২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোন সমস্যা বড়, সড়ক না গ্যাস

- ছবি : নয়া দিগন্ত

এ এক মহাসমস্যা। লেখার জন্য কোন বিষয়টি বেছে নেবো? রোজার দিন, তাই খাদ্যশস্য, কাঁচাবাজারের পণ্য নিয়ে লেখা জরুরি। তারও চেয়ে জরুরি গ্যাস নিয়ে লেখা। কারণ পয়লা রমজান থেকে ঢাকার বাসিন্দরা গ্যাস পাচ্ছে না। কোনো রকম নোটিশও দেয়নি তিতাস গ্যাস কোম্পানি। দিয়ে থাকলেও তা জনগণের চোখে পড়েনি। গ্যাস না থাকায় খাওয়া দাওয়াই কেবল বন্ধ হয়ে যায় তাই না, এ-মহানগরের বাসিন্দারা এক মহা বিপাকে পড়েছিল। যারা এলপি গ্যাস ব্যবহার করেন, তারা বেঁচে গেছেন, কিন্তু যাদের তিতাসের গ্যাস লাইন, সারা দিন চেষ্টা করেও ইফতারির আয়োজন করতে পারেনি। পরে, টিভিতে স্ক্রলে দেখেছি সংকটের কারণ। আর সংবাদ পাঠিকারা বলছিলেন, তিতাসের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের ৪/৫টি কূপ থেকে বালি উঠে আসছে। তাই ওইগুলো বন্ধ করে সংস্কার করছে প্রকৌশলীরা। বিবিয়ানা ফিল্ডে মাত্র ১৯টি কূপ। তার চার পাঁচটি বন্ধ করে দেয়া হলে বাকিগুলো তো সচল ছিল। সেই সচল ক‚প থেকে পাওয়া গ্যাস কোথায় গেল? এ প্রশ্ন সবাই করছেন। বাসা-বাড়িতে যদি গ্যাস না দেয়া হয়, তাহলে বাকি কূপের উৎপাদন কাকে সরবরাহ করেছে তিতাস?

ধারণা করি, ওই গ্যাস তারা সরবরাহ করেছে গ্যাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রাহকদের। শিল্পপণ্য উৎপাদনের চেয়ে মানুষের খাদ্যদানা রান্না করা জরুরি নয়; এমনটাই কি ভেবেছেন তারা? তারা রোজাদার মানুষের সকরুণ মুখ দেখে বা মনে করে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারতেন। গ্যাসের জাতীয় গ্রিড থেকেই সে কাজটি করা যায় বোধহয়। কারিগরি বা প্রযুক্তি বিষয়ে আমি অজ্ঞ, তবু মানুষের চাহিদা, তাদের দাবি ও প্রয়োজন তো সব কিছুর উপরে, রোজার দিনেও গ্যাস পুরোপুরি সরবরাহ হচ্ছে না। এই সমস্যা কবে মিটবে তা আমরা বলতে পারি না।


