৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আল্লাহর নামে দান করা ডিম নিলামে, দাম উঠল সোয়া দুই লাখ

নিলামে তোলা সেই ডিম - ছবি - বিবিসি

এটা স্বর্ণের ডিম নয়, সাধারণ একটা মুরগির ডিম। যা নিলামে চড়ানো হয়েছিল। আর তার দাম উঠেছে সোয়া দুই লাখ ভারতীয় রুপি (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ টাকা)।

এই ঘটনা ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের।

মাত্র ছয় রুপির ডিমটার এত দাম কী করে হলো? কেনই বা নিলামে চড়ানো হয়েছিল একটা ডিম?

কাহিনীর শুরু সোপোর জেলার মাল মাপানপুরা গ্রামের একটি মসজিদ থেকে।

মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা নগদ অর্থ আর বিভিন্ন সামগ্রী দান হিসেবে সংগ্রহ করবে।

কেউ নগদ অর্থ দিয়েছেন, কেউ থালা বাসন, মুরগি বা চাল দান করেছেন।

মসজিদ কমিটির এক সদস্য নাসির আহমেদ বলছিলেন, ‘আমরা দান সংগ্রহ করছিলাম। তার মধ্যেই একটা ছোট বাড়ি থেকে এক নারী মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসেন। আমার কাছে এসে তিনি একটা ডিম দিয়ে বলেন, তার দানটা যেন আমি গ্রহণ করি।’

তিনি বলছিলেন, ওই নারী খুবই গরিব। একটা ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরে একমাত্র ছেলের সাথে বাস করেন।

ডিম নিয়ে কী করা হবে?
‘অন্যান্য জিনিসগুলো তো বিক্রি করার জন্য দেয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠল ওই ডিমটা নিয়ে কী করা যায়!’ বলছিলেন নাসির আহমেদ।

তিনি বলছিলেন, “ভারতীয় ছয় রুপি দামের একটা সাধারণ ডিম ওটা। কিন্তু অত্যন্ত গরিব ওই নারী যে আবেগ নিয়ে খোদার নামে দান করেছিলেন, সেটাই ওই ডিমটাকে ‘অমূল্য’ করে তুলেছে।”

কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে ডিমটাকে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিন দিন পরে ডিমটা ফেরত নিয়ে নেয়া হবে, এরকম সিদ্ধান্তও জানানো হয়।

ওই নারীর পরিচয় প্রকাশ না করেই নাসির আহমেদ ডিমটাকে নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই ১০ রুপি নিয়ে নিলামে প্রথম দর হাঁকেন।

প্রথমেই ডিমটার দাম উঠেছিল ১০ হাজার ভারতীয় টাকা। তারপরে দর বাড়ানো হয়।

প্রথমেই দর ১০ হাজার ভারতীয় টাকা
গ্রামের সাবেক পঞ্চায়েত প্রধান তারিক আহমেদ বলছেন, “আড়াই শ’ মানুষের এই গ্রামে বড় জামাতের মসজিদ ছিল না। সেজন্যই একটা বড় মসজিদ বানানোর কাজ শুরু করেছিলাম আমরা।। কিন্তু তহবিলের অভাবে ছাদ পর্যন্ত বানিয়ে আর কাজ এগোনো যায়নি।”

তিনি বলেন, তারা ভাবতেও পারেননি যে একটা ডিম নিলামে তুলে সোয়া দুই লাখ রুপি তারা সংগ্রহ করতে পারবেন।

মসজিদের কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে ডিমটা তিন দিন পর্যন্ত নিলাম করা হবে।

নাসির আহমেদ বলছিলেন, ‘প্রথম দুই দিনে ১০, ২০, ৩০ আর ৫০ হাজার ভারতীয় টাকা পর্যন্তও দর উঠেছিল। প্রতিবারই ডিমটা ফেরত নিয়ে নেয়া হতো।’

এরপর শেষ দিনে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিলাম চলবে, এরকম একটা ঘোষণা করা হয়।

ফ্রেমে বাঁধানো থাকবে ডিম
সবচেয়ে বেশি দর যিনি দিতে পারবেন শেষ পর্যন্ত, তার হাতেই ডিমটা দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

শেষ দিনের নিলামে হাজির ছিলেন সোপোরের ব্যবসায়ী দানিশ হামিদ।

নিলামে দুবার হাঁক দেয়া হয়েছিল ৫৪ হাজার ভারতীয় টাকার। একেবারে শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হামিদ দর হাঁকেন ‘৭০ হাজার’।

এভাবেই মোট দুই লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি জমা হয়।

নাসির আহমেদ বলছিলেন যে এটা এখন আর একটা সাধারণ ডিম নয়। প্রতীকী হয়ে উঠেছে ওই ডিমটা।

দানিশ হামিদ বলছিলেন, ‘আমি এখন ওই ডিমটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য একটা ভালো ফ্রেম বানাচ্ছি। সামলিয়ে রাখতে হবে এটা।’

তিনি চাচ্ছেন, এই ডিমের ব্যাপারটা যেন তার পরিবার, অথবা যারাই দেখতে আসবেন, তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে ওঠে যে কিভাবে এক নারী খোদার জন্য দামের কথা না ভেবেই একটা ডিম দান করে দিয়েছিলেন।

‘আমার মনে হয় সত্যিকারের অনুভূতির কোনও মূল্য হয় না। আর তাই এই ডিমটা আমার বাড়িতে সবসময়ে সাজিয়ে রেখে দেয়া হবে, যাতে ভেঙে না যায়,’ বলছিলেন দানিশ হামিদ।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement