৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিষ্ঠুরতার সাক্ষী


 

ঠাকুরগাঁওয়ের দুরামারি-রুহিয়া সড়কের কয়েক শ’ কাঁঠালগাছ কেটে নেয়া হয়েছে। শুরুতে ডালপালা কেটে নিয়ে যায় চোরেরা। এরপর সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে গোড়া থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডালপালা না থাকায় ওই সড়কের গাছগুলো দেখে চেনার উপায় নেই যে এগুলো কাঁঠাল গাছ।

সড়কের আকঁচা, পুরাতন ঠাকুরগাঁও, নিমবাড়ি, বকশের হাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেসব জায়গার ৭৪টি গাছ ডালপালা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। ৫৬টি গাছ গোড়া থেকে করাত দিয়ে কেটে নেয়া হয়েছে। কেটে নেয়া গাছের গোড়া, মাটি ও গাছের ডালপালা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দুরামারি-রুহিয়া সড়কে তারও বাড়ি। সড়কের দুই পাশের যে কয়টি কাঁঠালগাছ টিকে আছে, তা মানুষের নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। সেসব গাছের দিকে তাকালেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিছু দূর এগোলেই নজরে পড়ে মাঝ বরাবর কেটে নেয়া সারি সারি মরা গাছ।

লক্ষ্মীরহাট এলাকার সনাতন বিশ্বাস বলেন, শুরুতে ডালপালা কেটে নেয়া হয়। কিছুদিন পর বাকি অংশটুকুও হারিয়ে যায়।

নিমবাড়ি এলাকার বাসিন্দা কার্তিক রায় জানান, প্রতি রাতেই চোরেরা সড়কের পাশের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গত তিন-চার মাসে সড়ক থেকে দুই শতাধিক কাঁঠালগাছ চুরি হয়েছে। গাছ কাটার কথা প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হয়নি।

সড়কের পাশে দুই নারী মাটি খুঁড়ে কেটে নেয়া গাছের গোড়া তুলছিলেন। তা দেখে আনসারুল হক নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, চোরেরা গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন মাটি খুঁড়েও গাছের গোড়ার অংশ শিকড়সহ তুলে নিয়ে যায়। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই চুরি হওয়া গাছের আর কোনো চিহ্ন থাকছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি সংস্থা ১৬ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ হাজার কাঁঠালগাছের চারা রোপন করে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে (ইউপি) গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ জন্য ইউপি কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন লোকও নিয়োগ করা হয়। গাছের শুকনো ডালপালা ও ফল বিক্রি করে তাদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হতো। ২০০৩ সালে জেলা পরিষদ ইউনিয়ন পরিষদের থেকে গাছগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একের পর এক গাছ চুরি হতে থাকে।

পুরাতন ঠাকুরগাঁও বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, একসময় সড়কের পাশে সারি সারি গাছে যখন কাঁঠাল ধরত তখন কী যে ভালো লাগত, তা বোঝাতে পারব না। সেসব গাছ মানুষ কেটে নিয়ে গেলো। এগুলো রক্ষায় কোনো উদ্যোগ না নেয়ার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।

আকচা ইউপির চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ বলেন, গাছগুলো ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকাকালে এলাকার লোকজন ডালপালা কাটার সাহস পেত না। সে সময় কাঁঠাল বিক্রি করে দুই থেকে তিন লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান সহকারী বিমল চন্দ্র শর্মা বলেন, এখন দুরামারি-রুহিয়া সড়কে কয়টি কাঁঠালগাছ আছে, তার কোনো হিসাব নেই। কয়েক বছর ধরে সেগুলোর অবস্থা যাচাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

ওই দফতরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রামকৃষ্ণ বর্মণ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই সড়কের দুই পাশের কাঁঠালগাছগুলো জেলা পরিষদের সম্পত্তি। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement