২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি

ঈদ আয়োজন
-

ছোটবেলায় বিপুল আনন্দ আর অন্য রকম ভালোলাগা নিয়ে উপস্থিত হতো পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক সপ্তাহ আগ থেকেই ঈদের আমেজ বিরাজ করত আমাদের মাঝে। ঈদের আগের রাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটি মনের গভীরে আনন্দের ঢেউ তুলত। ঈদের অনুষ্ঠানগুলোও দেখতে বেশ ভালো লাগত।
আমরা ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের। ঈদের শপিংয়ের জন্য বাবাকে খুব জোর দিতে হতো। বাবার আয়-রোজগার খুব বেশি ছিল না। ছোট বয়সে সেগুলো বুঝতাম না। শপিংয়ে এক ঈদে জামা পেলে জুতা পেতাম না, আবার জুতা পেলে জামা পেতাম না। বাবা যে কোনো একটা কিনে দিতেন। এ কারণে বেশ মন খারাপ হতো। পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েদের এত এত জামা-কাপড় আর শপিং দেখে আফসোসের সীমা থাকত না। কী আর করা! স্বল্প জিনিস নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। ঈদে যাই পেতাম, কাউকে দেখাতাম না। ভাবতাম অন্যদের দেখালে পুরনো হয়ে যাবে। তাই যতœ করে রেখে দিতাম।
ঈদের আগের দিন বাবার সাথে বাজারে যেতাম বাজার করতে। ঘুরে ঘুরে ঈদের বাজার করাতেও বিপুল আনন্দ পেতাম। বাবা টিউব মেহেদি কিনে দিতে চাইতেন না। তাই আমি আর ছোট আপা আগ থেকেই টাকা জমিয়ে রাখতাম মেহেদি কেনার জন্য।
ঈদের আগের রাতে চাঁদ দেখতে বেরোতাম। উঠানে দাঁড়িয়ে নারকেল গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকতাম চাঁদের অপেক্ষায়। এখন তো সবাই ফেসবুকে চাঁদের তালাশ করে। ছোটবেলায় চাঁদ দেখার মাঝে যে কী আনন্দ ছিল, এখনকার ছেলেমেয়েদের বোঝানো যাবে না।
চাঁদ দেখামাত্রই খুশির মিছিল বের হতো। আমিও শরিক হতাম তাতে। দ্রিম দ্রিম শব্দে বাজিও ফোটানো হতো।
রাতে আপা হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিতেন। গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে মেহেদির ঘ্রাণে ঘুম ভাঙত। মনে হতো এটা যেন ঈদের ঘ্রাণ! ঝটপট উঠে বাবার সাথে ফজরের নামাজ পড়তে যেতাম। তখনকার ঈদ শীতের সময় হতো। নামাজ পড়ে কনকনে শীতের মধ্যে সুগন্ধি সাবান মেখে গোসল করতাম। গোসল শেষে নতুন জামা পরে ঈদ সেলামি নেয়ার জন্য চলে যেতাম দাদার কাছে। দাদা আগে থেকেই কড়কড়ে নতুন বিশ টাকার নোট রেডি করে রাখতেন। যাওয়ামাত্রই মাথায় আদরের হাত বুলিয়ে দিতেন নোটটা। এরপর একে একে চাচা আর জেঠাদের থেকে আদায় করতাম ঈদ সেলামি। মায়ের হাতের রান্না করা ক্ষীর খেয়ে চলে যেতাম ঈদের নামাজ পড়তে।
ঈদগাহের আশপাশে খেলনা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসত পাড়ার ছেলেরা। পাড়ার সব ছেলেমেয়ে জড়ো হতো এখানটায়। বেশ হৈ হুল্লোড় হতো। বাজি ফুটানো হতো। আনন্দ-উৎসব হতো। চলত নামাজের আগ পর্যন্ত। নামাজ শেষে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে বসতাম।
বিকেলে আমরা কয়েকজন অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ঘুরতে যেতাম। সীমাহীন আনন্দ আর হৈ হুল্লোড়ে কেটে যেত বিকেলটা। সন্ধ্যা নামতেই ফিরে আসতাম বাড়ি। শৈশবের সেই আনন্দ এখন আর পাওয়া যায় না। এর পরও ঈদের সময় শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার আনন্দ আর ঘরে ফিরে সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দও কম না।
টঙ্গী, গাজীপুর


আরো সংবাদ



premium cement