এই রোজার দিনেও ঢাকার সড়কগুলোতে যানজট, কাঁচাবাজারে পণ্যের মূল্য অসহনীয় রকমের বেশি। এই অসহনীয় অবস্থাও সহনীয় হয়ে যায়, এটা বোঝে বাজার থেকে যারা চাঁদা তোলে, যারা পাইকারি বাজারের সিন্ডিকেট রচনাকারী, বোঝে কম আয়ের গরিব মানুষরাও। কাঁচাবাজারের গ্রাহকরা দশকের পর দশক ধরে ভোক্তার অধিকার কায়েমের কথা বলে আসছে। কিন্তু যারা সেই অধিকার কায়েমের ঈমানদার দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও জানেন, সয়ে যাবে মূল্যবৃদ্ধির এই অগ্নি। বোঝে বাস মালিকরাও। বোঝে পরিবহন সেক্টরের কর্তারা, বোঝে লাইসেন্সদাতা কর্তৃপক্ষ, ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স না দিতে তারা বসে থাকলেও সরকারের উঁচু আমলাদের কোনো দায় নিয়ে কেউ রা কাড়বেন না। কারণ, তারাও অভ্যস্ত হয়েছেন অন্যায়, অবৈধকে মেনে চলতে। এখনো আটকা পড়া লাইসেন্সগুলো কতোটা রিনিউয়ালের জন্য আর কতটা নতুন তা আমরা না জানলেও, এটা তো আমরা বুঝতে পারি বিআরটিএ’র নবায়ন রিসিট নিয়ে চলছে হাজার হাজার যানবাহন। নবায়নের জন্য দেয়া লাইসেন্সগুলো কেন তারা সঙ্গে সঙ্গে দেন না, তার কি জবাব আছে তাদের কাছে? এসব সত্তে¡ও ৫১ লাখ গাড়ি চলছে ঢাকায়। তাহলে এই মহানগরে বাস-ট্রাক-মিনিবাস, অটোরিকশা, বেবিট্যাক্সি, রিকশা, ঠেলা এবং পথচারী সড়কে ও ফুটপাথে গাদাগাদি করে চলছে। ফুটপাথ দখল হয়ে আছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজরা। তারা নিয়মিত চাঁদা তোলেন। লাখ লাখ টাকা প্রতিদিন চাঁদা উঠানো হয়। মহানগরের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এভাবেই নিজেদের দলের চেইনে বেঁধে রাখা হয়। এটা সব রাজনৈতিক দলেরই সাংবাৎসরিক ইতিহাস। চাঁদাবাজি করে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে ট্রাফিকের লোকেরা। বাণিজ্যমন্ত্রী তো এটা অনুমোদন করে নিয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, সহযোগিতা দেবার কথা। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ পথে পথে পুলিশ, রাজনৈতিক চাঁদাবাজ, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঁদা তোলে। এ যেন আমাদের ললাটলিখন। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, পুলিশ যেন তাদের দলীয় পুলিশে পরিণত হয়, দলের নেতাকর্মীদের সাথে মহব্বতের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর বিরোধী পক্ষ হয়ে যায় চরম শত্রু।

আসলে এই মহানগর চলছে না, থেমে থেমে, ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোচ্ছে, ঠিক আমাদের মেগা প্রকল্পগুলোর মতো। এই মহানগরকে কি আদৌ গতি দেয়া যাবে কোনো দিন? অবিশ্বাস্য মনে হয় আমাদের। মহানগরে উন্নয়ন ঘটছে অপরিকল্পিতভাবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই যেন। তারা বলেন বটে নানান রকম সংস্কার পরিকল্পনার কথা। কিন্তু সেগুলো চলমান উন্নয়নের জন্য জোড়াতালি মারা ছাড়া কোনোভাবেই দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পনাকে দৃশ্যমান করে না।

গত ফেব্রæয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রকার যানবাহন (অধিকাংশই মোটর কার, টাকাওয়ালাদের বাহন) সড়কে নেমেছে। এ মহানগরে কতো ফুট/কত কিলোমিটার সড়কপথ আছে, আর সেই সড়কে বিভিন্ন রকম যানবাহন চলাচল করতে পারবে কত সংখ্যক সেই হিসাব কি যান চলাচল কর্তৃপক্ষের হাতে আছে? যারা লাইসেন্সদাতা তারা কি জানেন ঢাকা শহরে কত গাড়ি চলতে পারবে? ট্রাফিক পুলিশ কি জানে এ মহানগরের সড়কে কত গাড়ি চলাচল করতে পারে? সেগুলোর ফিটনেস আছে কি নেই তারা কি পরখ করেন?

আসলে কোনো কর্তৃপক্ষই জানে না, এসব তথ্য-উপাত্ত। যদি বলেন, তাদের হাতে সব তথ্যই আছে, তা যে আপ টু ডেট না, সেটা তারা বলবেন না, মানবেনও না। লুকোচুরিটা এখানেই। তারা জানেন কেবল লাইসেন্স দিতে। আর বিনিময়ে ঘুষ নিতে। এ ঘুষের ব্যাপারটা ওপেন সিক্রেট, সবাই জানে। তাই ট্রাফিক পুলিশ যখন ড্রাইভারের কাছে থেকে ঘুষের টাকা নেয়, প্রায় প্রকাশ্যেই নেয়, জানে যে তার কিছু হবে না। হয়ও না। বরং উল্টো প্রমোশন হয়। অতীতে বহু নজির আছে।

এ পরিস্থিতি তো একদিনে হয়নি, ১৩-১৪ বছরে হয়নি, ৪০-৪২ বছরে হয়েছে। সরকারের একটি নীতি থাকে, আছেও, কিন্তু তা মেনে চলে না কোনো সরকারি অফিসই। এমন কি সরকারের মন্ত্রীরাই আইনের তোয়াক্কা না করে গাড়ি হাঁকান অবৈধপথে; কোনো কোনো সময় লাইসেন্সবিহীন গাড়ির ড্রাইভারও। শিশু-কিশোররা যখন তাদের বন্ধুকে সড়কে হত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল, তখন দেখা গেছে, এ অবস্থার জ্বল্যমান চিত্র। মন্ত্রীর গাড়ি বেআইনি পথে গেলেও তিনি নিষেধ করেন না। কোনো সচিব বা প্রভাবশালী আমলার গাড়ি উল্টোপথে মানে অবৈধভাবে গাড়ি চালালেও, ট্রাফিক পুলিশ তাদের আটকায় না। অবৈধ পথে পণ্য বোঝাই ঠেলাগাড়িকেও নির্বিঘেœ যেতে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। বাদবাকি গাড়িঅলাদের তো ঠেকানোর প্রশ্নই আসে না। যে যেমনভাবে পারছে ট্রাফিক আইন অমান্য করে তার গন্তব্যে যাচ্ছে। যাচ্ছে মানে এক জ্যামের ভেতর থেকে কোনোমতে বেরিয়ে আরেক জ্যামের পেটে গিয়ে পড়ে সেই যানবাহন ও যাত্রী।

এই পরিস্থিতি নিরসনে সরকারের রাজনৈতিক বুলি খই ফোটালেও সড়কে তার কোনো প্রতিফলন নেই। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক বললেন, সড়কমন্ত্রীকে বলব, আপনি পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন, কিন্তু আপনি ফেইল ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে (পড়ুন- ট্রান্সপোর্টেশনের ক্ষেত্রে)। গত রোববার জাতীয় সংসদে তিনি এই কথা বলেন পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে।

তার পাশেই বসেছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান। তিনি তাকে লক্ষ্য করেও বলেন, আমার পাশে বসেছেন, বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সভাপতি। ওনাদেরকে বলব, আপনারা মানুষের প্রতি দরদি হন। যে সব গাড়ি, ব্রেক নেই পুরনো ইঞ্জিন, রং নেই-এগুলো সরকার দেখে না, কেউ দেখে না।

মুজিবুল হকের কথাগুলো কেবল সত্য নয়, চরম সত্য। এই মহানগরীর বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় বের হন। সেই বাধ্য হয়ে বের হওয়া নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিল, তাকে একটি বাস ধাক্কা দিয়ে হত্যা করে। গত বুধবার কামরুননেসা স্কুলে মেয়েকে আনতে গিয়ে এক লক্কড়ঝক্কড় ব্রেকহীন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন এক মা। মঙ্গলবার মিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক মহিলা। এ রকম মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে? কেউ বলতে পারে না।

এভাবে প্রতিদিনই বাসের, ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে এ শহরের মানুষ। কিন্তু তার জন্য কোনো রকম হা-হুতাশ নেই না ট্রাফিকের, না ঢাকার নগর পিতা ও যানবাহন মালিকদের। তারা নির্বিকার। তাদের যেন মন নেই। বলা যেতে পারে, তাদের স্বাভাবিক প্রাণও নেই। যা আছে তা লোভের প্রাণ, যা আছে তা রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রাণ। সে কারণেই মশিউর রহমানের মনে লজ্জা লাগে না বরং তিনি মুজিবুল হকের প্রতি অন্য ইঙ্গিত করেন। সরকারের সাথে যোগসাজশ না থাকলে লক্কড় মার্কা বাস, মিনিবাস এ মহানগরে চলাচল করে কী করে? ফিটনেস নেই, লাইসেন্স নেই, অদক্ষ ও কিশোরের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল যায় কী করে? বাসের কনডাক্টররা কী করে চরম দুর্ব্যবহার করে যাত্রীদের সাথে? ঘুষের বিনিমিয়ে অনেক লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ সবই ওপেন সিক্রেট। কোনো কিছুর যখন সিক্রেসি না থাকে, তখন বেহায়ার আবার লজ্জা কিসেরÑ এই প্রশংসাই আমরা করতে দেখেছি/দেখছি। এসব অন্যায়, অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সরকার যদি সদিচ্ছার প্রকাশ না ঘটায়, তাহলে এখানকার বাসিন্দারা কিংবা দেশের মানুষ কার কাছে যাবে? মাননীয় মন্ত্রীগণ, বলুন তো আমরা এ সমস্যা সমাধানে কার কাছে যাবো?

আমি একটা প্রস্তাব দিতে পারি। তাহলো, কোনো বাস, মিনিবাস, ট্রাক টেম্পো বা বেবি ট্যাক্সি যদি ট্রাফিক আইন অমান্য করে এবং প্রভাবশালীদের কার আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের নোটিশ করুন, ফের এ রকম অবৈধ পথ ব্যবহার করলে সেই গাড়ির লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া হবে এবং সেটা তদবির করে আবারো পাওয়ার কোনো পথ থাকবে না, সেরকম আইন করুন। ট্রাফিক পুলিশ যদি ঘুষ নিয়ে অন্যায়কারীকে ছেড়ে দেয়, তাহলে তার বিচার করুন এবং চাকরি থেকে বের করে দিন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট সিস্টেম রাখুন যাতে অ্যাক্সিডেন্ট করলেই তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা যায়। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বাতিল করুন সড়ক থেকে। লাইসেন্স দেনেওয়ালা ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের স্কুলে পাঠান। সেখানে তাদেরকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার শিক্ষা দেয়া হবে। যারা পাশ করতে পারবে না, তাদেরকে চিরতরে বাতিল করে দিতে হবে। লাইসেন্সর সাথে যুক্ত করুন ড্রাইভারের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর।

প্রকৃত শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি ছাড়া যেন কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স না পায়, কোনো রকম তদবির করা হলে তাকে ডিসকোয়ালিফাই করতে হবে, তিনি যত বড় আমলা বা রাজনৈতিক নেতাই হোন না কেন।

তবে, তার আগে বিআরটিএ-কে সড়ক থেকে বাতিলযোগ্য গাড়ি তুলে নেবার কাজটি সারতে হবে। সড়কে যেন ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি গাড়ি না আসতে পারে, সে ব্যাপারে কঠোর থাকতে হবে। প্রত্যেক সড়কে ট্রাফিক সিগন্যালে ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে জানাতে হবে কত গাড়ি চলবে, চলছে। নতুন গাড়ি আর নামবে না। চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মাধ্যমে, সততার সাথে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সততা ছাড়া এই পদক্ষেপ সফল হতে পারবে না। তবে, এসব পদক্ষেপ নিতে হলে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি-ক্যামেরা বসাতে হবে।

আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতিতে এতটাই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে যে, মোরালিটি বলে কোনো শব্দ আর জীবিত নেই। সমাজ ও রাজনীতিতে এই অধঃপতিত সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা সবার আগে প্রয়োজন।
আমরা কি সেটা করতে উৎসাহী নই?


আরো সংবাদ



premium cement