০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কালে কালে ঈদুল ফিতর

-

অর্ধ শতাব্দী আগের রোজা ও ঈদের কথা মনে আছে। তখন মানুষের হাতে এত কাঁচা টাকা ছিল না, তাই রোজা ও ঈদে খরচের একটা সীমাবদ্ধ বাজেট থাকত। সময়ের পরিবর্তনে মানুষের আয় বেড়েছে তাই খরচও বেড়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষই ছিল কৃষিজীবী এবং নি¤œ আয়ের। বাড়ির ফসল বিক্রির টাকাই ছিল তাদের আমোদ-প্রমোদের অর্থের উৎস। সময়ের পরিবর্তনে মানুষ শিক্ষিত হয়েছে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছে। ওই আমলে পরিবারের স্বাভাবিক হাট-বাজার, কাপড় চোপড়, চিকিৎসা, মেহমানদারি ও লেখাপড়া সব কিছু চলত ধান-চাল-পাট অথবা ফসল বিক্রির টাকায়।
অন্য দিকে দাদীর কাছে অর্থের ভাণ্ড থাকলেও তা খরচ করা তো দূরের কথা, গোপনে তা গুনে দেখার মানসিকতা ছিল না। স্বামী ভক্তি বলতে যা বুঝায়, তা পুরোপুরি বর্তমান ছিল সংসারে। তারা কেবল জানত স্রষ্টার পরে কাউকে সিজদাহ করার নির্দেশ থাকলে তা হতো স্বামীকে। এখনো মা, খালা, মামী ও চাচীদের মধ্যে এই মানসিকতা বিদ্যমান আছে। এটা নারীকে চেপে রাখা নয় বরং পুরুষ বা স্বামীদের সম্মানের সেকালের লালিত ঐতিহ্য। রোজা বলতে আমরা ছোটরা বুঝতাম সন্ধ্যায় রকমারি ইফতারি, পেঁয়াজু, ছোলা, কলা, মুড়ি, ডালের বড়া ও গুড়ের পায়েস খাওয়া। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানাপিনা ও কিছু বৈধ কাজের নিষেধাজ্ঞা এত সব মাথায় ঢুকত না। সে আমলে মাঝে মধ্যে মসজিদে ইফতার অনুষ্ঠানে ইফতারি পরিবেশন করা হতো কলার পাতায়। মেনু হতো গুড়ের পায়েস। আর ঈদ-কোরবানি বলতে বুঝতাম নতুন জামা-পাজামা, সেমাই, পায়েস, পোলাও ও গোশত খাওয়া আর ফুর্তি করা। রোজার সময় সে আমলের কথায় আসা যাক। আমরা ছোটরা রোজা রেখেও নামাজে সক্রিয় ছিলাম না।
রমজান এলে ইফতারিতে মেনু ছিল আলো চালের জাউ যা শুধুমাত্র পানি দিয়ে রান্না হতো, তার সাথে গুড় পরিবেশন করা হতো। মাঝে মধ্যে ছোলা ভাজি হতো সাথে মুড়ি। কখনো কখনো কলা, ডালের বড়া অথবা আলো চালের পায়েস যাতে নারকেল, তিলের গুঁড়া ও গুড় সংমিশ্রণ থাকত। আশি সাল পর্যন্ত পল্লী অঞ্চলে বেগুনি, আলুর চপ, খেজুর, শশা-খিরাইয়ের তেমন আয়োজন ছিল না। সালাদ, আংগুর, মাল্টা, কমলা, আপেল, জিলাপি, হালিম, রকমারি খাবার ও শরবতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তারাবিতে গ্রামে খতমে কুরআনের কোনো আয়োজন ছিল না। সূরা তরাবি এবং তারাবি শেষে মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ পাঠ করে শুনানো হতো মুসল্লিদের সওয়াবের আশায়। ইসলামী বই বলতে তখন বারো চান্দের ফজিলত, বেহেশতি জেওর অথবা মোকছেদুল মোমিনই ছিল তখনকার উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় গ্রন্থ। বেশি হলে বিবি রহিমা অথবা বিবি খাদিজার জীবনী। ঈদে নতুন কাপড় চোপড়ের ব্যবহার কম হতো। দু-চার বছর পর নতুন জামা ভাগ্যে জুটত। বেশির ভাগ বছরই পুরনো কাপড় পরিষ্কার করে ঈদ করতে হতো। তখন কাপড়-চোপড় আয়রণ করার কথা কোনো দিন মাথায়ও আসেনি। পঁচাত্তরের আগে ঈদে সাধারণ পরিবারে সেমাই, পায়েস, সুজির কারবার ছিল না বললেই চলে। ঈদুল ফিতরে সাদা ভাতের সাথে মুরগির গোশত তাও আবার দুই থেকে তিন পিসের বেশি নয়, বাকি ঝোল দিয়েই হতো পরিবেশনা। তখন ঈদুল ফিতরের ঈদে গরুর গোশতর কারবার তেমন ছিল না। মাঝে মধ্যে হতো।
এখন ছেলেমেয়েরা দুই ঈদে বায়না ধরে তাদের দুই ঈদেই নতুন কাপড় দিতে হবে। কোরমা, পোলাও, বিরিয়ানি, সেমাই, সুজি, মোরব্বা, জর্দ্দা, চটপটি আর কোল্ড ড্রিঙ্কসসহ আরো নানা মজাদার খাদ্য ঈদে এখন সাধারণ মেনু হিসাবে গণ্য হয়েছে। তখন খাওয়ার সময় ভাগ করতে দাদীর অবস্থা খারাপ হতো। এখন হিসাব করে দেখি দাদীকে মনে হয় না খেয়েই শুকরিয়া আদায় করতে হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে দাদীর জন্য প্রাণভরে দোয়া করি! আল্লাহ যেন তার ভাগের গোশত নিজে না খেয়ে পরিবারের মাঝে কুরবানি কবুল করে তাকে জান্নাত দান করেন!
তখন ঈদ সেলামির সংস্কৃতি ছিল না বললেই চলে। পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা, এক আনা, দু’আনা, পঁচিশ পয়সা অথবা পঞ্চাশ পয়সা বেশি হলে এক টাকা। প্রায়ই ছয় পয়সায় এক আনার ভুনভুনি অথবা দশ পয়সার মালাই আইসক্রিম অথবা মদন কটকটি। এখন নতুন জামাকাপড়ের সাথে সম্মানজনক বাড়তি সালামি। সালামি মা-বাবা, দাদা-দাদী, মামা-খালা অথবা চাচা-ফুফুর সবারই অঙ্ক বরাদ্দ থাকতে হবে। এখন ঈদে মিষ্টি বা গোশত খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিঙ্কস, দই অথবা মাজাদার চটপটি না হলেই নয়। পাড়ায় পাড়ায় শামিয়ানার নিচে বিরাট বিরাট সাউন্ড বক্স নিয়ে রকমারি গানের পসরা বসিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস অথবা চটপটিসহ রকমারি সামগ্রী চড়া দামে বিক্রি এখন ঈদ সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। গরিব লোকদের জন্য জাকাত ও ফিতরা বিতরণ করা হতো। তবে ফিতরা গরিব প্রতি আট আনা থেকে সাধারণত দুই টাকার বেশি নয় এবং জাকাতের জন্য খুবই দুর্বল মানের পুরুষদের জন্য লুঙ্গি এবং মহিলাদের জন্য শাড়ির ব্যবস্থা হতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাঝে মধ্যে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন হতে শুরু হলো, এখন তার বালাই নেই। এই ক্রীড়া অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশী ভাগে ভাগ হতো। যারা গ্রামে থাকত তারা দেশী, আর যারা বিদেশে বা শহরে থাকত তারা বিদেশী। কখনো কখনো বিবাহিত বা অবিবাহিতদের মাঝে খেলা হতো। তাদের বলা হতো বিয়েধারী-অবিয়েধারী খেলা। এতে মজা ছিল ছেলে-বাপে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, চাচা-ভাতিজা পক্ষ-বিপক্ষে খেলত। হ


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশ-সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে ইউরিয়া সার কারখানার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন আগামী ২ বছর উন্নয়নশীল এশীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশ থাকার আশা এডিবি প্রেসিডেন্টের চুয়াডাঙ্গায় আগুনে পুড়ে পানবরজ ছাই মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, রিমান্ডে নেয়া হবে : ডিবি বৃহস্পতিবার সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ভূরুঙ্গামারীতে চিকিৎসকের কপাল ফাটিয়ে দিলেন ইউপি সদস্য ‘পঞ্চপল্লীর ঘটনা পাশবিক, এমন যেন আর না ঘটে’ টি২০ বিশ্বকাপের পিচ পৌঁছেছে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে বৃদ্ধের ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার

সকল