৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কৃষি কর্মকর্তার পরকীয়া, বিচ্ছেদ ঘটালেন স্বামী

ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কৃষি কর্মকর্তার পরকীয়া, বিচ্ছেদ ঘটালেন স্বামী - ছবি : নয়া দিগন্ত

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন স্কুলশিক্ষক। পরবর্তীতে রংপুর জেলা নোটারির পাবলিক কার্যালয়ে এভিডেভিডে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে পরকীয়াকে।

অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম মো: শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন (৩৮)। তিনি উপজেলার ৫ নম্বর গয়াবাড়ী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য। মো: শহিদুলের স্ত্রী মোছা: সুলতানা রাজিয়া (৩৮) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

মামলা ও এভিডেভিড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে বিয়ের পরে তাদের তিন সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো: শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন সুলতানা রাজিয়া। শহিদুল তাদের পরকীয়া হাতে নাতে ধরে ফেলেন। পরবর্তীতে সুলতানা রাজিয়া ভুল স্বীকার করেন এবং শহিদুল মেনে নিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসার করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুলতানা রাজিয়া ও গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন পুনরায় পরকীয়া প্রেম শুরু করেন। এ ব্যাপার সুলতানার পরিবারের সাথে কথা বলেও সমাধান করতে পারেননি শহিদুল। এমতাবস্থায় সুলতানার সাথে সংসার করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে (২৭ মার্চ ২০২৪) ১, ২ ও ৩ তালাক দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন স্কুলশিক্ষক শহিদুল।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম জানান, ২০১২ সাল তারা প্রথম কথাবার্তা প্রথম শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে আমার স্ত্রীকে মুন চেয়ারম্যান বিভিন্ন লোভ-লালসা দেখাতো। শুটিবাড়ীর সিনেমা হল, রংপুরের বাসাবাড়ী ও তার একটি হাইচ মাইক্রোবাস এগুলো লিখে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। মূলত একটা মেয়ে মানুষকে নিজের আয়ত্ত্বে আনতে যা যা বলা দরকার তাই বলে মুন চেয়ারম্যান। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া ও গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন পরকীয়ায় লিপ্ত হন। এরপর থেকে তাকে আমি আমার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনাই। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায়ই আমাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। পারিবারিক আদালতে মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করতেছে। আমি একজন স্বামী হিসেবে অসহায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্যারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর জন্য আমাকে মিথ্যা মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাইভেটকারের ভেতরে কালো চাদরে ঢাকা ছিল মুন চেয়ারম্যান সেই গাড়িতে জোরজবরদস্তি করে তুলতে চাপ প্রয়োগ করে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) সাইফুল ইসলাম। পরে সময় পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইলের পাসওয়ার্ড নেয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় আমার ফেইসবুকে মুন ও সুলতানা রাজিয়ার পরকীয়ার কিছু পোস্ট ডিলেট করে পুলিশ। আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছে মুন চেয়ারম্যান। বর্তমানে আমার আইডি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। এতো কিছুর পরেও স্ত্রী, সন্তান ও সংসারের কথা ভেবে মীমাংসা করে সংসার করতে আগ্রহী ছিলাম। মীমাংসার পরেও আমার স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করেন মুন। আমার স্ত্রীর সাথে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের পরকীয়া ঠেকাতে না পেরে আদালত মামলা দেয়ার পর তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করি।

ডিমলা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছা: সুলতানা রাজিয়া জানান, মুনের সাথে কখনোই কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিল না। তবে আমার স্বামীর সাথে রাগ করে ফোনে উনার (শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন) সাথে যতোটুকু কথা হয়েছিল। বাস্তবে এর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবৈধ কর্মকাণ্ড করছে আমার স্বামী আর কলঙ্ক দিচ্ছে আমাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা কৃষি অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঊর্ধ্বতন আরেক কৃষি কর্মকর্তার সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, সামাজিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ প্রমাণিত হলে তা বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন পূর্বক শাস্তির বিধান আইনে রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব কোনোরূপ আইনের ব্যতয় ঘটাতে সক্ষম নয় বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement