২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিলুপ্তির পথে আখের গুড়

- ছবি : নয়া দিগন্ত

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে আখের গুড়। এক সময় আখের গুড়ের সুনাম ছিল দেশের সর্বত্র। কিন্তু বর্তমানে সেই সুনাম আর নেই। শায়েস্তাগঞ্জের খোয়াই নদীর বিস্তীর্ণ চরে উৎপাদিত বিশেষ ধরনের আখের রস আগুনে জ্বাল দেয়ার পর ধীরে ধীরে তৈরি হয় আখের এ আঠালো গুড়। প্রতিনিয়ত আখের চাষ ও খাদ্য তালিকা থেকে গুড়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন শায়েস্তাগঞ্জের সর্বত্র আখের গুড় তৈরির চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে এই পেশার সাথে জড়িত শত শত ব্যক্তি এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। তবে এর মধ্যে নদীর নব্যতা ও বালু উত্তোলনকারীদের দায়ী করেছেন নদীর চরের আখ চাষীরা।

শায়েস্তাগঞ্জের পাশের দক্ষিণ চরহামুয়া এলাকার আখ চাষি সবুজ মিয়া বলেন, ‘আগে নদীর গভীরতা বেশি ছিল না। যে কারণে নদীর চরে জোয়ারের পানি আসতো এবং এর সাথে আশা উর্বর পলি মাটিতে ভালো আখের ফলন হতো। এখন নদী গর্ভ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে চরের ফসলি জমি নদীর বুকে ভেঙ্গে পড়ছে। নদী অতিরিক্ত খননের ফলে জোয়ারের পানি আর উপরে আসে না। এতে ফসল ও ভালো হয় না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পাশের লস্করপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরহামুয়া, হামুয়া, করিমপুর, রাজার বাজার, খেতামারা ও মুখিপুর গ্রামে কয়েকটি অংশে তৈরি করা হয় মুখরোচক এই লালি গুড়। শীতকালে চালের গুড়া দিয়ে তৈরি যেকোনো পিঠার সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় এই লালি গুড়। অন্যদিকে, আখের রস দিয়ে তৈরি হয় পায়েস। যার বর্তমান চাহিদা ও ব্যাপক।

উপজেলার পার্শবর্তী কুটিরগাও এলাকায় খোয়াই নদীর চর এলাকায় সরেজমিনে গেলে চোখে পড়ে আখের রস থেকে তৈরি গুড় ও (লালি গুড়) দেশীয় পদ্ধতি। দেখা যায় নদীর চরে খালি জায়গায় লোহার ঘানি বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আখের রস। উৎপাদন করার প্রক্রিয়ায় ঘানি টানতে ব্যবহার করা হচ্ছে মহিষ। তবে অনেকাংশে আবার লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মহিষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন। প্রথমে উৎপাদিত আখ সংগ্রহ করে তা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রস বের করে তা একটি পাত্রে ছেঁকে নেয়া হয়। পরে তা চুল্লিতে আগুন দিয়ে জ্বাল দেয়ার পরে আস্তে আস্তে রসের রঙ লালছে হয় এবং রসে টানটান ভাব দেখা যায়। এরপর উত্তপ্ত রস শীতল করার মাধ্যমে গুড় পাওয়া যায়। এই রসকে গুড় না বানিয়ে চিনিও বানানো যায়। তবে চিনির চেয়ে গুড় মিষ্টি কম হলেও পুষ্টিগুণে এগিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে আলাপকালে শায়েস্তাগঞ্জের আখচাষি কৃষক সমসু মিয়া বলেন, ‘এখন আগের মতো অহরহ নদীর চরে আখ চাষ হয় না। যে পরিমাণে হয় তা দিয়ে হিসেব করলে বেশি একটা লাভ পাওয়া যায় না।’


আরো সংবাদ



premium cement