২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


৭ বছর পর শিকল মুক্ত হলেন শিল্পী বেগম

- ছবি : নয়া দিগন্ত

কুলাউড়ার পৃথিমপাশার শিল্পী বেগম (৪০) দীর্ঘ সাত বছর আগে হঠাৎ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি নববধূ। মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার পর স্বামীর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শিল্পী সংসারে একা হয়ে পড়েন। ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে।

সেখানে তার মানসিক সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যেতেন, এদিক-সেদিক চলে যেতেন। পরে উপায়ান্তর না দেখে তাকে শিকল বন্দী করে ঘরে আটকে রাখা হতো। সে অবস্থায় তাকে পরিচর্যা করা হতো। খাইয়ে পরিয়ে দেয়া হতো। শিকল খুললেই শিল্পী উধাও হয়ে যেতো বিধায় তারা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দী রাখতেন। এভাবেই অন্ধকার ঘরে লোহার শিকলে বন্দী হিসেবে শিল্পীর জীবনের দীর্ঘ সাতটি বছর কাটে।

এ সময় বেশ কয়েকবার শিল্পীকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন মিলে নানান জনের পরামর্শে দেখান ভণ্ড মোল্লা, কবিরাজ, সাধু সন্ন্যাসী কিন্তু এদের অপচিকিৎসা আর প্রতারণার ফাঁদে পরে তিনি সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা তার অবস্থা আরো দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এসব ভণ্ডরা তাবিজ, তেল পড়া আর যাদুর ছাড়ানোর নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

অত:পর দুই মাস আগে সিলেট থেকে সুস্থ হওয়া একজন মানসিক রোগীর কাছ থেকে শিল্পীর অভিভাবকরা জানতে পারেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনামের কথা। পরে তারা তাকে (শিল্পী) সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনামের কুলাউড়ার সাপ্তাহিক চেম্বার ‘ব্রেইন কেয়ার’-এ শিকল বন্দী নিয়ে আসেন। শুরুতে সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনামের তত্ত্বাবধানে শিল্পীর ‘মানসিক রোগের’ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা দেয়া হয়।

চিকিৎসা শুরুর মাত্র তিন দিনের মাথায় শিল্পীর হাতে পায়ের শিকল খুলে দেন তার অভিভাবকরা। তিনি সুস্থ হতে থাকেন। এ সময় ডাক্তারের চেম্বারে কথা হয় শিল্পী ও তার মার সাথে প্রতিবেদকের। তারা সাইকিয়াট্রিস্ট-এর প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শিল্পীর মা নজিরূন বেগম জানান, ‘শুধুমাত্র অজ্ঞতার জন্যে এতদিন তাদের মেয়ের সু-চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা তারা জানতেন না। গত ৭ বছরে ভণ্ড কবিরাজ, ভণ্ড মোল্লা সন্ন্যাসীর পিছনে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।

এ ব্যাপারে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘শিল্পীর গুরুতর ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ ‘সিজোফ্রেনিয়’-তে আক্রান্ত ছিলেন। অসচেতনতায় তাকে দীর্ঘ দিন শিকল বন্দী করে রাখার বিষয়টি দু:খজনক।’

তিনি আরো বলেন, ‘সিজোফ্রেনিয়া রোগ ভালো হয়। চিকিৎসা, ওষুধও এখন সহজ লভ্য। প্রয়োজন কেবল সচেতনতা। মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা কম। সচেতনতায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।’


আরো সংবাদ



premium cement