২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সার্বিক ও সুষম উন্নয়নের অনিবার্যতা

সার্বিক ও সুষম উন্নয়নের অনিবার্যতা - নয়া দিগন্ত

বায়ান্ন বছর বয়সী বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রটির এবং বাঙালির জীবন সাধনা সম্পর্কে নির্মোহ মূল্যায়ন ও পর্যালোচনায় গেলে দেখতে পাই- একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ ও জাতি রাষ্ট্র হিসেবে উত্থান ও বিকাশে একটি আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে দাঁড়ানোর প্রয়াসে সার্বিক অর্জন যৎসামান্য নয়।

এটি অবশ্যই অনস্বীকার্য থেকে যাবে যে, যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং যে চিন্তাচেতনাকে প্রেক্ষিত হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ সেগুলোর প্রভাবক ভূমিকা একটি উন্নয়ন উন্মুখ দেশ ও জাতির জন্য ছিল প্রেরণা প্রদায়ক এবং পথ চলার শক্তি। সে কারণে শত সঙ্কট সন্ধিক্ষণে পতনের কিনারে গিয়েও পথ ফিরে পেয়েছে, বিভ্রান্তির বেড়াজাল কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, নানাবিধ সাফল্যের সোপান পথ চলায় সাহস জুগিয়েছে। আর এ সবের মূলে অতন্দ্র প্রহরী জাগ্রত জনতা। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার অবয়বকে অনেক সময় উপলব্ধিতে আপাত অপারগতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত জনতার জয় হয়েছে- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের সংগ্রাম তীব্র ও জোরালো রূপ পরিগ্রহ করেছে।

বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এর প্রাকৃতিক সম্পদ সৌন্দর্যের আত্মপ্রত্যয়ী জনসম্পদ এবং প্রকৃতির অবদান ইতিবাচকতা নেতিবাচকতাকে অতিক্রম করে দেশ ও জাতির অর্জনের স্থিতিপত্রে ধনাত্মক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তের মূল্যবোধে টানাপড়েন সৃষ্টি হয় ঠিকই কিন্তু সময়ের শৈল্য ও সাত্মিক সাহচর্য সেখানে প্রতিরোধ ও নিরাময় উভয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

গাঙ্গেয় বদ্বীপ, বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা এ সমতটে এর নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে এর সম্পদশালিতায় ভাগ বসাতে এর সৌন্দর্যময়তায় মুগ্ধ হয়ে এখানে যুগে যুগে নানান বেশে বিদেশী বর্গিদের আনাগোনা ঘটেছে। এ মাটির মানুষেরা বিদেশী বর্গিদের সংমিশ্রণে মিশ্রিত মূল্যবোধের অধিকারী হয়েছে ফলে এখানকার সাধারণ একটি মামলা মোকদ্দমায়ও বিদেশীদের নাক গলানোর পথ সৃজিত হয়েছে। নিজেদের আত্মত্যাগের ফসল অন্যের অবদান হিসেবে পরিচিতিকরণের সৃজিত হয়েছে। ভেতর থেকে সেই সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নাম করে তোষণ-পোষণের তরিকা যেমন বেরিয়ে এসেছে আবার উত্থিত বিরোধিতাকে বাইরের সাহায্য নিয়ে অবদমনের প্রয়াস চলেছে। ফলে এ দেশের মানুষ বারবার হোঁচট খেয়েছে পথে-ঘাটে ছড়ানো ছিটানো সংশয় সন্দেহের অবগঠিত ষড়যন্ত্রের নুড়ির আঘাতে। আর এভাবে ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ পদবাচ্যে নিজেদের পায়ে কুড়াল মাড়ার ক্ষেত্রে নিজেদের তৎপরতায় তাদের কাটে অধিকাংশ সৃজনশীল সময়, মনোযোগে মন্দা আর উন্নয়নে ভাটা। সমূহ সম্ভাবনাময় হয়ে এসব আপদ-বিপদের সুদাসলে সঞ্চয় ভেঙে যায়, তৈলাক্ত বাঁশের মতো জিডিপির গ্রোথ বাড়ে কমে, আত্মবিশ্বাসে ঘুণ ধরে, আত্মমর্যাদা সংশয় সন্দেহের উইপোকায় খেয়ে ফেলে। এসব রোগবালাই না থাকলে সুস্থ সবল দেহে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এত বিলম্ব ঘটত না। এসব অপঘাত অপযাত্রা অপবাদ অপপ্রয়াস এড়িয়ে চলতে পারলে বাংলাদেশের পিডিপি, রাজস্ব আহরণ, রফতানি বাণিজ্য, প্রকৃত শিক্ষিতের হার, প্রশিক্ষিত শ্রমিক আর জনসম্পদ উন্নয়নের মাত্রা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হতে পারত নিঃসন্দেহে। জগৎ সভায় অন্যান্য অনেক সহযাত্রীর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটত সাফল্যের শামিয়ানার নিচে।

