২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি

১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেকশনে সাপ, বিছা, পোকামাকড়ের মধ্যেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করি। সপ্তাহে যে তলব (সপ্তাহের মজুরি) পাই তা দিয়ে সংসার চলে না।’ কথাগুলো বলছিলেন কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক লক্ষ্মী রবিদাস ও লক্ষ্মী মনি সিং।

শমশের নগর কানিহাটি চা বাগানের নারী শ্রমিক আলোমনি মৃধা ও মিনা রায় বলেন, ‘আমরা চা-শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরি পেয়ে কিভাবে সংসার চালাব? বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে তাতে এই টাকা দিয়া সংসার চলে না। এক একটা ঘরে বাচ্চা-কাচ্ছা নিয়ে পাঁচজন, সাতজন থাকি। তাদের খরচ কিভাবে চলবে?’

জানা যায়, প্রতি দু’বছর পর পর চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার চুক্তি হওয়ার কথা। বর্তমানে মজুরি চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস উত্তীর্ণ হওয়ার পথে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আগের চুক্তি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। চুক্তিতে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়। এরপর আর মজুরি বাড়ার নতুন চুক্তি হয়নি।

নতুন করে মজুরি চুক্তি না হওয়ায় চা-শ্রমিকরা সর্ব্বোচ্চ ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এতো অল্প মজুরিতে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের সংসার চালাতে হিমিশিম খাচ্ছে শ্রমিকেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১৮ টাকা বাড়িয়ে সর্ব্বোচ্চ মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের মজুরি এ-ক্লাস বাগানে ১২০ টাকা, বি-ক্লাস বাগানে ১১৮ টাকা ও সি-ক্লাস বাগানে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে চা-শ্রমিকদের মজুরি ২০০৮ সালে ৩২ টাকা, ২০০৯ সালে ৪৮ টাকা। আর ২০১৭ সালে হয় ১০২ টাকা এবং সবশেষ ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ১২০ টাকা করা হয়।

চা শ্রমিক নেতা সিতারাম বীন বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকি নিয়েও চা বাগানে আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনো নতুন চুক্তি করা হয়নি।’

তিনি আরো জানান, চা বাগানে মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহে কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর সাড়ে চার থেকে ৫৫০ টাকা থাকে। এই টাকায় শ্রমিকদের এক বেলা খাবার চালানো দায়।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ১৬৬ চা বাগানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকেরা একত্র হয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। এখন চা বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।

মালিকপক্ষের সাথে চা-শ্রমিকদের আলোচনা প্রায় ১৯ মাস ধরে চলছে।
কিন্তু শ্রমিকদের নতুন কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে আপনারা তাদের সাথে কথা বলেছেন কিনা? জানতে চাইলে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।

১৯ মাস দেরির বিষয়ে শ্রম অধিদফতর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নাহিদুল ইসলাম জানান, আলোচনায় থাকা অবস্থায় চা শ্রমিকেরা আন্দোলনে গেছে। মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় আছে। অফিসিয়ালি আলোচনা থেকে কেউ বেরিয়ে যায়নি। আলোচনায় থাকা অবস্থায় ধর্মঘট শ্রম আইনের পরিপন্থি।

তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে আসবেন বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। মহাপরিচালক প্রথমে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বসবেন। পরে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বাগান মালিকদের সাথে কথা বলবেন। এখন যেহেতু ধর্মঘটের কারণে দু’পক্ষের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাই শুরুতেই দু’পক্ষকে নিয়ে একসাথে বসে সমস্যার সমাধান কঠিন হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement