০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভিন্নধর্মীয়দের নিরাপত্তা : বিভাজন কাম্য নয়

ভিন্নধর্মীয়দের নিরাপত্তা : বিভাজন কাম্য নয় - ফাইল ছবি

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। আসন্ন দুর্গাপূজা ও এরপর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি অত্যন্ত সরব হয়ে উঠেছেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, অন্তত ১০০টি আসনের নির্বাচনী ফলাফলের নিয়ামক শক্তি সংখ্যালঘুরা। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ সরকারের কোনো নির্বাচনী অঙ্গীকারই পূরণ হয়নি। তাই কী দেবেন আর কী নেবেন তার হিসাব-নিকাশ নির্বাচনের আগেই পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনের মাঠে নামা আমাদের সম্ভব হবে না।’ (প্রথম আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩)

রানা দাশগুপ্ত কোনো রাখঢাক না করেই বলতে চাচ্ছেন, এ দেশের সংখ্যালঘুরা গোষ্ঠীগতভাবে বর্তমান সরকারি দলের সমর্থক। আগেও তারা ওই দলটির সাথে কাজ করেছে এবং সামনেও একই দলের পক্ষেই মাঠে নামবে। এ ধরনের বক্তব্যে চরম সাম্প্রদায়িকতার উপাদান রয়েছে। জনশ্রুতি বা অলিখিতভাবে সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে মনে করা হলেও সব হিন্দু বা সব বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানই কি আওয়ামী লীগের সমর্থক? সবাই কি আওয়ামী লীগের পক্ষেই ভোটের মাঠে নামবে? তাহলে এ দেশের অন্যান্য দলে হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নেই? ভিন্ন ধর্মের সবাই কি আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়? রানা দাশগুপ্তের এই বক্তব্য কি আওয়ামী বলয়ের বাইরের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত করছে না? বাংলাদেশের নাগরিকদের সংখ্যালঘু হিসেবে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত করে ফেলছেন না? দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ও মুসলমান সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে সবারই সমান অধিকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কখনো নিজেদের মনে হীনম্মন্যতা নিয়ে আসবেন না। কারণ, আপনারা যারা এ দেশের নাগরিক, তারা সবাই দেশের মালিক এবং নাগরিক হিসেবে সবার সমান অধিকার রয়েছে’ (প্রথম আলো, ১৯ আগস্ট ২০২৩) অর্থাৎ রানা দাশগুপ্তরা নিজেরাই ভিন্নধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু হিসেবে আলাদা করে রাখছেন। মুসলমান নাগরিকদের আলাদা করে শুধু হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিই আসলে চরম সাম্প্রদায়িকতা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। দেশের সব নাগরিককে নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই লক্ষ্য পূরণের আন্দোলন না করে বরং একটি ধর্মের মানুষকে বাদ দিয়ে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের অধিকার আদায়ের জন্য আলাদা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা কি সাম্প্রদায়িকতা নয়? দেশে যখন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থানে যুদ্ধংদেহী হয়ে আছে তখন একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোট একটি পক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেয়ার মানে সেই সম্প্রদায়কে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দেয়া। এটি আসলে হয় একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন তৎপরতা অথবা পরিকল্পিতভাবে একটি সঙ্ঘাত ঘটিয়ে দেশকে বিশে^র কাছে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টা। এসব তৎপরতা মূলত প্রতিবেশী হিন্দুত্ববাদী দেশের প্রভুদের তুষ্ট করার প্রয়াস। যেন বাংলাদেশকেও একটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে প্রতিবেশী দেশের মুসলমানদের ওপর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্যাতনের বৈধতা দেয়া যায়। কারণ, ভারত ইতোমধ্যেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য সভ্য সমাজে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তারা নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব আইন, বুলডোজার নীতি, গোরক্ষা তৎপরতা, মসজিদের স্থানে দেবতা বা মন্দির আবিষ্কার, মাদরাসা বন্ধ করা, হিজাব নিষিদ্ধ করা, মাইকে আজান বন্ধ করা, নবীজি সা:-কে গালমন্দ দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে সংখ্যালঘু মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চরম নির্যাতন করে যাচ্ছে। মোদি সরকার স্পষ্টতই এসব করছে সংখ্যাগুরু হিন্দুদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের ভোটের শতভাগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য, পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ থাকলেও এখানে সব ধর্মের জন্য রয়েছে সমান স্বাধীনতা। এখানে মূলত যেটি ঘটে সেটি হলো লুটপাটের উদ্দেশ্যে বা রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা সংখ্যালঘুদের স্থাপনাসমূহে হামলা চালায় এবং নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সমুন্নত রেখেছে।’ (প্রথম আলো, ৪ জুন ২০২২) বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, ‘প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলায় লুটের সময় দলমত নির্বিশেষে সবাই লুট করে।’ (প্রাগুক্ত, ২৫ জুলাই ২০২২) তবে বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরা মনে করেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সরকার, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও দায় আছে। গণতন্ত্রহীনতা, নাগরিক সমাজের নিষ্ক্রিয়তা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতার কারণেই এসব হামলা বন্ধ হচ্ছে না। (প্রাগুক্ত) আরেকটি গোষ্ঠী আছে যারা সব কিছুতেই ‘ইসলামিস্টদের’ দোষ উচ্চারণ করে বেড়ায় অন্ধভাবে। অন্য ধর্মীয়দের ওপর যেকোনো হামলায় তারা মুখস্থভাবে বলতে থাকে- এটি ইসলামী দলগুলোর কাজ। এসব দল মৌলবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী ইত্যাদি বলে গালাগাল শুরু করে দেয়। এরা মূলত প্রতিবেশী দেশের ইসলামবিরোধী নীতির বাস্তবায়নের জন্যই তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলে সমালোচকরা মনে করে। কারণ এ দেশের কোনো সাম্প্রদায়িক হামলায় কোনো ইসলামী রাজনৈতিক দলের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাম প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর লিখেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক নয়। তারা ইসলামী মৌলবাদী, দেশে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে শাসন প্রতিষ্ঠাই তাদের ঘোষিত লক্ষ্য। তারা গণতন্ত্র, সাম্যবাদ ইত্যাদি সব ধরনের প্রগতির শত্রু। তাদের শত্রু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, তাদের শত্রু কমিউনিস্ট, গণতন্ত্রী ও যেকোনো ধরনের প্রগতিবাদীরা।’ (প্রথম আলো, ১২ আগস্ট ২০২২) তিনি আরো বলেন, উচ্চকণ্ঠ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীরা ভারতের দিকে তাকিয়েই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসে। (প্রাগুক্ত) নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটি ভিন্নধর্মী কেউ হলেই এই গোষ্ঠীটি এটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার জন্য লম্ফঝম্প শুরু করে দেয়। কিন্তু নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ^াস, সাভারের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার, মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়চন্দ্র মণ্ডল ও নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্ত ভক্তকে নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, তারা সবাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি বা ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের স্বার্থের বলি হয়েছেন। এগুলোতে সেই উচ্চকণ্ঠ গোষ্ঠী তারস্বরে সরব হয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চিৎকার করেছে, সংবিধানের রাষ্ট্রধর্মকে দোষারোপ করেছে। কিন্তু যখন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে একজন এমপি মারধর করেন তখন সেই উচ্চকণ্ঠীদের কোনো কণ্ঠই শোনা যায়নি!

তবে বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রেকর্ডটি তাদের ঘাড়েই চেপেছে বলে অনেকেই মনে করেন। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের’ (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিত সরকারের আমলেই গত ৫০ বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন হয়েছে।’ আর ‘স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের’ নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার ২০২১ সালের দুর্গপূজায় হামলার বিশ্লেষণ করে বলেন, হামলাকারীরা কোনো সামাজিক শক্তি নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক চরিত্র আছে। সেটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক দেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ করার পরিকল্পনা (প্রথম আলো, ২৯ আগস্ট ২০২২) সম্প্রতি রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘সরকার চাইলে হামলা ঘটবে না, না চাইলে ঘটবে (প্রথম আলো, ২ জানুয়ারি ২০২২) গত ২০১২ সাল থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা অধিক হারে হচ্ছে। ওই বছর রামুতে বৌদ্ধদের ওপর হামলা, ২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়ায়, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে, ২০১৬ সালে হবিগঞ্জের মাধবপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, ২০২১ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হামলা হয় এবং কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন রাখার ঘটনায় ১৮টি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটে।

এগুলোর মধ্যে জঘন্যতম হামলা হয় রামু, নাসিরনগর, শাল্লা ও কুমিল্লায়। ওই হামলার ঘটনাগুলোর ন্যারেটিভ, সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া ও ফলাফল একই প্রকৃতির। আবার হামলায় জড়িতদের চেহারাও একই ধরনের। সেই হামলাগুলোর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- ১. ঘটনাগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কোনো না কোনোভাবে জড়িত। ২. বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদাসীন বা নিষ্ক্রিয় ছিল। ৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে গুজব ছড়িয়ে উসকানি সৃষ্টি করার জন্য। ইসলাম ধর্মের অবমাননার ‘কার্ডটি’ খেলা হয়েছে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে। ষড়যন্ত্রের মূল উপাদান ছিল ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট। মফস্বল এলাকার অশিক্ষিত জনতাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে। ৪. ইসলাম রক্ষার আড়ালে আক্রমণ করে ব্যাপক লুটপাট, চাঁদাবাজি, ব্যক্তিগত শত্রু দমন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং সংখ্যাগুরু ইসলাম ধর্মের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ৫. কোনো ঘটনাতেই দেশের আলেম-উলামা, ইমাম-মোয়াজ্জিন বা কোনো ইসলামী দলের নেতা জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। ৬. এসব হামলায় স্বার্থের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা বা জমি দখল ও লুটপাটের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে সুকৌশলে। ৭. কোনো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। কোনো কোনো ঘটনার অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে, কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতা চলছে। ৮. ঘটনাগুলোর পর তাৎক্ষণিকভাবে ‘উচ্চকণ্ঠ মহল’ বা চিহ্নিত গোষ্ঠীটি এবং মিডিয়ার একটি অংশ মুখস্থভাবে মৌলবাদী, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মহল ইত্যাদিকে দায়ী করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। পরে আসল দোষীরা চিহ্নিত হলেও ওই ‘উচ্চকণ্ঠ’ গোষ্ঠীটি দোষীদের শাস্তি দেয়ার বিষয়ে নীরব থেকেছে। ৯. সংঘটিত হামলা-লুটতরাজের পর মামলা হয়েছে যাতে অসংখ্য অজ্ঞাত আসামি হয়েছে। পরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অজ্ঞাত আসামির তালিকায় অন্তভর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপরের বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা মোটেও কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়। এসব হামলা বরং আর্থ-রাজনৈতিক। মুসলিম সম্প্রদায় কোনো ধর্মীয় শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা চালায় না; বরং ব্যক্তিস্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য স্থানীয় নেতারা ধর্মের নামে মানুষকে উসকিয়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ করে। এসব অধর্মের কাজের সাথে ইসলাম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন বাস্তবতায় বর্তমানের নির্বাচনী মৌসুমে অল্প কিছু দিন পরেই আসছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এই সন্ধিক্ষণে হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সব ধর্ম ও পেশার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনী পরিস্থিতি ঘোলাটে করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যেকোনো গোষ্ঠী এই পূজার স্পর্শকাতরতাকে কাজে লাগানোর জন্য চেষ্টা করতে পারে। ইতোমধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নিয়ে রানা দাশগুপ্ত মাঠে নেমেছেন। তিনি সংখ্যালঘুদেরকে ক্ষমতাসীন দলের ভোটব্যাংক হিসেবে সরাসরি বলে বেড়াচ্ছেন। দেশের ২২ জন ভিন্ন ধর্মের সংসদ সদস্যকে সংখ্যালঘুর প্রতিনিধি হিসেবেই চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। (প্রথম আলো, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) এতে বরং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই দেশবাসীকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সতর্ক থাকতে হবে যেন দুষ্টচক্র কোনো অঘটন ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ না পায়।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
e-mail: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
গরমে ঢাকার হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপ, শিশু ওয়ার্ডে আসন সঙ্কট প্রকট এ জে মোহাম্মদ আলীর রূহের মাহফিরাত কামনায় সুপ্রিম কোর্টে দোয়া চৌগাছায় দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল কৃষকের ১ বিঘা জমির পানের বরজ সেলফি তুলতে চাওয়ায় ভক্তের ওপর চটেছেন সাকিব, চেপে ধরলেন ঘাড় টিভি চ্যানেলের অবৈধ সম্প্রচার বন্ধে কার্যক্রম শুরু যেখানে অবৈধ পাথর খনির মিহি গুঁড়াতে ভরে ওঠে ফুসফুস শিবপুরে গৃহবধূর আত্মহত্যা : স্বজনদের দাবি হত্যা, স্বামী আটক সিদ্ধিরগঞ্জে হেলে পড়েছে ৬ তলা ভবন, আতঙ্ক জাতিসঙ্ঘ ত্রাণ সংস্থার প্রধানকে দ্বিতীয়বারের মতো গাজায় প্রবেশে বাধা দিলো ইসরাইল টানা তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি নোয়াখালীতে অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ

সকল