২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৩০ ব্যবসায়ী ও ২০০ কমচারী এখন পথের ভিখারি :

রংপুরে ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত জামান মার্কেটের গোডাউন, কারখানা ও দোকান

রংপুরে ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত জামান মার্কেটের গোডাউন, কারখানা ও দোকান - ছবি : নয়া দিগন্ত

ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রংপুর মহানগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পোশাক কেনাকাটার কেন্দ্রস্থল জামান মার্কেটের গোডাউন, কারখানাসহ অন্তত ৩০টি দোকান। এতে পথে বসেছে আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী ও কর্মচারী। তবে ওইসব ব্যবসায়ী প্রাথমিকভাবে দাবি করছেন এ ঘটনায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সরকার ও বিত্তবানদের তাদের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তারা।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রংপুর মহানগরীর জামান মার্কেটের পেছনের দিকে জোবায়ের গার্মেন্টস ও ভাই ভাই গার্মেন্টসে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে সেখানে ভোরেই উপস্থিত হয় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। আগুনের ভয়াবহতা দেখে রংপুরের আটটি এবং হারাগাছের দুটি ইউনিট এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সাভিস। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পোশাক কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ৩০টি দোকান।

পুড়ে যাওয়া জোবায়ের গার্মেন্টসের মালিক আব্দুল আউয়াল জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০ দিন আগেও ১৯ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক এনে রেখেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও প্রায় ৭০ লাখ টাকারও বেশি মালামাল ছিল তার দোকানে। ভাই রনিসহ ব্যবসা করতেন তিনি। এখন আর কিছুই নেই দোকানে। সব আগুনে পুড়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার কাছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বকেয়া পাবেন। ব্যাংক লোন আছে ১৫ লাখ টাকা। এখন কী করবেন তারা। ঘটনার ভয়াবহতায় অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার ভাই রনিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে রনির বাবা লালমিয়া জানিয়েছেন, বাড়ির জমিজমা বিক্রি করে ব্যবসায় লাগিয়েছিলেন। সব শেষ। পথের ভিখারি হলেন তারা।

হাসান গার্মেন্টসের মালিক ওয়াদুদ বেপারী জানান, ৪০টি অটো সেলাই মেশিন দিয়ে এখানে ছিল তার কারখানা। ৫০ জন শ্রমিক কাজ করতেন সেখানে। এ ছাড়াও পোশাক তৈরির জন্য ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল তার দোকানে। কিন্তু এখন কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাঁচ থেকে ছয়টি দোকান পরপর কেন দোকান ও কারখানা পুড়লো। সেটি তার বোধগম্য নয়।

তার মা রেজিয়া বেগম জানালেন, ‘আমার ছেলের আর কিছুই থাকলো না।’

ভাই ভাই গার্মেন্টসের মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমার তিনটি দোকান ও দুটি গোডাউন পুড়ে গেছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার তৈরি পোশাক ছিল। যা ঈদ উপলক্ষে আনা হয়েছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এখন পথের ভিখারি।’

তাদের মতো অন্তত ৩০ টি দোকানের সব কিছুই পুড়ে গেছে। সাধারনত মাকেটটিতে কম এবং ন্যায্যমুল্যে পোশাক বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এসব দোকান ও গোডাউনে বিপুল পরিমান মালামাল মজুদ করেছিল দোকানিরা।

মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বেপারী জানান, প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গোডাউন, কারখানাসহ দোকান পুড়ে গেছে। সবাই ঈদ উপলক্ষে ঋণ করে মালামাল ক্রয় করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি আমরা। আমাদের জরুরিভিত্তিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ ভোলা জানান, ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে আগুনে। এ ঘটনায় পরিকল্পিত কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আমরাও তদন্ত করছি। কেন কয়েকটি দোকান পর পর আগুন লাগলো।

রংপুর জেলা মোটরসাইকেল দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসেন আশরাফী জানান, এখানে মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কেনা-কাটা করেন। কম ও ন্যায্যমূল্যে এখানে বেচা-কেনা হয়। এখন যেসব গোডাউন, কারখানা ও দোকান পুড়ে গেল তাতে তারা মহাসঙ্কটে পড়লেন। যাদের ঋণ আছে তারা কীভাবে ঋণ শোধ করবেন। সেটা বড় ব্যাপার। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর বেচা-বিক্রি হয়নি। এবার তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মালামাল মজুদ করেছিলেন। কিন্তু এখন কিছুই নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সরকারকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি করেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিস রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম জানান, ‘ভোট ৫টা দিকে খবর পেয়ে আমরা প্রথমে দুটি টিম আসি। পরে আগুনের ভয়াবহতা দেখে রংপুরের ছয়টি এবং হারাগাছের দুটি টিমকে নিয়ে আমরা অপারেশন চালাই। মোটামুটি দুই ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৬টি দোকান পুরোপুরি এবং আরো ১০টি দোকান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিমাণ এখনো নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।’


আরো সংবাদ



premium cement