সন্দেহ নেই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বাংলাদেশের সনাতন সমাজব্যবস্থা, রাজনৈতিক অর্থনীতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ এক যুগসন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে। বিশেষ কঠিন সময় পার করছে মানুষ ও প্রকৃতির মেলবন্ধন পরিস্থিতি, আস্থা অনাস্থার অনুভব, জলবায়ুর পরিবর্তন প্রেক্ষাপটে প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবর্তনের টালমাটাল মোহনায় সবাই। জনগণের উপলব্ধিতে জমছে নিত্যনতুন বিস্ময়, অনির্বচনীয় সব আচার আচরণ এবং পদ্ধতি প্রক্রিয়ার হরেকরকম উত্থান-পতন। একটি ঘটনার ঘনঘটা শেষ হতে না হতে আরেকটি ঘটনা নাটকীয়ভাবে এসে হাজির হচ্ছে ঘরের ও বাইরের সব রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে সবাই যাতে নাটকীয়তায় মেতে থাকে তেমনিভাবে চলছে যেন সাজানো সব কিছু। কূটকৌশল শাস্ত্রে এটিকে ‘স্বার্থজড়িত মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি ফেরানোর উৎকৃষ্ট উপায়’ কিংবা বঙ্গীয় বাগধারায় যাকে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ সৃষ্টির ’ সাথে তুলনা করা হয়।

এ বিশাল ব্যাপক পরিবর্তনের পেছনে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার অপব্যবহার অপপ্রয়োগ অপপ্রয়াসের মাত্রাগত ওঠানামা যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে তেমনি যাবতীয় উন্নয়ন অভিযাত্রা টেকসইকরণে মনোযোগে মনোমালিন্যের দৈন্য ও দুর্দশার সুর শোনা যাচ্ছে। লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যতীত কোনো উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয় তেমনি সেই উন্নয়ন টেকসইকরণের ভাবনা সাথে সংযুক্ত না থাকলে সেই উন্নয়ন সময়ের অবসরে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। লাগসই প্রযুক্তির প্রকৃষ্ট ব্যবহার সার্বিক উন্নয়ন প্রয়াসকে অর্থবহ করে তোলে। কৃষি জমিতে ধান ফল ফসল উৎপাদনের চেয়ে সেখানে লোনা পানি তুলে পরিবেশ বিপন্ন করে মাছের চাষ করার লাগসই প্রযুক্তি আপাত আর্থিক লাভ ঘটায় বটে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের জন্য তা কতটা কার্যকর বা কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত প্রয়াস তা পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে। লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার তখনই তাৎপর্যবহ হবে যখন দেখা যাবে ন্যূনতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত, বর্জন ও অর্জনের মধ্যে দূরত্ব দৃশ্যগোচর হয়ে দেশজ সম্পদ ও সেবা উৎপাদন নিরাপত্তার সাথে, নির্ভরতার সাথে অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে সময়ের কষ্টিপাথরে যা যাচাইযোগ্য হয়ে স্থায়িত্ব লাভ করে তা-ই টেকসই উন্নয়ন। ষাটের দশকে এ ভূখণ্ডে সবুজ বিপ্লবের ধারণা আমদানি সূত্রে চলে আসে। তার সাথে মার্কিন মুলুকের ইউক্যালিপটাস গাছেরাও চলে আসে এ দেশে। এ গাছ মাটির অভ্যন্তরস্থ সব রস এত দ্রুত শোষণ করে যে পার্শ্ববর্তী আর সব বৃক্ষনিচয়ে অবশিষ্ট থাকে না কিছুই- ফলে দেশীয় বনেদি বংশীয় বৃক্ষরাজির জীবনে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা উপস্থিত হয়। এটি বুঝতে প্রায় পাঁচ দশক সময় লেগে গেল। ইউক্যালিপটাসের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা তৈরিতে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেছে আরো বেশ কিছুটা সময়। তথাপি এখনো দেখা যায়, এখানে সেখানে সে লোকচক্ষুর অন্তরালে অজ্ঞাত আসামির মতো রয়ে গেছে। দেশীয় মাগুর ও কই মাছদের সংসার এখন দারুণ দুর্দশায়। তাদের বংশ রক্ষা এখন রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। থাইল্যান্ডের অতি স্বাস্থ্যবান হাইব্রিড কই আর আফ্রিকার বেঢপ সাইজের মাগুরের সাথে স্বার্থ ও সৌন্দর্যের মোকাবেলায় তাদের জাত্যাভিমান ও নিবন্ধন এখন বাতিল হওয়ার পথে। অর্থনৈতিক জীবনযাপন প্রক্রিয়া দিন দিন কঠিন, কর্কশ ও কষ্টদায়ক হওয়ায় মানুষ এখন এক সাথে এক দাগে হঠাৎ করে বড় হওয়া কই মাগুরের দিকে ঝুঁকছে অথচ দেশজ সংস্কৃতি ও আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা কই মাগুরের মান মর্যাদার মর্তবা ও জিল্লতির দিকে কারো নজর যেন আজ থেকেও নেই। দুর্নীতি যেমন সুনীতিকে বাজার থেকে ঝেঁটিয়ে লাঠিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে তেমন হাইব্রিড ভাব-ভাবনারা অনুভবের হাটে মাঠে ঘাটে বিভিন্ন ফন্দিফিকির এঁটে চলেছে। অনেকের অসাবধান অশালীন উচ্চারণে সামাজিক সৌহার্দ্যরে পরিবেশ পঙ্কিলতায় ভরে যাচ্ছে।

সবুজ বিপ্লবের মতো কৃষি বিপ্লবের জয়জয়কার সর্বত্র। এটি প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত বটে। কিন্তু দেখা দরকার এ কৃষি বিপ্লব পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রকৃত প্রস্তাবে কেমন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা অতিমাত্রায় বেড়েছে পোকামাকড় দমনের নামে, অধিক ফসল উৎপাদনের আশায় অজৈব সারের ব্যবহার বেড়ে গেছে অসম্ভব উপায়ে, অধিক সময় ধরে অপচনশীলতা নিশ্চিত করতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন, গরু মোটাতাজা করতে হরমোন পরিবর্তন এবং মাছের চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের জন্য মাছকে খাওয়ানো হচ্ছে উচ্ছিষ্ট উদ্ভূত বিভিন্ন ফিড। এখন এই কীটনাশক, সার, ফরমালিন, ফিড বিভিন্ন উপায়ে অপ-উপসর্গ হয়ে মানবদেহে ঢুকছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আপত্তিকর অগ্রহণযোগ্য অনেক কিছু জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বর্মকে করেছে পর্যুদস্ত। হাসপাতালগুলোতে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগা রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে প্রাকৃতিক চাষাবাদ পদ্ধতিকে টপকিয়ে জমিজমার কৌলিন্য নষ্ট করে সহজে সস্তায় অধিক অর্থকরী ফসল ও মাছ চাষের আয়োজন অবারিত চলছে সেসব অঞ্চলে।

এ কথা ঠিক, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো ধ্র“পদ ও ধীরগতি প্রকৃতির কৃষি (খাদ্যশস্য, মৎস্য, আমিষ, শর্করা) উৎপাদন ব্যবস্থা দিয়ে সম্ভব নয়। জমিতে আগে একটি ফসল (আমন ধান) ফলানো হতো এখন তিন তিনটি ফসল ফলানো হচ্ছে। ক্ষয়িষ্ণু জমির উর্বরাশক্তি ঠিক রাখার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে উচ্চ ডোজের সার ও কীটনাশক। একদিকে বর্ধিত উৎপাদনের উপকারিতা অপর দিকে প্রক্রিয়াগত স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের মওকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি, মানব ও জীবদেহে সংক্রামিত রোগব্যাধির প্রকোপ তার জন্য দেশে এবং বিদেশী মুদ্রার ব্যয় (বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ) বাড়ছে। উপকার ও অপকারের সালতামামি সমন্বয় সাধন করে দেখা যায় উন্নয়নের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে সবাইকে। অথবা কোনো উন্নয়ন বিনা বাক্য ব্যয় কিংবা লেনদেনে হয় না।

শিক্ষা মানুষকে চক্ষুষ্মান করে, শিক্ষায় মানুষের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা শক্তি সুপ্ত অবস্থা থেকে জেগে ওঠে। শিক্ষা মানুষের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে, তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ, সবাক, সকর্ম করে তোলে। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার যেমন বিকল্প নেই, জাতীয় জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষায় বিনিয়োগেরও তাই কোনো বিকল্প নেই।

