২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নবীগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

নবীগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক - নয়া দিগন্ত

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরে দু’পক্ষের তিন ঘণ্টাব্যাপী ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। উভয়পক্ষের ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায় এ ঘটন ঘটে।

সংঘর্ষের সময় কুর্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদের মালিকানাধীন মার্কেট ‘রাজা কমপ্লেক্স’ এবং পৌর কাউন্সিলর আনমনু গ্রামের ফয়জুর রহমান নানু মিয়ার দোকানসহ বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদ জানান, বন্ধুদের ছুরিকাঘাতে নিহত সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিনকে প্রথমে রাজা কমপ্লেক্সে মারধর করা হয়। ওই ঘটনার সাথে কারা জড়িত ছিল তা চিহ্নিত করতে মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নেয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা মার্কেটে আসেন। এ সময় তিনি আজিজ হাবিব উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি মিটিংয়ে ছিলেন। পরে তিনি মার্কেটে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিনের জানাজা নামাজে যান। জানাজা শুরুর মুহূর্তে তিনি মোবাইল ফোনে খবর পান যে আনমনু গ্রামের লোকজন তার মালিকানাধীন রাজা কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়েছে। তারা মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ডিভাইসটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক জানাজা নামাজে উপস্থিত লোকজনদের অবহিত করেন।

সৈয়দ খালেদের ধারণা, মার্কেটে সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিনের ওপর যারা হামলা করেছিল তারাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এ কারণে পুলিশকে সিসি ক্যামেরা দেখানোর কারণে সৈয়দ খালেদের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে এবং সিসি ক্যামেরার ডিভাইসটি নিয়ে যেতেই মার্কেটে হামলা চালিয়েছে তারা। এ সময় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিহত করে।

অপর দিকে ফয়জুর রহমান নানু জানান, রাস্তার পাশে ফুটপাতে লোকজন দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এ জন্য সৈয়দ খালেদ তার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ করেন। তাদের উচ্ছেদের দাবি জানান। অথচ তার মার্কেটের দোকানীদের ব্যবসার সাথে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কোনো মিল নেই। অনেক দোকান তোলাও হয়েছে। ফুটপাতের দোকানীরা ফলমুল, সবজির ব্যবসা করে।

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গতকাল (বুধবার) সৈয়দ খালেদ ওই সব দোকান থেকে আমি চাঁদাবাজি করি বলে বিভিন্ন ধরনের কথা বলাবলি করেন। আমি এ বিষয়টি জানতে পেরে জিজ্ঞাস করার জন্য রাজা কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে গিয়ে অনেক লোকজন পাই। তাদের জানতে চাইলে তারা চেয়ারম্যান মার্কেটে নেই বলে জানায়। এ সময় আমি তাদেরকে বলি, আমাকে নিয়ে চেয়ারম্যান যেসব কথা বলেছেন তা তার নিকট আশা করিনি। এ সময় তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাদের সম্প্রদায় তুলে আমাকে গালি দেয়। তারা আমার ওপর হামলা চালায় ও মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করে।’

স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাগুলোর খবর পেয়ে কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের লোকজন ও আনমনু গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। একপক্ষ অবস্থান নেয় রাজা কমপ্লেক্সে এলাকায়, অপরপক্ষ আনমনু এলাকায়। সংঘর্ষের ভয়বহতায় আনমনু ও এনাতাবাদের পক্ষ নেয় কয়েকটি এলাকা। দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। ভাঙচুর করা হয় রাজা কমপ্লেক্সসহ ২০টি দোকান। অগ্নি সংযোগ করা হয় একটি মোটরসাইকেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমপ দাশ, সার্কেল এএসপি আবুল খায়ের, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাহিন দেলোয়ার, ওসি মাসুক আলী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়াম্যান এমদাদুর রহমান মুকুল, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান সেফু, জেলা পরিষদের সদস্য শেখ সফিকুজ্জামান শিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ মিলু, ইউপি চেয়ারম্যান নির্মেলেন্দু দাশ রানা, নোমান আহমদ, সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য আ: মালিক, সাবেক প্যানেল মেয়র এ টি এম সালামসহ সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সংঘর্ষের জড়িত ১৪ জনকে পুলিশ আটক করেছে। আটকরা হলেন আনমনু গ্রামের তৌহিদ মিয়া (৩৫), অন্তর মিয়া (২৬), এনাতাবাদ গ্রামের মো: নাছির মিয়া (২৫), আবু জাহেদ (৩৫), ফজল মিয়া (৩৮), ছনু মিয়া (৩৫), জুবেদ মিয়া (২৫), বিলাল মিয়া (২০), রাজু মিয়া (২৫), আলী মো: দিলদার (২৬), খালেদ মিয়া (২৫), ছোলাইমান মিয়া (৩৫), মঈন উদ্দিন (২০) ও মমিন উদ্দিন (২০)।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাসুক আলী বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৫ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় ওসি (তদন্ত) গোলাম মুর্শিদ, এসআই পরিমলসহ সাতজন আহত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয়পক্ষের ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement