২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে কারাগার ভেঙ্গে পালাল বন্দিরা

মিয়ানমারে কারাগার ভেঙ্গে পালাল বন্দিরা - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে কারাগার ভেঙে বেশ কিছু বন্দী পালিয়েছে। পুলিশ তাদের খুঁজছে। কারাগারে প্রবেশ করা একটি ট্রাক ছিনতাই করে ও গেট ভেঙ্গে রোববার তারা পালায়।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যের হাপা এন কারাগারে বন্দী পালানোর এই ঘটনা ঘটে। খবর এএফপি’র।
কারা কর্মকর্তা খিন থেট বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “বন্দীরা একজন কারা কর্মকর্তাকে আহত করে। এর পর তারা ট্রাকে করে পালিয়ে যায়।”
তিনি এলাকাবাসীকে অপরিচিত বা রহস্যজনক কাউকে এলাকায় দেখলে পুলিশকে খবর দিতে বলেন।

প্রদেশটির পুলিশ প্রধান আং মায়াট বলেন, “৪১ জন বন্দী পালিয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ৩ জনকে পুনরায় আটক করা হয়েছে। অন্যদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।”

আরো পড়ুন :

সু চির সাফাই
রয়টার্স

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকদের কারাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তীব্রনিন্দা সত্ত্বেও রায়ের পে সাফাই গাইলেন মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দণিপূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক সম্মেলনে সু চি এ কথা বলেন। তবে একই সাথে সু চি বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি হয়ত আরো ভালোভাবে সামাল দেয়া যেত।
গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে দুই সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে আপনার অনুভূতি কী, ফোরাম মডারেটরের এমন প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‘সাংবাদিক হিসেবে তাদের কারাদ দেয়া হয়নি, তাদের কারাদ হয়েছে কারণ আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভেঙেছে।

সু চি বলেন, ‘ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও আইন ভেঙেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিচারের সাথে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরো বলেন, এই মামলাটি আইনের শাসনকে সমর্থন করে এবং অনেক সমালোচক প্রকৃতপে এই রায়টি পড়ে দেখেননি। রায়ের বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই আপিল করতে পারবেন এবং রায় ভুল হলে এর বিরুদ্ধে যৌক্তিক সত্যতা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রের গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়েকে (২৮) সাত বছরের কারাদ দেন ইয়াঙ্গুনের একটি আদালত। ওইদিনই এক বিবৃতিতে এই দুই সাংবাদিকের মুক্তি চান জাতিসঙ্ঘের নবনিযুক্ত মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।

যদিও সু চি মিয়ানমারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নন, তার পরও তাকে দেশটির যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার েেত্র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সঙ্কট ও পরবর্তীতে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বিচার প্রক্রিয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। এ সপ্তাহেই মিয়ানমারে ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর’ অভিযোগ করে জাতিসঙ্ঘ। সু চির সর্বশেষ বক্তব্যের পর এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘তিনি ভুল পথে হাঁটছেন’।

সংস্থার এশিয়া অঞ্চলবিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, তিনি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে সত্যিকার আইনের শাসন বলতে আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণকে সম্মান করা, যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা ও আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রাখা এবং সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখাকে বোঝায়। আর এর সবগুলো পরীাতে রয়টার্সের সাংবাদিকদের কারাদ ঘোষণার বিচার উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

এর আগে, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের সদ্য সাবেক প্রধান রাদ আল হুসেইন বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ অং সান সু চি। সংখ্যালঘু এই জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত অভিযান বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে না পারায় তার বহু আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের আদালত রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ওকে (২৮) সাত বছরের কারাদ দেন। ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক মহল দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেয়া এ রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। বিশ্বজুড়ে রয়টার্সের এ দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ার দাবি ওঠে। রোহিঙ্গা গ্রামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যাকা ও বর্বরতা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন এই দুই সাংবাদিক। 

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ওই দুই সাংবাদিককে ছেড়ে দিতে মিয়ানমারের কর্তৃপরে প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের মুক্তির বিষয়ে পেন্সের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী বলেন, সমালোচকরা কি এখানে আইনের কোনো ধরনের অপপ্রয়োগ খুঁজে পেয়েছেন? উন্মুক্ত আদালতে মামলাটি চলেছে, যারা যেতে চেয়েছে ও উপস্থিত হতে চেয়েছে তাদের সবার জন্য শুনানিও উন্মুক্ত ছিল। কারও যদি মনে হয়, সেখানে আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে তাহলে তাদেরকে তা দেখিয়ে দিতে বলবো আমি।
ডব্লিউইএফে করা সু চির এসব মন্তব্য বিষয়ে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখপাত্র জ হাতোয়ের তাৎণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রাখাইনের পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে সামলানো যেত
বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে সু চি আরো বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানকে অন্যভাবেও সামাল দেয়া যেত। তিনি বলেন, অবশ্যই কিছু উপায় ছিল। ঘটনার পরবর্তী বিষয়গুলো বিবেচনা করে রোহিঙ্গা সঙ্কট আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সু চি বলেন, ‘এখন ভাবলে মনে হয়, কিছু উপায় অবশ্যই ছিল যার মাধ্যমে পরিস্থিতিটা আরো ভালোভাবে সামাল দেয়া সম্ভব ছিল।’
হ্যানয়ের সম্মেলনে সু চি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা চাই, আমাদের হতে হবে পপাতহীন। কেবল নির্দিষ্ট কোনো পকে আইনের শাসনে সুরা দেয়ার কথা আমরা বলতে পারি না।’


আরো সংবাদ



premium cement