২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিশ্ব-মানবাধিকার ও বাংলাদেশ

-

বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের পালা সবে মাত্র শেষ হলো। দেশের মানুষ সব সময় নির্বাচনে উৎসাহের সাথে যোগদান করে। তবে একটি শর্ত হলো, তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। আর একটি বিষয় হলো, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো কেমনভাবে নির্বাচনকে গ্রহণ করছে। যদি তাদের মধ্যে শঙ্কা থাকে জনগণ তাদের গ্রহণ করবে না, তখন তারা প্রায়ই শক্তি ও অনাকাক্সিক্ষত পন্থার আশ্রয় নিতে চায়। এ দু’টি অবস্থানে অনেক সময় একটি অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া হয় না। এটা হলো মানবাধিকার। আসলে নির্বাচনও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

এখন প্রধান প্রশ্ন হলো- মানবাধিকার কী এবং কেন এটা নিয়ে এত আলোচনা। বিশ্বব্যাপী আজ যে অশান্তি বিরাজ করছে, তা প্রত্যেক মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। অতীতে যখন প্রযুক্তির এত উন্নয়ন হয়নি, তখন যে সহিংসতা হতো, তা তাৎক্ষণিক সবাইকে ছুঁতে পারত না। এমনকি কখনো কখনো তা প্রতিহত এবং পরাজিতও করা যেত। এখন এর বিস্তৃতি বেড়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অদৃশ্যভাবে এসে আঘাত করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা হয় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর, প্যারিসে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিভীষিকার পরিপ্রেক্ষিতে এর জন্ম। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা যায়, বিশ্বের ভয়াবহ যুদ্ধের বেশির ভাগের নেতৃত্ব দেয় ইউরোপ। যেমন- ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার, ফরাসি ও জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারে হতাহতের সংখ্যা এবং ধ্বংস এখন ইতিহাস। স্যামুয়েল হান্টিংটন তার ‘ক্লাশ অব সিভিলাইজেশন’ বইতে এর চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে তার একটি মন্তব্য উল্লেখ করা যায়- ‘পশ্চিম (শক্তি) বিশ্ব জয় করেছে তার মূল্যবোধ বা ধারণা দিয়ে নয় বা ধর্মীয় মূল্যবোধ দিয়ে নয়। তাদের সংঘটিত সহিংসতা দিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করেছে।’

এ ঘোষণাটি মানব ইতিহাসের অন্যতম দলিল। এটাকে বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তির ভিত্তিভূমি বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বের ১৬৫টি দেশ এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করে এর সাথে সম্পৃক্ততা জানায়।

এই ঘোষণার মুখবন্ধ সমগ্র বিষয়কে ধারণ করে আছে। যেমন প্রথম বাক্যটিই ‘যেহেতু প্রতীয়মান যে স্বাধীনতা, সুবিচার এবং শান্তি মানুষের জন্মগত অধিকার’- আরো ছয়টি আর্টিকেলে প্রতিটি সমস্যা ও বিষয়কে প্রকাশ করা হয়। ৩০টি আর্টিকেলে সমৃদ্ধ এই ঘোষণা স্বাক্ষরকারী ১৬৫ দেশের জন্য অবশ্য কর্তব্য। প্রথম আর্টিকেলে বলা হয়েছে- জন্মগতভাবে সব মানুষ সমান এবং অধিকারে সমান। যেহেতু তারা যুক্তি ও নীতিবোধের অধিকারী, তাই তারা একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃসুলভ ব্যবহার করবে। দ্বিতীয় আর্টিকেলটি একটু বড় তবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বলা হয়েছে- প্রত্যেক মানুষের সব অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থাকবে। কাউকে কোনো অজুহাতে পার্থক্য বা বৈষম্য করার চেষ্টা করবে না।

এই দ্বিতীয় আর্টিকেলের বক্তব্যকে যদি ধারণ করা হতো, তবে বিশ্বে কোনো সঙ্ঘাতের উদ্ভব হওয়া সম্ভব হতো না।

তৃতীয় আর্টিকেল সংক্ষিপ্ত কিন্তু আরো ঋজু। বলা হয়েছে প্রত্যেকের জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে। পরের আর্টিকেলে বলা হয়েছে, কেউ ক্রীতদাস থাকবে না বা দাসত্ব করবে না এবং ক্রীতদাস প্রথাও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এমনিভাবে প্রতিটি ধারায় মানুষের অধিকার, বিচারের অধিকারসহ সব অধিকার বিধৃত আছে এই ঘোষণাপত্রে। ৭০ বছরের পুরনো জাতিসঙ্ঘের ঘোষণা কতখানি বাস্তবায়ন হয়েছে, এটাই হলো এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

এক-সংবাদ সংস্থা সম্প্রতি এক রিপোর্টে এই প্রশ্ন উঠিয়ে একটি বাস্তব আংশিক চিত্র প্রকাশ করেছে। তবে প্রথমেই শঙ্কা প্রকাশ করেছে। সংস্থা বলেছে, ঘোষণায় বিধৃত লক্ষ্য ‘অভাবিত বাধার সম্মুখীন হওয়ার লক্ষণ পরিষ্কার।’ জাতীয়তাবাদ থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের নানা প্রতিবাদ উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট তার সতর্কবাণীতে বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও সরকারগুলো নানা আইন এবং নিয়মের মাঝ দিয়ে বিশ্বসংস্থার প্রণীত এই ঘোষণাকে সীমিত ও দ্বন্দ্বহীন করে ফেলেছে।’

আসলে মানবাধিকার ঘোষণার মূলে ছিল নুরেমবার্গ বিচারের প্রাক্কালে দেয়া নাৎসি বাহিনীর পক্ষের আইনজ্ঞের দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত। নাৎসি হত্যার সপক্ষে তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের অধিকার আছে এমন কর্মকাণ্ডের যদি রাষ্ট্র মনে করে কেউ রাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে জাতিসঙ্ঘ এই ঘোষণা দেয়।

সম্প্রতি ব্রিটেনের বিখ্যাত মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা থ্রানসিসকা ক্লুগ বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের ‘ঘোষণাটি আজকের দিনের কথা ভেবেই তৈরি হয়েছিল’। তিনি তার ‘এ ম্যাগনা কার্টা ফর অল হিউম্যানিটি’ বইয়ে এর বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন।

বাস্তবায়ন সম্পর্কে যে প্রশ্নটি বারবার উঠে এসেছে তা হলো কে এর বাস্তবায়ন করবে? লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক কনর জিয়ার্টির মন্তব্যটিতে এর জবাব স্পষ্ট। সম্প্রতি লন্ডনে এক আলোচনায় তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এ দায়িত্বটি পুরোপুরিভাবে সরকারের। কারণ, এটা বাস্তবায়ন করতে বিশ্বসংস্থা কখনই পারবে না, যদি দেশের সরকার তার জন্য সহযোগিতা না করে। চিলির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাচলেট বলেছেন, ‘এটা ঠিক নয়, এই অধিকার বাস্তবায়ন পরাশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। অথবা এটা কোনো একসময় হারিয়ে যাবে। এটা থাকবে, কারণ এই ঘোষণা বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের।’

বিশ্বব্যাপী এক সার্ভেতে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে মানুষ এখন এই মানবাধিকার সম্পর্কে জ্ঞাত এবং তারা এর ব্যবহারে আগ্রহী। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী প্রায়ই এর বাধা প্রদান করছে। বিশেষ করে সেসব দেশে যেখানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত অথবা নিয়ন্ত্রিত। স্বৈরাচার সরকার অথবা ক্ষমতালোভীরা নিজেদের স্বার্থকে বাস্তবায়ন করতে বেশির ভাগ সময় গণতন্ত্রের লেবাস পরছে। সাধারণ জনগণের পক্ষে এই ছদ্মবেশ বা প্রতারণা বোঝা কঠিন। যে বিশাল প্রচারণার আশ্রয় এই প্রতারকেরা নেয়, তা ভেদ করে সত্য চিত্রের কাছে পৌঁছা সম্ভব নয়। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন মানুষের অনেক কল্যাণে নিয়োজিত, তেমনি অকল্যাণের জন্যও এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এই পথ ধরে স্বৈরাচারী শক্তি গণতন্ত্রের বাহনে সওয়ার হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে তাদের নিজের এবং গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করছে জনগণকে বঞ্চনার মধ্যে রেখে।

এই অসম্ভব অবস্থাকে প্রতিরোধ করতে পারে বা এর সম্মুখীন হতে পারে এই বিশ্ব ঘোষণা। অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মানবাধিকার নিশ্চিত করার নামে কৌশলে আইনের মারপ্যাঁচে এই শক্তিগোষ্ঠী জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। এ কথা সত্য এবং সারা বিশ্বে এর প্রতিফলন দেখা যায়। তাই ম্যাডাম ব্যাচলেট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে নির্বাচন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে, যার মাধ্যমে এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নেয়।

