২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিলেমিশে ফাইনাল খেলা দেখি

-

নিয়মিত চার সদস্যের সংসার আমাদের। অনিয়মিত হিসাব করলে সদস্য আরো বেশি। টিভির খেলাধুলা নিয়ে রৌদ্রের তেমন আগ্রহ নেই। সে চায় স্কুল মাঠ ধানক্ষেত আর সবুজ অরণ্যে দৌড়ে বেড়াতে। স্কুলের গণ্ডি পার করেছে পাঁচ-ছয় বছর আগে। রৌদ্র এখন সিএ পড়ে। অফিস থেকে ফিরে মায়ের পাশে বসে বলে,
মা আমায় আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দাও, আমি স্কুলে যেতে চাই। বিশাল মাঠে মনে আনন্দে দৌড়াতে চাই। মাঠে বসে টিফিন খেতে চাই, বন্ধুদের সাথে টিফিন নিয়ে মারামারি করতে চাই।
শুনে হাসি, জীবন আমাদের এমনিই। যখন যা করা দরকার, তখন তা ভালো লাগে না। আর যখন সে সময় চলে যায়, তখন আমরা স্মৃতির স্তম্ভে দাঁড়িয়ে বারবার অতীতে ফিরতে চাই। অতীতকে ভালোবাসতে চাই। জানি অতীতে ফেরা যায় না, অতীতের আনন্দকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। তবুও আমরা অতীতেই ফিরতে চাই।
অভ্রর খুব ব্যস্ততা জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে, ও নিজেই পড়ে। রৌদ্রের পেছনে যতটা সময় দিয়েছি, অভ্রর জন্য তার অর্ধেকও নয়। সময় দিতে হলে আমার লেখালেখি করতে পারতাম না। আর রৌদ্র অভ্রর প্রধান শিক্ষক নিজেই আমায় ডেকে নিয়ে বলেছেনÑ
‘বড় জনের সাথে তো লেগেই ছিলেন, ছোটকে ছেড়ে দিন ওর মতো করে।’
কথা তিনি ঠিকই বলেছেন। এখন বুঝি পরিবারের বড় সন্তান আর ছোট সন্তানের লালন-পালনে আমাদের অনেক কিছু এলোমেলো থাকে, ভুল থাকে। ওদের নিজের কাজ নিজেকেই করতে শিখাতে হবে। রৌদ্রকে এতটাই আগলে রেখেছি এখন মনে হলে নিজেই হাসি।
অভ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্পি হলেও আরো অনেকের সাথে ওর বেশ বন্ধুত্ব। জেএসসি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ওরা খেলা নিয়ে মাতামাতি খুব একটা করতে পারে না। ওর বন্ধু অর্পি, নির্ঝরা, তম্মি, অর্পা, মৌমিতা, লামিয়া, সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। এবার আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে, এতে ওদের তেমন মন খারাপ হয়নি। কিন্তু আক্ষেপ করে কিছুটা।
আহসান রৌদ্র অভ্রর বাবা, সে ব্রাজিলের সাপোর্টার। আর আমি দল ঠিক করি খেলা শুরুর আগে। অর্থাৎ, খেলা এনজয় করি। গোল হলে যখন আমরা হাততালি দিই, রৌদ্র দৌড়ে আসে, মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে আবার চলে যায়। টিভি রুমে বসে বসে খেলা দেখা ওর সইবে না। এসি রুম আর শুয়ে শুয়ে দেখার ব্যবস্থা হলে দেখত। আমি ওকে আলসিয়া বলে ডাকি। অভ্র আবার এতে খুব মজা পায়। দুইজনের বয়সের ব্যবধান সাত-আট হলেও মনে হয় জোড়ের কবুতর। ওদের ভাব দেখে ভাবি, আসলেই একটা পরিবারে বোনের জন্য বোন আর ভাইয়ের জন্যে ভাইয়ের কত প্রয়োজন।
কোয়ার্টার ফাইনালের চারটি খেলায় যে দলকেই সাপোর্ট করেছি তারাই জিতেছে। কিন্তু এখন কাকে ছেড়ে কার পক্ষে থাকব তাই ভাবছি। অভ্র বলেÑ
আর্জেন্টিনা যখন নেই, কে জিতল আর কে হারলো আমার কিচ্ছু নেই খেলা কিন্তু দেখব। বিষয় হলো চলছে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা, পড়ব নাকি খেলা দেখব। সন্ধ্যায় হলে দেখা যায়, রাত জেগে খেলা দেখা সম্ভব নয়।
কেউ খেলা না দেখলে আমাকে একাই দেখতে হয়। তখন খুব একটা মজা পাই না। খেলা দেখতে মজা পাই বাবা আর আমার ছোট ভাই অনয়ের সাথে। আহা! সে কী উত্তেজনা। অনয়ের মন খারাপ, সে ও আর্জেন্টিনার পক্ষে ছিল। অনয় অনেক কষ্টে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট দেয়Ñ
‘বিষয়টা কী? যার পক্ষই নেই, সেই হেরে যায়।’
ব্যক্তিগতভাবে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল হেরে যাওয়ায় খুশি হয়েছি। এই দুই দলকে নিয়ে দেশে যা হচ্ছিল, এবার থামল। আরে বাপু খেলা তো খেলাই। আমি বলিÑ
‘খেলা নিয়ে মারামারি
এগুলো খুবই বাড়াবাড়ি,
হার জিত থাকবেই
তাই নিয়ে লড়বেই।’
আহসানের ব্রাজিল হেরে যাওয়ায় তার মন খারাপ। এ জন্যে অভ্র আর আমি ক্ষেপাতেও পারি। আবার খেলা দেখার জন্য তাকে ডেকেও নেয়। আম কেটে খাওয়াই, চা করে দিই। আহসান সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে ৯টায় অফিস যায়। যেদিন খেলা দেখে, সেদিন অফিস থেকে দ্রুত ফেরে। অভ্র দেখেই বলেÑ
‘এসেছেন আমাদের সরকারি কর্মচারী’।
এ সুযোগে আমি গানটার কয়েক লাইন শুনিয়ে দিই।
সামনের খেলাগুলোতে দল বাছাই করা কষ্টকর হবে। তবে চাই ৯০+৩০ = ১২০ মিনিটের খেলা হোক। টাইব্রেকারে যে জিতবে তাকেই অভিনন্দন জানাব। কিন্তু পরিচ্ছন্ন খেলা দেখতেই ভালো লাগে। ফুটবল খেলায় ধাক্কাধাক্কি টানাটানি হয় অনেক। যখন সবাই মিলে খেলা দেখি বেশ এনজয় করি। আগে খেলার অনেক কিছুই বুঝতাম না, এখন বুঝি।
এখন অপেক্ষায় আছি ফাইনাল খেলা দেখার। যে দল কাপ পাবে তাদের অভিনন্দন, যিনি গোল্ডেন সু পাবেন তাকেও অভিনন্দন। খেলা চলাকালীন সময় রেফারির দৌড় দেখলেই মনে পড়ে আজ থেকে ২৫-২৬ বছর আগের কথা, বাবার সেই সময়ের কথা।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার কামালপুর মো: হাসেন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমি। বছরের এই সময় স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা হতো। স্কুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা খেলা দেখতাম। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, রেফারির দায়িত্ব পালন করতেন। খেলার সময় বাবা ঢাকা থেকে গ্রামে যেতেন। কত আনন্দের ছিল সেদিনগুলো। রৌদ্র ফিরে যেতে চায় স্কুলে আমিও চাই, তার মানে স্কুলজীবনটাই জীবনের সেরা সময়। অতীতের স্মৃতিতে ডুবে গিয়ে সবাই মিলেমিশে খেলা দেখব এনজয় করব। খেলাকে খেলাই ভাববো, খেলা কিন্তু জীবন নয়। তবে জীবনকে স্বচ্ছ করে তোলে খেলা।


আরো সংবাদ



premium cement