৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বর্ষাকালের গল্প

-

শাকিবের গল্প শুনতে খুব ভালো লাগে। গ্রাম থেকে দাদা আসছে শুনে তার মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ যখনই দাদা ঢাকায় আসেন তখনই তিনি মজার মজার গল্প বলেন। তাই শাকিব দাদার জন্য পথপানে চেয়ে থাকে। শুক্রবার সকালবেলা দাদা ঢাকায় পৌঁছলেন। দাদাকে দেখে সে খুশি হলো। দাদা খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেন। তারপর বিকেলবেলায় কাজের উদ্দেশ্যে নিউমার্কেটে গেলেন। ফিরতে ফিরতে তার রাত হলো। এ দিকে গল্প শোনার জন্য শাকিবের মনটা আনচান করছে। কলিংবেলের শব্দ শুনে শাকিব দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। দাদাকে দেখে সে বলে ওঠে, ‘এত দেরি করলেন যে? গল্প শোনাবেন না? গল্প শোনার জন্য সেই কখন থেকে বসে আছি।’ দাদা হাসতে হাসতে উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ শোনাব। আগে খাওয়া-দাওয়া করে নিই, তার পর শোনাব।’ খাওয়া-দাওয়া সেরে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে দাদা শাকিবকে বললেন, দাদা ভাই, বলো কী গল্প শোনাব? ‘এখন বর্ষাকাল। একটা বর্ষাকালের গল্প শোনান।’ দাদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘গল্পের বিষয়টি চমৎকার। আজ তোমাকে আমার ছেলেবেলার গল্প শোনাব। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বর্ষাকালে কী করতাম সেই গল্পই শোনাব।’ মনোযোগ দিয়ে গল্প শোনার জন্য শাকিব একটু নড়ে চড়ে বসল।
দাদা বলতে শুরু করেন। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। বর্ষাকাল এলে আমরা খুব মজা করতাম। গ্রামের সমবয়সী ছেলেমেয়েরা একত্র হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতাম। আমাদের গ্রামে যে ফুটবল খেলার মাঠটা দেখেছ তখনকার সময় মাঠটি আরো বড় ছিল। আমরা তখন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলা করতাম। অবশ্য মা-বাবার ভয়ে খুব বেশি সময় খেলতে পারতাম না। জ্বর আসা এবং শরীর খারাপের আশঙ্কায় মা-বাবার কড়া নিষেধ ছিল। ফুটবল খেলা শেষে ভৈরব নদীতে যেতাম গোসল করতে। মাঝে মধ্যে বন্ধুরা একত্র হয়ে মানকচুর পাতা মাথায় দিয়ে সারা পাড়া ঘুরে বেড়াতাম। আমের বীচি দিয়ে বাঁশি বানাতাম। বর্ষাকালে ভৈরব নদীতে তখন খুব ঢেউ থাকত। নদীতে সাঁতারকাটা নিয়ে আমরা বন্ধুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতাম। গ্রামের আশপাশে যেসব ডোবা-নালা ছিল তাতে খুব মাছ পাওয়া যেত; আমরা সেখান থেকে কত মাছ ধরেছি। ‘দাদা, সেখানে এখন মাছ পাওয়া যায় না?’ শাকিব জানতে চায়। ‘না দাদা ভাই, সেসব ডোবা-নালা আর দেখা যায় না। সেখানে এখন গ্রামবাসীরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। পুকুর-দিঘি নেই বললেই চলে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ভৈরব নদী এখন মজা নদী। যার বুকে কৃষকেরা হালচাষ করে। গ্রীষ্মকালে গ্রামবাসীরা এখন হেঁটে হেঁটে নদী পার হয়।’ এসব কথা শুনে শাকিবের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
‘তুমি জানো যে বর্ষাকালে গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে, পথের পাশে নদীর ধারে কিংবা কোনো কোনো উদ্যানে দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধযুক্ত অনেক ফুল ফুটে থাকে। এর মধ্যে অনেকেই আমরা সেসব ফুলের নাম জানি আবার অনেকেই সেসব ফুলের নাম জানি না। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তার নাম হারান। সে খুব ফুল ভালোবাসত। তার নেশা ছিল গ্রামের আনাচে কানাচে ফুটে থাকা নাম জানা, নাম না জানা ফুলগুলো সংগ্রহ করা।’ ‘দাদা উনি কোন ফুলগুলো সংগ্রহ করতেন?’ শাকিব দাদার কাছে জানতে চায়। দাদা বলেন, ‘কেয়া, কদম, কলাবতী, শাপলা, পদ্ম, ঘাসফুল, পানাফুল, কলমী ফুল, কচুফুল, ঝিঙেফুল, কুমড়াফুল, হেলেঞ্চাফুল, কেশরদাম, পানি মরিচ, পাতা শেওলা, কাঁচকলা, পাটফুল, বনতুলসী, নলখাগড়া, ফণীমনসা, উলটকম্বল, কেওড়া, গোলপাতা, শিয়ালকাটা, কেন্দার এবং এ ছাড়া বিভিন্ন রঙের অর্কিড। এসব ধরনের ফুলের সৌন্দর্যে সে সবসময় মুগ্ধ থাকত।’ দাদা আরো বলেন, ‘শোন দাদা ভাই, পাশ্চাত্য দেশে যেমন বসন্তকালকে ফুলের ঋতু বলা হয়, তেমন বাংলাদেশের বর্ষাকালকে ফুলের ঋতু হিসেবে মনে করা হয়।’ দাদার মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফুলের নাম শুনে শাকিবের ইচ্ছা করছে সেসব ফুলের পরশ নিতে। সে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে কল্পনার রাজ্যে ফুলকাননে ঘুরে বেড়ায়। দাদা তার গা স্পর্শ করলে সে আবার গল্পে মন দেন।
‘দাদা বর্ষাকালে কী কী ফল হয়?’ শাকিব প্রশ্ন করে। ‘শোন। অজস্র ফুল-ফলে ভরে ওঠে বর্ষাকাল। যদিও আম, জাম, কাঁঠাল গ্রীষ্মকালের ফল তবুও বর্ষাকালে এসব ফল সচরাচর বাজারে পাওয়া যায়। বর্ষার ফলের মধ্যে অন্যতম ফল হলোÑ আনারস, আমড়া, পেয়ারা, লটকন, জাম্বুরা, কামরাঙা, জামরুল, ডেউয়া, কাউ, গাব, আমলকী প্রভৃতি। নিজস্ব রূপ-রঙ, স্বাদ-গন্ধ নিয়ে আবির্ভূত হয় গ্রামবাংলার পরিচিত ফল করমচাও। এর লাল-সবুজের রঙ যেমন দৃষ্টি কাড়ে, তেমনি টক স্বাদের এ ফলটিও খেতে সুস্বাদু। তোমার কি এসব ফল খেতে ইচ্ছা করছে?’ শাকিব মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দেয় হ্যাঁ। ‘আগামী মাসে স্কুল ছুটি আছে তুমি আব্বার সঙ্গে গ্রামে যাবে। আমি তোমাকে সব ফল খাওয়াব। ফলের অনেক পুষ্টি।’ ‘বেশি বেশি ফল খেলে কী হয়?’ শাকিব জানতে চায়। উত্তরে দাদা বলেন, ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। বিভিন্ন জাতের ফলমূল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, দেহে কোনো ধরনের বিষাক্ত উপাদান প্রবেশ করলে ধ্বংস করে, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, শরীরকে চাঙ্গা রাখে, শরীরের ওজন কমাতে ও শরীর শীতল রাখতে সাহায্য করে, শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরণ করে, হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে এবং বিভিন্ন হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।’
দাদা শাকিবকে সাবধান বাণী শুনিয়ে বলেন, ‘শোন দাদু ভাই, বর্ষাকালে আমাদের কিছু বিষয়ে সাবধান থাকতে হয়। সেগুলো কী জানো?’ শাকিব মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেয়। দাদা বলতে থাকেন বর্ষায় বাসার দেয়াল বা জিনিসপত্র যদি স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়, আর তাতে যদি ছাতা পড়ে তাহলে সেসবের কাছাকাছি বাস করা সবার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে শ্বাসনালীর প্রদাহ, অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। মনে রাখবে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, রোদের অভাব, পাইপ ফেটে বা চুইয়ে পানি পড়ার কারণে ঘরের দেয়াল বা ছাদে ছত্রাক জন্মে। এর ফলে নাক দিয়ে পানি পড়তে বা হাঁচি বা চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। বর্ষার পানিতে সাপ, বিচ্ছুসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড় ভেসে আসে। এগুলো থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। এ ছাড়া বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রায়ই বন্যা হয়। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে আমরা যাতে রক্ষা পেতে পারি সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। গল্প করতে করতে রাত হয়ে যায়। শাকিব এক বিছানায় দাদার সঙ্গে শুয়ে থাকে।
সকালবেলায় শাকিবের বাবা বাজার থেকে মাছ-গোশত কিনে আনেন। এ ছাড়াও পটোল, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, চিচিংগা, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, করল্লাসহ বেশ কিছু সবজি কিনে আনেন। শাকিবের মা সেগুলো মজা করে রান্না করেছেন। ঢাকার কাজগুলো দাদা ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। আজই দাদা নাইটে মেহেরপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। দাদার চলে যাওয়ার কথা শুনে শাকিবের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। দাদা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, শিগগিরই আমি আবার ঢাকায় আসব। তখন ভিন্ন বিষয় নিয়ে তোমাকে নতুন গল্প শোনাব।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে : আইনমন্ত্রী রাজশাহীতে ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ‘বন্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করলে জনগণের ওপর কর চাপ কমবে’ বকশীগঞ্জে ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার, গ্রেফতার ৩ বকেয়ার কারণে বাংলাদেশে বিমান ভাড়া বাড়িয়েই চলছে বিদেশী এয়ারলাইন্স মামা সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী বিডি মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সাংস্কৃতিক উৎসব কামাল হত্যা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার ১২ চুক্তি হোক বা না হোক, রাফায় অভিযান চলবে : নেতানিয়াহু সমুদ্রসীমায় ২০ মে থেকে ৬৫ দিন‌ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে ২ নতুন মুখ ও নর্টিসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা শত কোটি টাকা আত্মসাৎ : বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক

সকল