একটি বৃক্ষকে সত্যই সবল ও সুস্থ হয়ে বড় বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে তার প্রকৃত পরিচর্যা প্রয়োজন। দেখভালের প্রয়োজনীয়তা এ জন্য জরুরি ও আবশ্যক যে গাছের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত, জরাগ্রস্ত, দুর্দশাগ্রস্ত হলে পরবর্তী পর্যায় তথা অপরাপর অংশে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠবে এবং এক সময় গোটা গাছটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইদানীং পরীক্ষা ব্যবস্থাকে মূল্যায়নমুখী দেখার পরিবর্তে পাস বা গ্রেডনির্ভর ভাবা হচ্ছে; আর এর পরিসংখ্যান পরিব্যাপ্তির প্রাগ্রসরমানতায় পরিতৃপ্তিবোধ দেখা যায়। মশহুর ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার যেমন সমুদ্রে চারিদিকে থৈ থৈ করা অপানযোগ্য পানি দেখে তার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারেননি। তেমনি লক্ষ কোটি শিক্ষিতের মধ্যে উপযুক্ত চাকরিপ্রার্থী মিলছে না। বাইরের শিক্ষিত লোক এসে চাকরি বাজার মাত করছে বেকারের ভারে ন্যুব্জ এই অর্থনীতিতে। উচ্চতর শিক্ষায়তনে ভর্তির দুয়ারে গিয়ে অনেককে অপারগতায় ঠায় দাঁড়ানো দেখতে হচ্ছে।

শিক্ষা মূল্যবোধকে জাগ্রত করার কথা, মূল্যবোধ অবক্ষয়ের উপলক্ষ হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থীর মনে ভালোমন্দ জ্ঞানের বিকাশ, দায়-দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার আচরণের উদগাতা ও উপলক্ষ উপলব্ধি, পারঙ্গমতা তথা দক্ষতা ও যোগ্যতা সৃষ্টির জন্য যদি না হয় শিক্ষা; বরং শিক্ষা যদি হয় ঠিক বিপরীত তাহলে তার চাইতে দুঃখজনক অবস্থা আর কী হতে পারে? প্রযুক্তি শিক্ষা প্রৎকর্ষতা অর্জনের জন্য, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন পথে নতুন উদ্যমে সময় ও সামর্থ্যকে সাশ্রয়ী করে তুলে অধিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য। শিক্ষা ও প্রযুক্তি যদি অসৃজনশীল, অপচয় অপব্যয় অপঅভ্যাস গড়ে তোলার পথ পায় তাহলে তো সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আবদুল কালাম বাংলাদেশ সফরে এলে স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের তরফ থেকে ৮৩ বছর বয়সী এ চিরতরুণ তত্ত্ববিদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল গোটা উপমহাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিপসায় তার বার্তা কী? তিনি পরামর্শে সোজা সাপটা বলেছেন- ১. বাড়িতে পিতা-মাতা ও ২. প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষককে দায়িত্বশীল হতে হবে, তাদের দায়িত্বশীল পেতে হবে। তাদের দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ পেতে হলে তাদের প্রতি বলিষ্ঠ সুনজর দিতে হবে। জাপানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষককে সবিশেষ সযত্ন ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার জন্য রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরিবারে পিতা-মাতা কোনোভাবে ভবিষ্যৎ পরিবার দেশ ও সমাজে উপযুক্ত সদস্য সরবরাহে অমনোযোগী হতে পারেন না।

সন্তানকে উপযুক্ত আদর্শ, মূল্যবোধ ও চেতনাদাত্রী হিসেবে তারা তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালনে প্রথমত নিজেদের ও সংসারের স্বার্থে এবং প্রধানত পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির স্বার্থে অবশ্যই মনোযোগী হবেন। আর এ ‘সকল মানুষের দ্বারা’, ‘সকল মানুষের জন্য’, ‘সকল মানুষের সরকার’ পরিবার, সংসার, সমাজ ও দেশে অনুকূল পরিবেশ সৃজনে-নিয়ন্ত্রণে, উদ্বুদ্ধকরণে, প্রণোদনে, প্রযত্ন প্রদানে অর্থনৈতিক রাজনীতি নিষ্ঠায়, ন্যায়নির্ভরতায়, স্বচ্ছতায়, জবাবদিহিতায়, সুস্থ সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্য-সখ্যে সন্দেশ সুনিশ্চিত করবেন। সে নিরিখে মানবসম্পদ তথা সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবযুগের যে শিক্ষার দরকার সেই শিক্ষার পথে আমরা আছি কিনা বারবার তার মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।

লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের
সাবেক চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement