয়েছিল তার শিশুকন্যাও।

ওই শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে কয়েক ঘণ্টার জরুরি অস্ত্রোপচারের পর, তার অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চেং ইজুয়ান চীনের বাসিন্দা ছিলেন। সিডনিতে পড়তে এসেছিলেন তিনি। এবিসি নিউজ জানিয়েছে পরিবারের সদস্যদের তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে এবং তারা অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন।

সিডনির বিত্তবান ব্যবসায়ী জন সিঙ্গেলটনের মেয়ে ডন সিঙ্গেলটন হামলার সময় কাজ করছিলেন। তার বাগদত্তা পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। শপিং মলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন, সেই সময় মিজ সিঙ্গেলটনের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তার বাগদত্তা।

অন্যদিকে, ফারাজ তাহির ছিলেন পাকিস্তানের একজন শরণার্থী যিনি অস্ট্রেলিয়ায় ’অল্প সময়ের জন্য’ ছিলেন। তার বিষয়ে ট্রিপল এম রেডিওকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার জাহিদ হাফিজ চৌধুরী তিরিশ বছরের এই যুবককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যার মৃত্যু হয়েছে অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে।

এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন জেড ইয়ং পেশায় স্থপতি ছিলেন। তার দু’জন সন্তানও রয়েছে। জেড ইয়ং-এর বস তাকে ’একজন সুন্দর, দয়ালু এবং উষ্ণ মানুষ’ হিসাবে স্মরণ করেছেন।

পিকরিয়া দারচিয়া-র লিঙ্কডিন প্রোফাইল থেকে জানা গিয়েছে তিনি জর্জিয়া থেকে আসা এক শিল্পী।

শনিবারের তাণ্ডবের সময় নয়জন মহিলা, দু'জন পুরুষ এবং নয় মাসের এক শিশুকন্যা-সহ মোট ১২ জন আহত হয়েছেন। চারজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এখনও আটজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে কেউ গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন কেউ বা স্থিতিশীল।

ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ স্ট্রাইক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার তদন্তের ফলাফল উপস্থাপন করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

তিনি ছয় নিহতদের স্মরণে বন্ডিতে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন।

কুইন্সল্যান্ডের বাসিন্দা ছিলেন মি. কাওচি। তার বিষয়ে পুলিশের জানা থাকলেও কুইন্সল্যান্ডে তাকে কখনও গ্রেফতার বা অভিযুক্ত করা হয়নি। কুইন্সল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে ১৭ বছর বয়সে প্রথম তার মানসিক সমস্যার বিষয়টি সামনে আসে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মি. পার্ক জানিয়েছেন এমন কোনও তথ্য নেই যা থেকে জানা যেতে পারে সাউথ ওয়েলসে মানসিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তবে তার মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।

সোমবার দেশজুড়ে পতাকা অর্ধনমিতভাবে ওড়ানো হয় এবং সিডনি অপেরা হাউসেও নিহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

নিহতদের স্মরণে শোকার্তরা বন্ডি জংশনে এসে জড়ো হয়েছেন। হামলায় নিহতদের জন্য ফুল, টেডি বিয়ার এবং কার্ড রেখে গিয়েছেন তারা।

একটি কার্ডে লেখা, ’ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কথা ভেবে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। আমি আপনাদের পাশে আছি।’

একটি ফুলের তোড়ার সঙ্গে পিন করা ছোট নোটে লেখা,’ইসুয়্যান চেং - আমি খুব দুঃখিত। আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারিনি। আমি দুঃখিত, তোমার হাতটা ধরতে পারিনি।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement