তবে কি অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে ব্রিটেন? ইঙ্গিত অন্তত তেমনটাই। ব্রিটিশ রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র উত্তরসূরি হতে চলেছেন সাজিদ জাভেদ। ব্রেক্সিট নিয়ে ঘরে-বাইরে যখন উত্তাল ব্রিটেনের রাজনীতি, তখন সূত্রের খবর একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে চলেছেন মে। সাজিদের এই উত্তরণকে স্বাগত জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। ব্রিটেনের সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ সালের অক্টোবরে দু’দিনের সফরে কলকাতা এসেছিলেন সাজিদ।
সরকারের পক্ষ থেকে শনিবার এক বেনজির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সাজিদ। দেশের তরুণ প্রজন্ম যাতে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য নগদ ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। এর আগে ওষুধ হিসেবে গাঁজার ব্যবহারের যে নীতি দেশে চালু ছিল, তা বৃহস্পতিবার বদলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে নীতি দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছিলেন টেরিজা মে। পাশাপাশি, কেন পাকিস্তান বংশোদ্ভূত তরুণরা গণধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে, সে বিষয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সাজিদ। এবং লেবার পার্টির এমপি সারা চ্যাম্পিয়নকে সমর্থন করে সংবেদনশীল বিষয়টি হাতে নিয়েছেন তিনি।
সাজিদই যে টেরিজার উত্তরসূরি, তার আরো একটি ইঙ্গিত মিলেছিল সোমবার তার নেয়া সিদ্ধান্তে। আইএস সদস্য অ্যালেকজান্ডার কোটে (৩৪) এবং এল সফি এলশিককে (২৯) আমেরিকায় প্রত্যর্পিত করার সিদ্ধান্ত নেন স্বরাষ্ট্রসচিব। যেখানে তাদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এহেন সিদ্ধান্তের পরেই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমলোচনার মুখে পড়েন সাজিদ। স্বরাষ্ট্রসচিব ‘নৈতিকতা হারিয়েছেন’ বলে তোপ দাগে তারা। তবে, দেরিতে হলেও এ বিষয়ে জনগণকে পাশে পেয়েছেন সাজিদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যেভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, তাতে দেশবাসীকে প্রতিরক্ষাসচিব গ্যাভিন উইলিয়ামসনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সাজিদ।
কনজারভেটিভ দলের এক সদস্য দ্য টাইমস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘সাজিদ খুব সাবধানী কিন্তু সাহসী কিছু করার ক্ষমতা রাখে। যেমন সারা চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে তার মন্তব্য। কিন্তু, উনি কী ভাবছেন, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।’ তিনি আরো বলেছেন, ১৯৬৯ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারে পাঁচ ভাই-বোনের পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন সাজিদ। পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত তার বাবা ছিলেন বাসচালক। ১৯৬৪ সালে পকেটে মাত্র এক পাউন্ড নিয়ে পাকিস্তান থেকে ব্রিটেন চলে আসেন তিনি।
ব্রিটেনে এসে সাজিদের মা একটি দর্জির দোকান খোলেন। ব্রিস্টলে বেড়ে ওঠা সাজিদ এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন। সেখানে লউরা ও তিন বন্ধু রবার্ট হ্যালফন, ডেভিড ব্যুরো ও টিম মন্টগোমেরির সঙ্গে দেখা হয়। রবার্ট ও ডেভিড দু’জনেই এমপি, যেখানে টিম ‘কনজারভেটিভ হোম’ ওয়েবসাইটের প্রাক্তন সম্পাদক। পরে লউরাকে বিয়ে করেন সাজিদ।
একবার সাজিদ বলেছিলেন, ‘কনজারভেটিভ হওয়ার আগে আমি থ্যাচারপন্থী ছিলাম।’ আর তখনই লড়াইয়ে শামিল হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সাজিদের বাড়িতেও থ্যাচারের একটি ছবি রয়েছে। আর্থিক সুরক্ষার স্বার্থে থ্যাচারের নেওয়া মুক্ত বাণিজ্যে সিদ্ধান্তের মতোই বেনজির যাত্রায় শামিল হয়েছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক সপ্তাহে তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো সেই বার্তাই বহন করছে। এমনকী সাজিদের ঘনিষ্ঠ মহলও স্বীকার করেছে, রাজনৈতিকভাবে তাকে দমানো মুশকিল। ব্রুমসগ্রোভের আটবারের এমপি হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন তিনি। এমনকী, জোট সরকারের শুরু থেকেই টেরিজার সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল সাজিদের। লিব ডেম মন্ত্রিসভার প্রাক্তন মন্ত্রী ডেভিদ লস তার বইয়ে লিখেছেন, টেরিজাকে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন সাজিদ যে, তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন।
তবে, টেরিজার সঙ্গে এই দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কে কোনো ক্ষতি হয়নি সাজিদের। সরকারের এক পদস্থ কর্মকর্তার কথায়, ‘সাজিদ উচ্চপদেই রয়েছেন। উনি কঠোর পরিশ্রম করেন। এবং আমি জানি, কতবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উনি মতানৈক্যে জড়িয়েছেন। আর নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে ‘টিয়ার ২’ অভিবাসন ও গাঁজা ইস্যুতে জয়ী হয়েছেন তিনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী মে সাজিদকে বাধা দিয়েছেন।’
আরো পড়ুন :
ইইউর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতে মেকে ট্রাম্পের পরামর্শ
বিবিসি
ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা না করে সংস্থাটির বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতে মামলা ঠুকে দিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফর করার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গতকাল বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য সফরকালে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি থেরেসা মেকে একটি পরামর্শ দিয়েছেন; কিন্তু তার (থেরেসা মে) কাছে এটিকে খুবই বর্বর ও নির্বোধ পরামর্শ বলে মনে হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে কি পরামর্শ দিয়েছিলেনÑ বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে থেরেসা মে বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আমাকে বলেছিলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা না করে আমার উচিত সংস্থাটির বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতে মামলা ঠুটে দেয়া।’ ট্রাম্পের পরামর্শের জবাবে ব্রেক্সিট নিয়ে নিজের পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সেটাতে সমর্থন দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান থেরেসা মে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্য অন্য দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে, মানুষের মুক্তভাবে ঘোরাফেরা বন্ধ করতে পারবে এবং নিজ দেশের উপর ইইউ আদালতের এখতিয়ার বাতিল করতে পারবে। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য কিভাবে চলবে সে বিষয়ে দেশটির ক্যাবিনেট একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার এই চুক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। অবশ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিশ্চিতের দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস সম্প্রতি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর তিনি মন্তব্য করেন, থেরেসা মে যেভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন তাতে ইইউ আরো বেশি বেশি আবদার করার সুযোগ পাবে।
মে খুব সহজেই ইইউকে অনেক বেশি ছাড় দিয়ে দিচ্ছেন। ২০১৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখা ডেভিড ডেভিসের পদত্যাগের পরপরই পদত্যাগ করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনিও ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে থেরেসা মের পরিকল্পনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, থেরেসা মে সরকারের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে আদতে ব্রেক্সিট স্বপ্নের মৃত্যু হতে যাচ্ছে। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উপনিবেশ হয়ে উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে থেরেসা মের পরিকল্পনার বিষয়ে খুব একটা প্রশংসাসূচক কিছু বলেননি। ট্রাম্প বলেন, ‘মে ও তার মন্ত্রিসভার প্রস্তাবে মনে হচ্ছে, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেই বাণিজ্য করতে যাচ্ছি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্তরাজ্যের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। কিভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমি থেরেসাকে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা