০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শোনা যাচ্ছে না দোয়েলের সুমধুর গান

-

সুমধুর সুরের অধিকারী সাদা-কালো বর্ণের পাখিটির নাম দোয়েল। দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। একসময় গাছের ডালে ডালে দোয়েল পাখির সুমধুর গানে মাতোয়ারা থাকত গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি। দোয়েলের সুমধুর ডাকে গ্রামবাংলার মানুষের ঘুম ভাঙলেও এখন আর গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে আগের মতো দোয়েলের গান শোনা যায় না। বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গই এ পাখির মূল খাদ্য। দোয়েল দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ধান ধ্বংসকারী পোকা-মাকড় খেয়ে সাবাড় করে, শাকসবজির পোকাকে খেয়ে ধ্বংস করে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ফসল পাট বিনষ্টকারী বিচ্ছুকে ধ্বংস করে। এ পাখিটি এখন আর তেমন নেই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামবাংলার কৃষক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ দূষণ, ক্ষেত খামারে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
জানা মতে, কৃষকের ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকড় দোয়েলের প্রধান খাদ্য হওয়ায় পোকামাকড় দমন করতে একসময় কৃষকদের আলাদা কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে হতো না। এ কারণে দোয়েল গ্রামবাংলার মানুষের কাছে কৃষকবন্ধু পাখি হিসেবে পরিচিত। বাড়ির আশপাশে দেখা যেত এ পাখিটি। এরা ঘন বনজঙ্গল কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভালো বাসে না। তাই বসতবাড়ির আশপাশে গাছের কোটর, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গা, দেয়ালের ফাঁক ও সবজির মাচায় বাসা বাঁধে। গায়ক হিসেবে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পাখি দোয়েল।
রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর গ্রামের ৭৯ বছর বয়সী কৃষক খালেক সিকদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘প্রথম জীবনে আমি যখন কৃষিকাজ শুরু করি, তখন সার-ওষুধের নামও শুনিনি। ক্ষেতের পোকামাকড় মারার জন্য আমাদের কোনো কষ্ট করতে হয়নি। দোয়েল, বুলবুলি, শালিকসহ বিভিন্ন পাখি ক্ষেতের পোকামাকড় শিকারের জন্য গাছের ডালে ফাঁদ পেতে বসে থাকত। পোকামাকড় দেখলেই তারা খেয়ে ফেলত। ফসল বিনষ্টকারী এসব পোকামাকড় খেয়ে ধ্বংস করায় কৃষকের ফসলও ভালো হতো। এখন আর আগের মতো গাছপালা নেই, পাখিও নেই।’
রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আমির হোসেন হাজী বলেন, ছোটবেলায় বাবা-মা আমাদের বারবার পড়িয়ে মুখস্থ করে দিয়েছিল, আমাদের জাতীয় পাখির নাম দোয়েল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হাজার বছরের পরিচিত এ পাখি কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এ পাখির চি-চি শব্দ এখন আর কানে বাজে না বললেই চলে। বাড়ির আঙিনায়, নারিকেল গাছে, বাঁশঝাড়ে, ঘরের চালে যে পাখি সব সময় দেখা যেত, সে পাখির দেখা এখন আর মেলে না।


আরো সংবাদ



premium cement