২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মেডিক্যালে চান্স পাওয়া মিলনের পাশে জেলা জামায়াত

মেডিক্যালে চান্স পাওয়া মিলনের পাশে জেলা জামায়াত - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারুয়া গ্রামের মেডিক্যাল কলেজে চান্স পাওয়া মেধাবী ছাত্র মিলন রনিকে আর্থিক সহায়তায় নগদ চেক তুলে দেয় জেলা জামায়াত।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরার অন্যতম সদস্য, মজলুম জননেতা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম এ সহায়তা প্রদান করেন।

মিলনের মা মেরি আক্তার। মেরি আক্তারের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মোটর পরিবহণ শ্রমিক মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী।

তার মা মেরি সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে বিয়ে হয়। এর কয়েক বছর পর ২০০৮ সালে মারা যান স্বামী। এরপরই জীবনযুদ্ধ শুরু। স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে আবাদ এবং স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি করে দুই সন্তানকে লালন-পালন করে শেখান লেখাপড়া। ১১ ফেব্রুয়ারি বড় ছেলে মিলন রনি খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ আনন্দে সব কষ্ট যেন ভুলে গেছেন মা মেরি আক্তার।

সমাজের নানান জনের নানা প্রশ্ন, কটুকথা শুনে প্রায় ১৬ বছর পাড়ি দিতে হয়েছে মেরি আক্তারকে। স্বামীর মৃত্যুর সময় বড় ছেলের বয়স তিন বছর আর ছোট ছেলের বয়স তখন মাত্র নয় মাস ছিল। দুই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে আর দ্বিতীয়বার বিয়েতে বসেননি তিনি। তবে এখন শ্বশুরবাড়িসহ পুরো উপজেলায় সফল মা হিসেবে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মিলন রনিকে বালিয়াডাঙ্গী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করিয়েছেন তিনি। এরপর ঢাকাতেই ছেলেকে কোচিং করিয়েছেন মেডিক্যাল ভর্তির জন্য। আর ছোট ছেলে মাধ্যমিক পাসের পর ঠাকুরগাঁও শহরের ইকো পাঠশালায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছে।

স্বামীর রেখে যাওয়া দেড় বিঘা জমিতে আবাদ এবং স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ করেন তিনি। এভাবে দুই সন্তানকে লালন-পালন করেছেন তিনি।

খুলনা মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মিলন রনি বলেন, ‘তিন বছর বয়স পর্যন্ত বাবার কোলে ওঠার সৌভাগ্য হলেও কোনো স্মৃতি মনে নেই। বড় হওয়ার পর মা সব চাহিদা পূরণ করেছেন। বুঝতেই দেয়নি যে আমরা দু’জন পিতৃহারা সন্তান।’

মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন মিলন। এরপর ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়া অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ও কার্যক্রম তাকে আরোঅনুপ্রাণিত করে। চিকিৎসক হয়ে মায়ের দেখাশোনা এবং এলাকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান মিলন।

মিলনের মা মেরি আক্তার বলেন, ‘দুই ছেলে কী হবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কোনো মতামত নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর যুদ্ধ করে দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি। বড় ছেলের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার খবর শোনার পর সব কষ্ট ভুলে গেছি। ছেলে দুটো মানুষের মতো মানুষ হবে। এটাই আশা-প্রত্যাশা।’

মিলনের নানি মরজিনা খাতুন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মিলন আমাদের বাড়িতে মানুষ হয়েছে। তার মা কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে আমাদের বাড়ি থেকেই তার খালা প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করত। তার মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগে আমরা আনন্দিত। স্বামীহারা মেয়েটার কষ্ট সফল হয়েছে।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার বলেন, সমাজের চারপাশে থাকা মানুষগুলো মেরিকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। যেকোনো সহযোগিতায় মিলন রনির পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির নগদ চেক মিলবের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বলেন, ‘মেরি আক্তার একজন সফল জননী। তার ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে আরো কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা তাদের পাশে থাকব।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা জামায়াতে আমির প্রভাষক মো:রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সেক্রেটারি মো: শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপজেলা সভাপতি মো: খলিলুর রহমানসহ নিকটস্থ প্রতিবেশীগণ।


আরো সংবাদ



premium cement