এটা সত্য, মানবাধিকার বাস্তবায়নে নানা সমস্যাও দেখা যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি এই অধিকার আদায় করতে গিয়ে অন্যের ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অথচ দুই পক্ষই তাদের অধিকারের অধিকারী। আবার কখনো কখনো মানবাধিকার কখনো কিছু সাধারণ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পরে। এমন ঘটনা সারা বিশ্বের নানা দেশে ঘটেছে।

এমন সঙ্ঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডাসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশ এমন সমস্যার সমাধান করেছে প্রতিটি কেস অনুসারে। এসব বিচার থেকে কয়েকটি সাধারণ ধারণা নির্বাচন করেছে এসব দেশের বিচারালয়গুলো। যেমন- ১. কোনো অধিকারই নিশ্চিত নয়, ২. অধিকারের কোনো শ্রেণী বিভাগ নেই, ৩. দাবি অনুসারে অধিকার পুরো আদায় হয় না, ৪. পুরো বিষয়, ঘটনা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধ বিপন্ন হলে তার বিচার করতে হবে, ৫. কতটুকু হস্তক্ষেপ হচ্ছে (অধিকারের ওপর সত্যিকারের কতটুকু বর্তায় যার জন্য সংঘর্ষ), ৬. আক্রমণের লক্ষ্যকে রক্ষা করা, পারিপার্শ্বিকতা নয়; ৭. দুই পক্ষের অধিকার রক্ষা করাকে গুরুত্ব দেয়া এবং ৮. নির্ধারিত প্রতিরক্ষা কখনো এক দলের অধিকারকে সীমিত করে অপর দলকে সে অধিকার দিতে পারে।

জাতিসঙ্ঘ দু’টি চুক্তিপত্র (কভেন্যান্ট) গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার সবার জন্য। একটি হলো ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এবং অপরটি ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন ইকোনমিক, সোস্যাল অ্যান্ড কালচারাল রাইটস (আইসিইএসসিআর)। দু’টি চুক্তিপত্র হওয়ার কারণ হলো একটি চুক্তিপত্র হলে এতে পুঁজিবাদী, ফেডারেল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহৃত হতো, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুসারী রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দু’টি ‘কভেন্যান্ট’ তাদের দেশের আইনের সাথে সংবিদ্ধ করেনি।

এটা একটা বাস্তবতা যে, বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই বিশ্বসংস্থার মানবাধিকার ঘোষণার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেনি, বরং তারা এই ঘোষণার বক্তব্যগুলো সংবিধান বা আইনের অন্তর্গত করার সময় কিছু কাটছাঁট করে থাকে। তাই কোনো মানুষই এ ঘোষণায় বর্ণিত দাবিগুলোর পূর্ণ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে না।

তবে একটি ভালো দিক হলো প্রায় সব দেশেই এই অধিকারগুলো বাস্তবায়নের জন্য নানা আন্দোলন চালু রয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। অবশ্য এটাও সত্য, তাদের কর্মকাণ্ড সহজ ও নির্বিঘœ হচ্ছে না।

এর নজির খুঁজতে অতীতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ২৫ ডিসেম্বরের খবরের কাগজের পাতা মেললেই এর সাক্ষ্য মিলবে। যেমন একটি পত্রিকার প্রধান হেডলাইন- হামলা, গুলি রক্তাক্ত প্রার্থী। এ ঘটনাগুলোর জবাবে একজন প্রার্থী বলেছেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে না।’ প্রার্থীদের বক্তব্যেও নানা শঙ্কা ও সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। যেমন এক পক্ষ বলছে, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন এবং শান্তিপূর্ণ ভোট চাই’ আবার সরকারি পক্ষ বলছে ‘সেনা নামায় কারো উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই।’ আবার তারা বলছে, ‘আবার ক্ষমতায় এলে বস্তিবাসীরা ফ্ল্যাটে থাকবে।’ বাসে খবরের কাগজের এই হেডিং পড়ে এক যাত্রী বললেন, ‘তাহলে ভাসানটেকের ফ্ল্যাটে একজন বস্তির লোকও কেন স্থান পেল না।’ হয়তো বা রাজনীতির প্রচারণা এমনই হয়ে থাকে। কথা ও বাস্তবে কখনো মিল থাকতে নেই।

নির্বাচন এলে ক্ষমতাসীনেরাও শঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত থাকে। বিশেষ করে যারা বিকল্প পদ্ধতিতে অথবা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় যায়। এ জন্যই সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বিশ্বস্ত বাহিনীগুলোকে মোতায়েনের দাবি ওঠে।
নির্বাচন মানবাধিকারের অন্যতম পথ। যখন এই পথকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন অবশ্যই বলা যাবে মানবাধিকারকেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ কে এই অধিকার পাবে এবং কে পাবে না।

মানবাধিকার ঘোষণার এই ৭০ বছর পূর্তিকালে অধ্যাপক জিয়ার্টি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘোষণা তৈরির অন্যতম প্রধান সহায় ছিল, এখন তারা এখান থেকে সরে যাচ্ছে অথবা সরে গেছে। ইউরোপিয়ান হিউম্যান রাইটস ল রিভিউতে এক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই হিসাব-নিকাশ করে দুইমুখী পন্থায় চলে।’ কপটতা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাযুদ্ধ-পর সময়ে মানবাধিকার বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের দিন কালে ‘প্রথমে আমেরিকা’ নীতির কারণে এবং তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ জন্য এই নেতৃত্ব সমালোচনায় পড়েছে।

বিশ্বের মানবাধিকারের এই ভঙ্গুর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যদি তৃতীয় বিশ্বের দিকে দৃকপাত করা যায়, তবে প্রথমেই যে চিত্র ভেসে উঠবে তা উদ্বেগজনক। এখানে সব অধিকার শুধু ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাসীনদের কব্জায়। অধিকার এবং সে অধিকার যা-ই হোক, তা শুধু ক্ষমতাবানদের। এর অবস্থিতি এত শক্ত যে, সাধারণ মানুষ সব অন্যায়কে স্বাভাবিক মেনে নিচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, এর কি শেষ নেই? জবাব সহজ পৃথিবীতে কেউই অবিনশ্বর নয়। সেই প্রবাদ সবার জানা। আজকের রাজা, কালকে ভিখারি। সে ভিখারি কারো সমর্থন বা সহমর্মিতা লাভ করে না।

এই বক্তব্য অনুসরণ করে, একটি মন্তব্য অবশ্যই করা চলে। মানবাধিকার বাস্তবায়নের সাথে সবার ভাগ্য জড়িত। যারা আজ এর ব্যবহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছে, তারা এই একই পথে নীত হয়ে বাধ্য হবে অধিকারের আন্দোলনে যোগদান করতে।

এটি একটি বাস্তবতা যে, এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার কখনো পুরোপুরি ভোগ করতে পারেনি। অতীতে সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য তা ভোগ করা যায়নি। আবার যখন স্বাধীনতা এলো, তখন ক্ষমতা দখলদারেরা সেই আসনে বসে জনগণের স্বার্থকে বিপন্ন করল। অথচ মানবাধিকার নিশ্চিত করলে, তা সবার জন্য প্রযোজ্য। ফলে সবাই এর সুফল ভোগ করবে। তাই সবাই আশা করে, ক্ষমতাবান বা তাদের সঙ্গীরা যদি শুধু নিজেদের জন্য না ভেবে সবার জন্য ভাবে, তাহলে সবার মঙ্গল এবং দেশের মঙ্গল। নতুবা যখন অমঙ্গল আসে, তা সবাইকে স্পর্শ করে ক্ষমতাবানদেরসহ। এই অতীব স্পষ্ট সত্য অনুধাবন করা বাংলাদেশে এখন হয়তো বা অন্যতম প্রধান বিষয় হওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশ এই মইয়ের সর্বনিম্নস্তরে। মানবাধিকারের মইয়ের সর্বনি¤œ স্তর থেকে ওপরে উঠে আসতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইউক্রেনের ১৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও চলছে মেসি ঝলক, আবারো জোড়া গোল উল্লাপাড়ায় গাড়িচাপায় অটোভ্যানচালক নিহত থাইল্যান্ড সফর শেষে সোমবার দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী বিপরীত উচ্চারণের ঈদ পুনর্মিলনী ফরিদপুরে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার করা হবে : র‌্যাব মুখোপাত্র ধর্মঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন বন্ধ, দুর্ভোগে মানুষ আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে জাগিয়ে তোলা : গাজা ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রকে চিরস্থায়ীভাবে বাকশালে পরিণত করতেই খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখেছে সরকার : রিজভী বন্যার আশঙ্কায় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা

সকল