০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই’

‘বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই’ - নয়া দিগন্ত

ক্ষমতাসীন ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক প্রবীণ নেতা, আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিএনপির ষড়যন্ত্র এ দেশের মাটিতে টিকবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (ওকে) বলেছেন, বিদেশের প্রভুদের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে বিএনপি নেতারা দিশেহারা। আর তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ তরুণ ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিকে ডেঙ্গুর মতো উৎখাত করতে হবে। আমু এবং কাদেরের বক্তব্য যে দিন আসে পত্রিকায়, একই দিন একটি খবরের দিকে চোখ যায়। খবরটি হলো- নয়াদিল্লিতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি জগৎ প্রকাশ (জেপি) নাড্ডার সাথে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। ভারতের দিল্লিতে দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রদায়িক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা। সোমবার ৭ আগস্ট দুপুরে ভারতে সফররত প্রতিনিধিদলটি বিজেপির সভাপতি জগৎ প্রকাশ (জেপি) নাড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তড়ের সাথে পৃথক বৈঠক করে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত গুণ বিজেপি প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডার বাসভবনে তার সাথে বৈঠক করেন।

মাত্র দুই দিন আগে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা নিয়ে নয়া দিগন্তের প্রধান খবর, ‘কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ’। এটাই কি আওয়ামী লীগের বিশেষ কৌশল? বিএনপি বরাবরই বলে, ‘বিদেশে আমাদের প্রভু নেই; বন্ধু আছে।’ আওয়ামী লীগ কেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির সাথে বৈঠক করবে? তাহলে কি ওই দল আওয়ামী লীগের প্রভু? এটাতো হতে পারে না কিছুতেই।

নোয়াখালীর লোকরা বলছে, আমিন মৌলভী সাহেবের নাতি ও মোশারফ মিয়া হেডমাস্টারের মেধাবী ছেলে, ওবায়দুল কাদের কোনো উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য না রাখাই ভালো। তার প্রতি দলের বাইরেরও অনেকের সফট কর্নার আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (ওকে) মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসকে নিজেদের অফিসে ‘ওকে’ জানালেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদিও আওয়ামী লীগকে সরাসরি সমর্থন করেন না। তবুও ওবায়দুল কাদের তার কথাকে নিজেদের দিকে টেনে নিলেন। কোনো বিদেশী রাষ্ট্রদূত বা বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা আওয়ামী লীগের পক্ষের মনে হলে ওই ব্যক্তিকে গণতন্ত্রের প্রতিভূ এবং নিজেদের পক্ষপাতী মনে করা আমাদের দেশের রীতি হয়ে গিয়েছে। আর তার কথা পছন্দ না হলে তিনি গণতন্ত্রের শত্রু এবং প্রতিপক্ষের লোক বলে ধারণা করা হয়। অথচ এটা মোটেও ঠিক না। বিদেশী কূটনীতিকরা সাধারণত অন্য দেশের ক্ষমতাসীন বা প্রধান বিরোধী দলবিশেষকে সমর্থন করেন না। এটাই তাদের রীতি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বিএনপি। তবে তা সফল হবে না। এ দেশের মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র টিকবে না। সব চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দেশের উন্নয়নের গতি বজায় রাখা হবে। গত ৭ আগস্ট সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৪ দলের কথিত শান্তি সমাবেশে নেতারা এ কথা বলেন। নামে শান্তি সমাবেশ হলেও কামে এটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগারের মহাসুযোগ। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এতে বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র এ দেশের মাটিতে টিকবে না। চক্রান্তের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণ করা যাবে না।

তিনি বিএনপিকে ‘পাকিস্তানপন্থী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের দেশ সব সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার কারণে দেশটির দোসরদের এত গাত্রদাহ। তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, শেখ হাসিনা গোটা বিশ্বে আদরণীয় আর তখন তোমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা মনে পড়ে। হাসিনার চাইতে গণতন্ত্র কেউ বেশি দিতে পারেন না।

বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত হয়েছে। ‘তিনি’ বিএনপি নেতাদের এমন অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন যে, তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেও বারবার কারাবন্দী বেগম জিয়ার সাথে দেখা করেন। এভাবে বেগম জিয়াকে নির্দেশ দেয়ার সুযোগ তারা দিচ্ছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তো বাধা দিচ্ছেন না। বিএনপিকে উদ্দেশ করে আমু বলেন, আপনারা আর কী চান, আর কত গণতন্ত্র চান?

এর চেয়ে বেশি গণতন্ত্র ও সুবিধা কোনো দিন কোনো দেশের সরকার দেয়নি। শেখ হাসিনা আর কত দিতে পারে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস দিয়ে আবার শান্তি নষ্ট করতে চায়। তাদেরকে দেশ থেকে তাড়াতে না পারলে তারা সন্ত্রাস চালাবে; আমরা শান্তি চাই। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র ও অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই করবেন।’ এভাবে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের পুরো দায় বিএনপির গায়ে চাপাতে চায় আর নিজেরা বিদেশী শক্তির সাথে বৈঠক করতে চায়। অথচ ১৪ দলের ওই শান্তি সমাবেশে জোট সদস্য, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে বিদেশীদের সাথে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে, বিদেশীদের চাপ এবং তাদের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল করতে পারবে না।

হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণে গঙ্গার পানিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির তথাকথিত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলামরা এখন পাগলের প্রলাপ বকছেন। বিদেশী প্রভুদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে এবং জনগণ দ্বারা বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি নেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি এক এক সময় এক এক কথা বলে। কখনো বিদেশী প্রভুদের কৃপা প্রত্যাশায় তাদের স্তুতি করে। আবার কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে।


আরো সংবাদ



premium cement