২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সবাই সন্দেহে

সবাই সন্দেহে -

কুশল প্রশ্ন করা ভদ্রতার অংশ হিসেবে সর্বত্র গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কেউই শত্রু ছাড়া কারো খুঁটিনাটি প্রতিটি মুহূর্তের তথ্য জানাকে সহজভাবে গ্রহণ করে না। সে জন্যই ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সামাজিক বিধি-নিষেধের এক অঙ্গ মনে করা হয়। এমনটি হলেও, জানার চেষ্টার শেষ নেই।

এই চেষ্টাকে আধুনিক প্রযুক্তি অনেকখানি সহজ করে দিয়েছে। বিখ্যাত মার্কিন লেখক ফিলিপ কে ডিকের এক মন্তব্য বিশ্বের বোদ্ধাজনের বক্তব্যের প্রতিফলন। ডিক লিখেছেন- ‘এখন বিশ্বে সমগ্রতাবাদ (টোটালিটরিয়ানিজম) এমনভাবে জেঁকে বসেছে যেকোনো মুক্ত, সত্যবাদী প্রিয় মানুষকে বাঁচতে হলে তাকে হতে হবে প্রতারক (চিট), মিথ্যাবাদী, কৌশলে পরিহারকারী (ইভেশন), ভুয়া বেশধারী, ভুয়া দলিলধারী, কারো গ্যারেজে তথ্য সংগ্রহের জন্য ক্যামেরা স্থাপনকারী।’ এক কথায় নজরদারিতে সবাইকে থাকতে হবে।

অথচ এই নজরদারিকে সামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত নিচু কর্মকাণ্ড বলে মনে করা হয়। কিন্তু এখন রাষ্ট্রসহ সব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এটা সত্য, কিছু নজরদারির প্রয়োজন। নতুবা গণবিরোধীরা সচ্ছন্দ্যে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে। ব্যক্তিগতপর্যায়ে নজরদারির ক্ষমতা সীমিত। কারণ সব কিছু সে নিয়ন্ত্রণ করে না বা তার মালিকানায় নেই। শুধু রাষ্ট্র এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো আইনগতভাবে, আবার কখনো এর বিশালত্বের কারণে এর নিয়ন্ত্রণকারী এবং মালিক।

নজরদারির মূল উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য নির্ভর করে যে এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তার প্রয়োজনের ওপর। সে প্রয়োজন যদি কল্যাণের জন্য হয়, তাহলে এই নজরদারিকে সবাই অভ্যর্থনা জানায়। কিন্তু তা জনকল্যাণমূলক না হয়ে যদি নিবর্তনমূলক হয়, তখন এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয়। দেখা গেছে, বেশির ভাগ নজরদারি হয় উদ্দেশ্যমূলক এবং এই কর্মকাণ্ডে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নেতৃত্ব দেয়।

শক্তিমানদের অন্যতম শক্তির হাতিয়ার নজরদারি। তাই কল্যাণের জন্য হলেও নজরদারিকে কেউ পছন্দ করে না। এটা সত্য, সৃষ্টিকর্তাও তার সৃষ্ট সব জীবের ওপর নজর রাখেন যেন তার সৃষ্টিতে বিপর্যয় না ঘটে। শক্তিমানেরা সৃষ্টিকর্তার এই ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়। সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে পারে শক্তিমানদের এই অন্যায় ইচ্ছা, তখনই এর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সবাই তাকে সমর্থন করেন।

রাজনীতি বা সামাজিক নীতির ভিত্তি এই কল্যাণকামী বক্তব্যের ওপর। কিন্তু ক্ষমতাবানেরা এই নিয়ন্ত্রণকে ব্যবহার করতে চায় নিজের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এবং স্বার্থের জন্য। তারা এটার চর্চা করে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। আসলে অতীতে এই নিয়ন্ত্রণ ছিল শুধু শক্তিভিত্তিক। যার যত ক্ষমতা আছে, তার তত নিয়ন্ত্রণ। একসময় ধনের ওপর নিয়ন্ত্রণকারীদের ক্ষমতাবান বলে মনে করা শুরু হলো, যা আজো বিরাজমান। এই ধন দিয়ে শক্তিকে ক্রয়-বিক্রয়সহ নানা কর্মকাণ্ডে নিয়োগ করা হয়। ফলে জনগণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বলে পরিচিত গণতন্ত্রও অনেকাংশে এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে বোদ্ধাজনেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এখন সবচেয়ে ভয়াবহ কর্মকাণ্ড হচ্ছে অতীতের নজরদারির নব্য আবরণ। আগেই বলা হয়েছে, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নজরদারির ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। এখন এর বিস্তৃতির চিত্র সত্যিই ভয়াবহ।

সরকারসহ সবাই তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ করছে। যেমন কেউ চাকরির জন্য দরখাস্ত করল। এখন তাকে তথ্য দিতে হবে এটা স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো কী তথ্য দিতে হবে। অবশ্যই একটা পরিচয়ে তার জন্মস্থান, পিতা, পড়াশোনা ইত্যাদির তথ্য চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখন এর পরিধি বেড়েছে। যেমন তার রক্তের গ্রুপ, কী সে ভালোবাসে, সে কোন রোগের চিকিৎসা করেছে। এমন সব অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্যও দিতে হয়।

কেউ কেউ বলছেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্যগুলোই এখন বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। অনেক কারণের মধ্যে একটি অবস্থার ওপর তারা জোর দেন। আজকের দুনিয়ার সামাজিক কর্মকাণ্ড মানুষের মনের ওপর চাপ দেয় সবচেয়ে বেশি। তাই তার শারীরিক ক্ষমতা এবং সুস্থতার পরিধি জানা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। নতুবা কর্মক্ষেত্রে এই জটিল অবস্থার নানা চাপকে মোকাবেলা করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।

অপর দিকে, যারা সমাজটাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চায় কেমন করে স্বল্প প্রচেষ্টা ও সময় এবং মেধা ব্যয় করে এ কাজটি করা যায় তার পথ খোঁজে। এ জন্যই সমাজের সদস্যদের মানসিক অবস্থিতি তাদের জানা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে ‘মগজধোলাই’ বলে একটি কথা বহুল প্রচলিত। কারণ এ পদ্ধতির নানা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীগতভাবে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।

তবে এখন এই ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠান সহজেই করতে পারে। সরকার বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই প্রয়োজন জনগণের ইচ্ছার ওপর আর নির্ভরশীল নেই। যেমন যখন কেউ চাকরি প্রার্থী হচ্ছে বা সরকারের সাহায্যপ্রার্থী হচ্ছে তাকে অবশ্যই তার নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে হয় এবং সেই সাথে তার পূর্ব পরিচয়ও। তাকে আঙুলের ছাপ দিতে হয়। রক্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সাহায্যে এসব তথ্য থেকে সহজেই সরকার প্রয়োজনীয় তথ্যের ভাণ্ডার তৈরি করছে। যেমন যখন চোখের ছবি নেয়া হয়, তখন বর্তমান উন্নত পদ্ধতিতে শরীরের সব খবর পাওয়া যায়। বলা হয় চোখের সাথে শরীরের ১৪০০০ সংযোগ আছে। চোখের ছবি থেকে জানা যায় এই সংযোগের কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত এবং সেটা অনুমান করে তারা সঠিকভাবে জানতে পারছে শরীরের কোন অংশটি অসুস্থ বা নিরাময়ের প্রয়োজন। অবশ্য এই প্রযুক্তি এখনও বহুল প্রচারিত বা ব্যবহৃত নয়।

বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে নজরদারি সহজ হয়ে পড়েছে এ জন্য যে, মানুষ এর ব্যবহারের বাইরে যেতে পারছে না। যেমন কেউ টেলিফোন করল, তখন তার স্বরের সাথে মিলে যায় এমন তথ্য ভাণ্ডার থেকে নিয়ন্ত্রণকারীরা তৎক্ষণাৎ সব তথ্য পেয়ে যায়। মার্কিন কোম্পানি শোযাব ব্যবহার করে স্বরভাণ্ডার (ভয়েস রিকগনিশন), অ্যাপল ব্যবহার করে আঙুলের ছাপ; ওয়েলস ফারগো ব্যবহার করে চোখের ছাপ কারো পরিচিতিকে যাচাই করার জন্য। এখন নতুনভাবে হৃদয়ের কম্পনের মাপও নেয়া হচ্ছে কোনো মানুষের পরিচিতি হিসেবে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই ব্যবস্থাগুলো চালু থাকবে নাকি অবান্তর হয়ে পড়বে? এটা নির্ভর করে জনগণ এই ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে নাক গলানো কতটুকু পছন্দ করবে এবং বিভিন্ন দেশ তার দেশের মানুষের ব্যক্তিগত কতটুকু নাক গলাতে দেবে? এর মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, এই দেশটি ব্যক্তিগত বিষয়টি নিয়ে যেমন সোচ্চার, তেমনি সারা বিশ্বের মধ্যে এরাই ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি করে থাকে। সে দেশের মাত্র একটি স্টেটে এসব ব্যক্তিগত তথ্য সর্বসাধারণের জন্য উন্ম্ক্তু নয়। সবচেয়ে মজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারালয়গুলো এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী সরকার এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে।

যেমন সরকার মানুষের টেলিফোন লাইন-সেলফোনসহ প্রতি মুহূর্তে নজরদারিতে রাখছে। যেহেতু প্রতিটি নাগরিক তার টেলিফোনের তথ্যসহ সব শারীরিক এবং বাহ্যিক তথ্য দিলেই শুধু নাগরিক সুবিধা বা নাগরিক বলে পরিচিত হতে পারে, তাই সরকারের পক্ষে এর ভাণ্ডার নির্মাণ সহজ। তাই যখনই কেউ টেলিফোন করল এবং সে কী বলল এবং কাকে বলল, তা যদি সরকার বা প্রতিষ্ঠান জানতে চায়, তা জানা তাদের পক্ষে অত্যন্ত সহজ।

প্রশ্ন না করেই সরকার জানতে পারে একজন নাগরিক কী খাচ্ছে, কোথায় আছে, কোথায় যাচ্ছে, এমনকি সে কী স্মরণ করছে। বিখ্যাত লেখক জন ডাবলু হোয়াইটহেড লিখেছেন, ‘এখন সরকারের পক্ষে এই তথ্যভাণ্ডারের কল্যাণে এটা সহজ, কে কী কথা ভাবছে।’ বক্তব্যটি একটু আশ্চর্যজনক মনে হলেও, এটাই এখন বাস্তবতা। সব কিছুই প্রযুক্তির কল্যাণে। এজন্য সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ সব সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্যের ভাণ্ডার বিশেষ করে শারীরিক তথ্যের ভাণ্ডার নির্মাণে আগ্রহী।

এখন বিশ্বের সব দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী হয়ে এই ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার নির্মাণে ব্যস্ত। এ ভাণ্ডার থাকলে শক্তিমান পক্ষে অতি সহজেই জনগণকে মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই এখন সর্বত্র ডিএনও তথ্যভাণ্ডার নির্মাণের জোয়ার চলছে। কারণ সরকার জানতে চায় জনগণ তাদের কোন কর্মকাণ্ডে কিভাবে সাড়া জাগাবে।

সারা বিশ্বে সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠানকে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের ব্যাপারে অনেক বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু এটা এখন আর মানা হচ্ছে না। ফলে জনগণ হয়ে পড়ছে গিনিপিগ এবং ক্ষমতাবানেরা হচ্ছে শুধুই ভক্ষক।

এখন মুখের ছবির এক নতুন সফটওয়্যার চালু হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এটা ২০০৮ সালে শুরু করে দশ কোটি আঙুলের ছাপ এবং সাড়ে পাঁচ কোটি মুখের ছাপের তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি করেছে। মুহূর্তের মধ্যে এই ছাপের মানুষের তথ্য সামনে এসে যায়। এখন এফবিআইকে অনুসরণ করছে বিশ্বের সব গোয়েন্দা সংস্থা। হোয়াইটহেড দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত তথ্যে সরকারি অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পরিবর্তে দেশের কোর্টগুলো সরকারের এই অনাবশ্যক নজরদারিকে সমর্থন দিচ্ছে।’

নেক্সট জেনারেশন আইডেন্টিফিকেশন ডাটাবেজ (এনজিআইডি) বলে আখ্যায়িত এই তথ্যভাণ্ডারে এসব তথ্য থাকছে। এসব তথ্য নিরপরাধ মানুষের তথ্যের পাশাপাশি অপরাধীদেরও থাকছে। ফলে সবাই সন্দেহের মাঝে আছে বলে প্রতিভাত হতেই পারে। অর্থাৎ এই নজরদারির কারণে সব মানুষই অপরাধী।

প্রযুক্তি যেমন অপরাধী শনাক্ত অনেক সহজ করে দিয়েছে, তেমনি (প্রযুক্তিতে) ওয়াকিবহাল অপরাধীদের কর্মকাণ্ড সহজ করে দিয়েছে। কেমন সহজ? যেমন কোনো অপরাধী সিগারেট খেল, বা সিগারেট ধরালো, সব জায়গায়ই তার আঙুলের ছাপ পড়ে যায়। গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সিওডিআইএস বা কাডিজ (কম্বাইন্ড ডিএনএ ইনডেক্স সিস্টেম) বলে এক তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ করেছে। সে দেশের ৫০টি স্টেটই এর অনুসরণ করে এবং তারা একে অন্যের সাথে এ তথ্যগুলো আদান-প্রদান করে থাকে। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন এ বলে যে, এই আদান-প্রদানকালে অনেক ভুল হয়। তাতে বেশ বিপর্যয় হচ্ছে। ড. হোয়াইটহেড বলেছেন, ‘এ কর্মকাণ্ড সবাইকে সন্দেহের তালিকায় প্রেরণ করছে।’ তিনি আরেকটি ভয়াবহ বিষয় উল্লেখ করেছেন। ‘দুর্ভাগ্য যে আজ আমরা এমন অবস্থার মধ্যে আছি যেখানে প্রযুক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে, নজরদারিতে রাখছে, আমাদের অপরাধী বানাচ্ছে এবং দণ্ড দিচ্ছে।

কিন্তু এ প্রযুক্তির জবাবদিহিতা জনগণের কাছে নয়। জবাবদিহিতা সরকার এবং যৌথ সংস্থার নিয়ন্ত্রণকারীদের কাছে।... চতুর্থ সংশোধনীর (মার্কিন সংবিধানের) উদ্দেশ্য ছিল সরকারি কর্মচারীরা ওয়ারেন্ট ছাড়া এবং কোনো রকমের প্রমাণ ছাড়া কোথাও বা কাউকে অনুসন্ধানে আনতে পারবে না বা আটক করবে না। এখন তেমনটি নেই। পুলিশ ইচ্ছা করলেই সবাইকে আটক করতে পারে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা হয়তো ভাবতেই পারেননি জনগণ সরকারের ব্যক্তিগত বিষয়ে বিশাল নজরদারির শিকার হবে এবং তা থেকে তারা বাঁচতে চাইবে। তারা প্রতি মুহূর্ত সেলফোন ইত্যাদির মধ্যে নজরদারিতে। ফলে মানুষ প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারছে না। অন্য কথায় সরকার তার নজরদারির কোনো ফাঁক রাখেনি।

এই সরকারি নজরদারির কারণে জনগণ বা কোনো গোষ্ঠী প্রতিবাদ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। কারণ সে তথ্য আগেই সরকারের বা ক্ষমতাবানদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে এসব কর্মকাণ্ড ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব সরকারি বা ক্ষমতাবানের প্রতিরোধের কর্মকাণ্ডগুলো কৃতকার্য হচ্ছে এ জন্য যে, মানুষ জন্মগতভাবে নিরাপত্তা চায় বা নিরাপদ সময় খোঁজে। তারা স্বাধীনতা নিয়ে মাথা ঘামায় না।

এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ভীতির সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নতুন সরকারি কর্মচারীর নিয়োগের পর। এদের একজন মধ্যপ্রাচ্যের যুগব্যাপী স্বাধীনতা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে যে যুদ্ধ এবং ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তার নজির ইতিহাসে নেই তার হোতা। তাহলে কি সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ আবার নতুনরূপে আবির্ভূত হবে?

লেখক পেপে এসকোবার সামনের অজ্ঞাত সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন বিখ্যাত ইংরেজ কবি ইয়েটসের এক পঙ্ক্তি উদ্ধৃতি দিয়ে। ইয়েটস বলেছিলেন, ‘কোনো ভয়াবহ পশু এই অন্ধকার দিয়ে আসছে মুক্তিকে কেড়ে নিতে?’ কেউ কেউ বলছেন, ক্ষমতাবানেরা এর মধ্যেই এই ভয়াবহ জন্তুর রূপ নিয়ে স্বাধীনতাকে কব্জা করে ফেলেছে। মুক্তির উপায় শুধু একটিই। জনগণের সতর্কতা এবং ঐক্য। আর স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প কর্মকাণ্ড নেই।


আরো সংবাদ



premium cement