২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আফগানিস্তানে বন্ধই থাকছে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের এক স্কুলে আসা মেয়ে শিক্ষার্থীরা - ছবি : এএফপি

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সব স্কুল খুললেও পরবর্তী নির্দেশ দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকছে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল। বুধবার আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামি আইন ও আফগান সংস্কৃতি অনুসারে পরিকল্পনা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকছে।

এতে বলা হয়, ‘আমরা মেয়েদের সব মাধ্যমিক স্কুল ও যেসব স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ওপর ছাত্রী রয়েছে, তাদের পরবর্তী নির্দেশ দেয়া না পর্যন্ত (স্কুল) বন্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছি।’

এর ফলে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আফগান ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে গেলো।

এর আগে গত ১৭ মার্চ আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফারসি নববর্ষের প্রথমদিন ২৩ মার্চ প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে ও মেয়ে সবার স্কুল খুলে দেয়া হবে।

তালেবানের মুখপাত্র ইনামুল্লাহ সামানগানির কাছে বার্তা সংস্থা এএফপি এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার সত্যতা স্বীকার করেন।

তবে এই পদক্ষেপের কারণ বা কবে আবার মেয়েদের স্কুল খুলে দেয়া হবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

এদিকে আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা ও যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক আজিজ আহমদ রাইয়ান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের জাতিকে দেশের সবার শিক্ষার অধিকার প্রদানের পূর্ণ নিশ্চয়তা দিচ্ছে।’

তিনি জানান, তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির ওপর মেয়েদের স্কুল বন্ধ থাকবে।

আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা দেশজুড়ে শিক্ষকের অভাবের কথাও জানান। পাশ্চাত্য সমর্থনপুষ্ট আশরাফ গনি সরকারের পতনের পর তালেবানের ক্ষমতা আরোহনের পর বিপুল সংখ্যক লোক আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কারণে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

আজিজ আহমদ রাইয়ান বলেন, ‘আমাদের কয়েক হাজার শিক্ষক প্রয়োজন এবং এই সংকট সমাধানে আমাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছি।’

নতুন এই সিদ্ধান্ত আফগানিস্তান ও বিশ্বে অন্যত্র সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

আফগানিস্তানের অন্যত্র মেয়েদের স্কুল না খুললেও সাত মাসপর রাজধানী কাবুলের মেয়েদের কিছু মাধ্যমিক স্কুল খুলেছিলো। কিন্তু তালেবান সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ঘণ্টাখানেক ক্লাসের পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।

আফগান ছাত্রীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলছে, তালেবান নেতৃত্বের উচিত ছাত্রীদের তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়তা করা।

রাজধানী কাবুলের এক স্কুলশিক্ষার্থী মালিকা বলে, ‘তারা ই্সলামি দেশ হওয়ার দাবি করে, তারা বলে আমরা ইসলামি আমিরাত। সুতরাং তাদের উচিত ইসলামের মহান নবীর বাণী অনুসারে কাজ করা, যেমনটি তিনি বলেছেন যে নারী ও পুরুষ সবারই শিক্ষার অধিকার রয়েছে।’

অপরদিকে কাবুলের ওমরা খান গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা পালওয়াশা জানান, তার ছাত্রীরা কান্না করছিলো এবং ক্লাস ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিলো।

তিনি বলেন, ‘আপনার শিক্ষার্থীদের কাঁদতে দেখা খুবই দুঃখজনক।’

এদিকে ছেলে শিক্ষার্থীরাও মেয়েদের স্কুল খুলে দেয়ার জন্য তালেবান নেতৃত্বের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।

সোহরাব নামের এক শিক্ষার্থী বলেছে, ‘তাদের উচিত মেয়েদের স্কুল খুলে দেয়া কেননা তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়বে। শিক্ষা একটি দেশকে সমৃদ্ধশালী করে।’

ব্রিটেনে প্রবাসী আফগান রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক শুকরিয়া বারাকজাই সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে জানান, ‘এটি সেই মেয়েদের জন্য প্রচণ্ড হতাশাজনক যারা স্কুলে ফিরতে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিলো। এটি প্রমাণ করেছে তালেবান বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না।’

আফগানিস্তানে জাতিসঙ্ঘের দূত ডেবোরাহ লিয়নস দেশটিতে মেয়েদের স্কুল বন্ধ হওয়ার খবর ‘অস্বস্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার এক টুইট বার্তায় একইসাথে তিনি এই পদক্ষেপের যৌক্তিক কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন।

এর আগে তালেবান সরকারের প্রথম আমলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত মেয়েদের জন্য শিক্ষা ও তাদের বেশিরভাগ কর্মসংস্থান বন্ধ ছিলো।

তবে গত বছরের আগস্টে সশস্ত্র এই রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেয়।

সূত্র : আলজাজিরা ও তোলো নিউজ


আরো সংবাদ



premium cement