২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পশ্চিমের চাপ এবং চীন-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগে দিল্লি

নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, মস্কোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার ফাঁস ততই চেপে বসবে। সেই সাথে রাশিয়ার চীন-নির্ভরতাও বাড়বে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারসাম্যের কূটনীতি আপাতত বহাল রাখলেও ভারতের পররাষ্ট্র দফতর মাথায় রাখছে এই হিসেবও। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বার্তা দেয়াও জরুরি, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক, এটা ভারত চায়।

সোমবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন সংক্রান্ত এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হয়েছেন ভারতীয় স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর প্রতীক মাথুর। তিনি বলেন, 'সংঘাতের ফলে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, দুর্দশার অন্ত নেই। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু এবং মহিলারা মহাবিপদে। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন।' মাথুর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মনে করিয়েছেন, ভারত গোড়া থেকেই সহিংসতা বন্ধের পক্ষে কথা বলে চলেছে। শান্তি, কূটনীতির কথা বলেছে। তার কথায়, 'ইউক্রেনের মানুষের দুর্দশা কমানোর জন্য সব প্রয়াসকে আমরা সমর্থন করি। বিশেষ করে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে কথা হওয়া যে জরুরি, তা-ও বলছি আমরা। ভারত বার বার বলছে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত হলো আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা।'

দু’দিন আগেই ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের খবর, ভারত, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ থেকে ইউক্রেন তার রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নিয়েছে। তার সাথে ভারতীয় কর্মকর্তার এই বিবৃতির কোনো যোগ রয়েছে কিনা তা-ও আলোচনায় উঠে আসছে। গত এক মাসে বেশ কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি কমাতে আমেরিকা থেকে চাপ এসেছে সেই সব বৈঠকে। মস্কো থেকে তেল কেনার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়ে (বাজারের থেকে অনেকটাই কম দামে) রাশিয়াকে দুর্বল করার জন্য ইতিমধ্যেই ফ্রান্স, আমেরিকা অনুরোধ করেছে নয়াদিল্লিকে।

যদিও ভারত এখননো তার নীতিতে অটল। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের সূত্রের বক্তব্য, ভারতের জ্বালানির চাহিদা বিপুল। ফলে অন্য দেশ থেকে শক্তি আমদানির ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা। এটা ঘটনা যে যুদ্ধের মধ্যেও ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে লাগাতার অশোধিত তেল কিনে গেছে। তারাও এ বার রাশ টানতে রাজি। কিন্তু ভারতই একমাত্র ব্যতিক্রম, যে আমেরিকার কৌশলগত অংশীদার হয়েও, এখনো রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে চলেছে। ভারত এই যুদ্ধের বাজারে রাশিয়া থেকে গত বছরের তুলনায় ৩৪৫% কয়লা ও ২৩৬% তেল বেশি আমদানি করেছে। তেল আমদানির তালিকায় রাশিয়া এখন ভারতের দ্বিতীয় স্থানে (প্রথম স্থানে ইরাক)। পাশাপাশি, জাতিসঙ্ঘে রাশিয়াবিরোধী একটি প্রস্তাবেও ভোট দেয়নি নয়াদিল্লি।

কিন্তু কূটনৈতিক মহল বলছে, বিষয়টি সরু দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতোই কঠিন। কত দিন এই চাপ সামলানো যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার আগেই মোদি সরকার চাইছে যতটা বেশি সম্ভব জ্বালানি রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে রাখতে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement