০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রযুক্তিনির্ভরতা ডেকে আনছে বিপদ!

-

বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে দিন দিন সহজলভ্য হয়ে উঠছে নানা প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ এবং তার সঠিক শিশু-কিশোরদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে যেমন শিক্ষার বিরাট মাধ্যম হতে পারে, অন্য দিকে সৃষ্টি করতে পারে মারাত্মক আসক্তি। গত এক সপ্তাহে দুটি ঘটনায় নিহত স্বপ্নীল ও অরিত্রী মোবাইল ডিভাইসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান দিলো। স্বপ্নীল মোবাইল বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে আর মোবাইল ব্যবহার করা নিয়ে জটিলতার সূত্র
ধরে জীবন দিতে হলো অরিত্রীকে। লিখেছেন নাজমুল হোসেন

নিত্যনতুন প্রযুক্তি বা গেজেটের সাথে পরিচিত হওয়া মোটেও দোষের কিছু নয়। তবে স্মার্টফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের মতো স্মার্ট ডিভাইসগুলো যখন শিশুদের আনন্দের একমাত্র উপকরণ হয়ে যায়, তখন সেটা আসক্তির পর্যায়ে পড়ে। যেকোনো ধরনের আসক্তিই শিশুদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
মা-বাবার একমাত্র ছেলে বলে নাম রেখেছিল স্বপ্নীল। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ঢাকা আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল স্বপ্নীল। তাকে ঘিরে তার মা-বাবার সব স্বপ্ন। একটি দুর্ঘটনায় চুরমার হয়ে গেল সব স্বপ্ন। স্বপ্নীলের পুরো নাম সাদমান সাদিকিন মজুমদার। গত শনিবার ফেনী শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় নানার বাড়িতে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে অবশেষে এই দুনিয়ার মায়া ছেড়েছে স্বপ্নীল।
গত সোমবার শান্তিনগরের বাসায় আত্মহত্যা করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী। অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়নায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছে। অরিত্রীদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত এক সপ্তাহে এই দুটি ঘটনায় নিহত স্বপ্নীল ও অরিত্রী মোবাইল ডিভাইসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান দিলো। মোবাইল বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহত হয় স্বপ্নীল আর মোবাইল ব্যবহার করা নিয়ে জটিলতার সূত্র ধরে জীবন দিতে হলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অরিত্রীকে।
শিশুরা সহজেই বিভিন্ন ডিভাইস পরিচালনায় পারঙ্গম হয়ে উঠছে। শিশুদের একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে দেয়ার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আজকাল বাবা-মায়েদের মধ্যে বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু এ সাময়িক স্বস্তি তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় বয়ে আনছে।
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক আনন্দ পাওয়ার চেয়ে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। বাবা-মায়ের উচিত, সন্তানকে মোবাইল ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দেয়া এবং গঠনমূলক শখকে উৎসাহিত করাÑ এসবই তাদের এ আসক্তি থেকে দূরে রাখার ভালো উপায়। স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট নিয়ে বেশি সময় কাটানো শিশুরা অন্যদের তুলনায় কম ঘুমায়। দিনে এক ঘণ্টা মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেটের টাচস্ক্রিন নিয়ে নাড়াচাড়ার কারণে প্রতিদিনের অন্তত ১৫ মিনিটের ঘুম কমে যায় শিশুদের।
শুধু শিশুরা নয়, তাদের অভিভাবকেরাও দিনের বেশির ভাগ সময়ই স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে থাকেন। ডিজিটাল টেকনোলজিকে আপন করে নিতে গিয়ে হাজারো সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনের অনেকটা সময় স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে কাটান, তাদের ক্ষেত্রে এডিএইচডি বা ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারে’র লক্ষণ অনেক বেশি করে দেখা দেয়। এককথায় স্মার্টফোনের ব্যবহারে ক্রমেই ‘হাইপার-অ্যাকটিভ’ হচ্ছে মানুষ!

 


আরো সংবাদ



premium cement